Advertisement
E-Paper

বেড়ার ঘরেই বেড়ে উঠেছে ওদের স্বপ্ন

তন্ময়ের বাবা, পেশায় ট্রেনের হকার কালাচাঁদ নন্দী। ভোর হওয়ার আগেই প্রতিদিন পানের ঝুড়ি কাঁধে কালাচাঁদবাবু বেরিয়ে পড়েন ট্রেনের পথে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৯ ০০:৪৩
 কৃতী: বাবা ও মায়ের সঙ্গে দেবযানী। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

কৃতী: বাবা ও মায়ের সঙ্গে দেবযানী। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

দরমার বেড়া আর টিনের ছাউনির একচিলতে ঘর। সেখান থেকেই এ বছর মাধ্যমিকে বসে সব বিষয়ে লেটার পেয়ে নজির গড়ল দেগঙ্গার তন্ময় নন্দী এবং দত্তপুকুরের দেবযানী দত্ত।

দেগঙ্গার আমিনপুরের বাসিন্দা তন্ময়ের ইচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। আবার দত্তপুকুরের দেবীপুরের মেয়ে দেবযানী, ছাত্রছাত্রী পড়িয়ে নিজের পড়াশোনা আর সংসারের খরচ চালিয়েছে। তাই ভবিষ্যতেও শিক্ষিকা হতে চায়। দু’বেলা দুই পরিবারে খাবারও ঠিক মতো জোটে না তাদের। তাই এমন ফলাফলে স্বভাবতই খুশি দুই পরিবার। যদিও পরিজনেদের এখন বড় চিন্তা, কী ভাবে ওদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হবে!

তন্ময়ের বাবা, পেশায় ট্রেনের হকার কালাচাঁদ নন্দী। ভোর হওয়ার আগেই প্রতিদিন পানের ঝুড়ি কাঁধে কালাচাঁদবাবু বেরিয়ে পড়েন ট্রেনের পথে। বারাসত-হাসনাবাদ শাখার ট্রেনে ট্রেনে পান বিক্রি করেন তিনি। রাতে ফেরেন। সারাদিনে মেরেকেটে রোজগার দু’শো টাকা। কালাচাঁদবাবুর বড় ছেলে মাধ্যমিক পাশের পরে পড়া ছেড়ে হোটেলে কাজ করছেন। কার্তিকপুরের দেগঙ্গা আদর্শ বিদ্যাপীঠের ছাত্র ছোট ছেলে তন্ময় পেয়েছে ৭০০-র মধ্যে ৬১৪। তার প্রাপ্ত নম্বর বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৮১, অঙ্কে ৮৭, ভৌত বিজ্ঞানে ৮৪, জীবন বিজ্ঞানে ৯৩, ইতিহাসে ৮৬ এবং ভুগোলে ৯৩।

এ দিন তন্ময়ের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, দরমার বেড়ার একটিই ঘর। মাটির মেঝে আর টিনের ছাউনির সেই ঘরেই তন্ময়ের ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছের জন্ম। মা তুলসী নন্দী বলেন, ‘‘একটাই তো ঘর। আমরা যখন শুতে যেতাম, তখন ও রাত জেগে পড়ত। ঘুমের অসুবিধে হলেও ওর আগ্রহ দেখে মানা করতাম না। এ বার ওকে বিজ্ঞান নিয়ে কী করে পড়াব, ভেবে পাচ্ছি না।’’ ফল প্রকাশের পর থেকেই একচিলতে ঘরে শুভেচ্ছা জানানোর ভিড় লেগে ছিল। এক প্রতিবেশী সঞ্চিতা সেন বলেন, ‘‘পড়াশোনার পাশাপাশি খুব ভাল আঁকতে পারে তন্ময়।’’ তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবদাস সেন বলেন, ‘‘পড়াশোনা চালিয়ে যেতে ওকে আমরা সব রকম সাহায্য করব।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মায়ের সঙ্গে তন্ময়। মঙ্গলবার ফল বেরোনোর পরে। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

অন্য দিকে, দরমার বেড়া, টিনের ছাউনির ঘরে দাদু, বাবা-মা ও ভাইকে নিয়ে পাঁচ জনের পরিবার দেবযানীর। ঘরে ঢোকার আগেই কানে আসে একটানা সেলাই মেশিনের ঘড়ঘড় শব্দ। দেবযানীর বাবা-মা রাতদিন সেলাই করে সংসার চালান। সারাদিন মেশিন চালিয়ে ইতিমধ্যেই চোখের জ্যোতি হারিয়েছেন দেবযানীর বাবা প্রতাপ দত্ত। মা রূপালী দত্ত জানান, দিনে পাঁচ-ছ’টা ব্লাউজ তৈরি করে পাওয়া যায় ৫০/৬০ টাকা। মাসে মোট আসে দেড় থেকে দু’হাজার টাকা। এমন পরিস্থিতিতে পড়াশোনা চালিয়ে দত্তপুকুরের নিবাদুই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে ৬৩১ পেয়েছে দেবযানী। তার প্রাপ্ত নম্বর বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৮৫, অঙ্কে ৯৯, ভৌত বিজ্ঞানে ৮৭, জীবন বিজ্ঞানে ৯০, ইতিহাসে ৮৩ এবং ভুগোলে ৯৭।

রূপালীদেবী জানান, স্থানীয় এক শিক্ষক কম টাকায় মেয়েকে সব বিষয় পড়াতেন। তিনি বলে চলেন, ‘‘মেয়ে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চাইছে। কিন্তু সে ক্ষমতা আমাদের নেই। কী করব বুঝতে পারছি না।’’ দেবযানী বলে, ‘‘আমি চাই না আমাকে পড়াতে গিয়ে বাবা আরও পরিশ্রম করুক। তাই বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে না পারলে হিসাবশাস্ত্র নিয়ে পড়ে শিক্ষিকা হতে চাই।’’ পড়াশোনা আর সংসারের খরচ চালাতে বেশ কয়েক জন ছাত্রছাত্রীকে পড়ায় দেবযানী। দৃঢ়তার সঙ্গে এ দিন মেয়ে বলে ওঠে, ‘‘পড়াশোনা চালিয়ে যেতে আরও বেশি বেশি ছাত্রছাত্রী পড়াব। নিজের পড়াশোনায় আরও জোর দেব। তবে পড়াশোনা কিছুতেই ছাড়ব না।’’

Madhyamik Result 2019 Madhyamik মাধ্যমিক Madhyamik Result Tanmay Nandy Debjani Dutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy