Advertisement
E-Paper

হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরি, রাজস্ব ক্ষতি

বিপদের আশঙ্কা রয়েছে জেনেও মানুষ ঝুঁকি নিয়েই হুকিং করেন। শুধু বাড়িতেই নয়, হুকিং চলছে তেল মিল, ছোট কারখানা, লজ, বার, মুরগির খামার, চা-দোকান, ক্লাব— সর্বত্র। 

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৮ ০২:০২
বিদ্যুৎ চুরির দিক থেকে উপরের দিকে আছে বনগাঁ, বসিরহাট, হাবড়া ডিভিশন। তুলনায় ভাল পরিস্থিতি ব্যারাকপুর ও নৈহাটি ডিভিশনে।

বিদ্যুৎ চুরির দিক থেকে উপরের দিকে আছে বনগাঁ, বসিরহাট, হাবড়া ডিভিশন। তুলনায় ভাল পরিস্থিতি ব্যারাকপুর ও নৈহাটি ডিভিশনে।

বাড়ির সামনে দিয়ে যে বিদ্যুতের তার চলে গিয়েছে, দেখা গেল, সেই তারের সঙ্গে অসংখ্য তারের যোগ। তারগুলি সব আশেপাশের বাড়ির মধ্যে চলে গিয়েছে। হুকিংয়ের তারে ছেয়ে আছে আকাশ।

বনগাঁর ট্যাংরা কলোনি এলাকার এই দৃশ্য কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। বনগাঁ, বসিরহাট, বারাসত, ব্যারাকপুর মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরি রমরমিয়ে চলছে সর্বত্র। এমনও দেখা গিয়েছে, বাড়িতে বা দোকানে বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ থাকা সত্ত্বেও চলছে হুকিং। বিপদের আশঙ্কা রয়েছে জেনেও মানুষ ঝুঁকি নিয়েই হুকিং করেন। শুধু বাড়িতেই নয়, হুকিং চলছে তেল মিল, ছোট কারখানা, লজ, বার, মুরগির খামার, চা-দোকান, ক্লাব— সর্বত্র।

এর ফলে এলাকায় লো ভোল্টেজের সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ। আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে সরকারের।

রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরির ফলে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ২০১৭ সালের জুন থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত রাজস্ব ক্ষতি প্রায় ৫৯৯ কোটি টাকা। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা রিজিয়ন বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ৬টি ডিভিশন আছে। বনগাঁ, হাবড়া, বসিরহাট, ব্যারাকপুর, নৈহাটি ও বারাসত। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, সমস্ত ডিভিশনেই বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা ঘটছে। সব থেকে বেশি রাজস্বের ক্ষতি হয়েছে বনগাঁ ডিভিশন এলাকায়। এখানে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ জুন পর্যন্ত রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ চুরির দিক থেকে উপরের দিকে আছে বনগাঁ, বসিরহাট, হাবড়া ডিভিশন। তুলনায় ভাল পরিস্থিতি ব্যারাকপুর ও নৈহাটি ডিভিশনে। বসিরহাট ডিভিশন এলাকায় রাজস্ব ক্ষতি প্রায় ৩৭ শতাংশ। ব্যারাকপুরে রাজস্ব ক্ষতি প্রায় ১৬ শতাংশ।

কিছু দিন আগে অশোকনগ‌রের সেনডাঙা এলাকায় একটি মুরগি খামারে হুকিংয়ের তারে জড়িয়ে মৃত্যু হয়ে দুই কিশোর-কিশোরীর। গাইঘাটা থানা এলাকায় কিছু দিন আগে একটি মুরগির খামারের পাশ থেকে এক কিশোরের দেহ উদ্ধার হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, হুকিং করে টানা বিদ্যুতের তার দিয়ে ঘেরা ছিল খামারটি।

বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ক্ষতির বহর কমাতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি এমনই?

বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে হুকিং নিয়ে মগরাহাটে জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ বেধেছিল। কয়েকজন মারাও গিয়েছিলেন। সেই ঘটনার আগে স্থানীয় থানাগুলি বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের হুকিংয়ের অভিযানে সরসারি সাহায্য করতেন। এখন জেলা পুলিশ সুপারের কাছে পুলিশের জন্য আবেদন করতে হয়। পুলিশ সেখাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তারপরে সহযোগিতা করে। এ সবের মধ্যে পড়ে অভিযানের গোপনীয়তা নষ্ট হয়।

পুলিশ অবশ্য অভিযোগ মানতে চায়নি। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, বণ্টন সংস্থার চাহিদা মতো প্রয়োজনীয় পুলিশ কর্মী দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। তবে মগরাহাট-কাণ্ডের পরে পরিস্থিতি যে কিছুটা পাল্টেছে, পুলিশ কর্তারাও তা মানছেন।বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশ ছাড়া ঝুঁকি নিয়েই বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ করতে নিয়মিত অভিযান চলে আমাদের। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়। মোটা টাকা জরিমানাও করা হয়।’’ বনগাঁ ডিভিশন এলাকায় মাসে গড়ে ৪০-৪৫টি অভিযান চালানো হয় বলে সংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে।

সম্প্রতি বনগাঁ শহরের একটি লজে বণ্টন সংস্থার কর্মীরা পুলিশ ছাড়াই অভিযান চালান। হুকিং ধরে কয়েক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। বাগদার কুরুলিয়া এলাকার একটি তেলের মিলেও বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছিল। সেখানে অভিযান চালিয়ে বণ্টন সংস্থার কর্তারা মিল মালিককে কয়েক লক্ষ টাকা জরিমানা করে সেই অর্থ সংগ্রহও করেছেন।

তবে, কাজটি যে যথেষ্ট ঝুঁকির, তা জানেন সংস্থার কর্তারা। সব ক্ষেত্রেই পুলিশি নিরাপত্তা প্রয়োজন বলে তাঁদের মত।

Hooking WBSEDCL
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy