অশান্ত: কয়েক বছর আগে বাসন্তীর ভরতগড়ে রাজনৈতিক খুনের পর এলাকায় পুলিশ। ফাইল চিত্র
বাসন্তীতে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল বহুচর্চিত। বিশেষ করে, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে কোন্দল বার বার প্রকাশ্যে এসেছে। মূল ও যুব সংগঠনের মধ্যেই মূলত বিবাদ। তার জেরে গত কয়েক বছরে অন্তত ১০ জন খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ।২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের গোলমাল চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়। গত কয়েক মাস সে ভাবে অশান্তি না হলেও রাজনৈতিক মহল মনে করছে, পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হলেই গোষ্ঠী সংঘর্ষে ফের উত্তপ্ত হতে পারে বাসন্তী। বাসন্তী ব্লকে সে ভাবে বিরোধী দলের কর্মকাণ্ড বা সংগঠন পাকাপোক্ত নয়। ফলে তৃণমূলই এখানে প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের।
১৩টি পঞ্চায়েত আছে বাসন্তী ব্লকে। গত পঞ্চায়েত ভোটে উত্তর মোকামবেরিয়া বাদ দিয়ে বাকি সব গ্রাম পঞ্চায়েতই তৃণমূলের দখলে ছিল। পরে উত্তর মোকামবেরিয়া পঞ্চায়েত বিজেপির হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। ৩৯টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনের মধ্যে ৩৫টি তৃণমূল জিতেছিল, ৩টি ছিল বিজেপির দখলে এবং ১টি ছিল নির্দলের। যদিও পরে সকলেই তৃণমূলে যোগ দেন। অন্য দিকে, ৩টি জেলা পরিষদের আসন তৃণমূলের দখলেই ছিল।পঞ্চায়েত নির্বাচন এখনও ঘোষণা না হলেও সমস্ত রাজনৈতিক দলই নিজেদের কর্মসূচি কমবেশি শুরু করে দিয়েছে। তৃণমূলের তরফে সব থেকে বেশি মিটিং, মিছিল, কর্মী বৈঠক সংগঠিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু জায়গায় দেওয়াল রং করে দলের প্রতীক আঁকা হয়েছে। বিজেপি বা বাকি বিরোধীদের সে ভাবে এখনও মাঠে নামতে দেখা যাচ্ছে না। দলীয় কর্মীদের নিয়ে বুথস্তরে ছোট ছোট ঘরোয়া বৈঠক করছে বিজেপি। এখনও সে ভাবে বড় মিটিং, মিছিল দেখা যায়নি।
একই ছবি বামেদের। বাসন্তীতে আরএসপি ও সিপিএম যৌথ ভাবে মিটিং, মিছিল করছে। তবে সে ভাবে বড় কর্মসূচি চোখে পড়েনি। আপাতত পঞ্চায়েতভিত্তিক, বুথভিত্তিক কর্মী বৈঠকে জোর দিচ্ছে আরএসপি-সিপিএম। রাস্তার মোড়ে, বাজার এলাকায় ছোট ছোট মিটিং চোখে পড়ছে বামেদের।
আইএসএফের কিছু সংগঠন দেখা যাচ্ছে এলাকায়। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বেশ কিছু মিটিং-মিছিলের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন দলের নেতারা। আপাতত বুথভিত্তিক ছোট ছোট কর্মী বৈঠকে জোর দেওয়া হচ্ছে।
উত্তর মোকামবেড়িয়া, ফুলমালঞ্চ, নফরগঞ্জ, মসজিদবাটি, চড়াবিদ্যার মতো পঞ্চায়েতগুলিতে বিরোধীরা কিছু কিছু আসনে প্রার্থী দিলেও সব পঞ্চায়েতের সব আসনে প্রার্থী দিতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় আছে নানা মহলে। ঝড়খালি গ্রাম পঞ্চায়েত বাদ দিলে বাকি প্রায় সব পঞ্চায়েতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে তৃণমূলের লোকজনের নির্দল হিসাবে দাঁড়ানোর আশঙ্কা আছে বলে দলের কিছু নেতা মনে করছেন।
যদিও এই সমস্যা মিটে যাবে বলে দাবি করেছেন বাসন্তীর বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল। তিনি বলেন, “শনিবার জেলা সভাপতির ডাকে দলের সাংগঠনিক বৈঠক আছে। সেখান থেকে নিশ্চয়ই দল এ বিষয়ে বার্তা দেবে। এলাকায় সাংগঠনিক বৈঠক, মিছিল সবই চলছে। নিরপেক্ষ ভাবে প্রার্থী বাছাই করতে নিশ্চয়ই দল স্ক্রিনিং কমিটি গঠন করবে। সেই মোতাবেক প্রার্থী ঘোষণা হবে। আপাতত দলের মধ্যে কোনও সমস্যা নেই।”
বাসন্তী ব্লক তৃণমূলের আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান গাজি বলেন, “আমরা সমস্ত পঞ্চায়েতেই সংগঠন বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছি। দলের যেখানে যেখানে সংগঠন দুর্বল, সেগুলিকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। দলের মধ্যে কোনও কোন্দল নেই। তবে কিছু মানুষ দলে আছেন, যাঁরা বিরোধী দলের দালালি করেন। তাঁরাই ভোটের সময়ে বেইমানি করেন। আর সুযোগ এলেই দলে একটা জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা করেন। গত বিধানসভায় সেই সব মানুষদের চিহ্নিত করা হয়েছে। দল বাকি সিদ্ধান্ত নেবে।”
আব্দুল মান্নান গাজিদের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত বাসন্তী ব্লক যুব তৃণমূল নেতা আমানুল্লা লস্কর বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের সংগঠনকে বাড়াতে আমাদের মিটিং-মিছিল, কর্মী বৈঠক চলছে। সাধারণত কোন্দল সে ভাবে কিছু নেই। আমরা চাই, সকলে মিলে এক সঙ্গে সংগঠন করি। কিন্তু কিছু মানুষ তা চান না। আসলে এঁরা দলের কথা, সংগঠনের কথা না ভেবে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করছেন।”
বাসন্তীর বিজেপি নেতা তথা জয়নগর সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক বিকাশ সর্দার ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে জানালেন, এখনও সে ভাবে পথেঘাটে নেমে মিটিং-মিছিল হচ্ছে না। তবে বুথস্তর, মণ্ডলস্তরে কর্মী বৈঠক চলছে। দলের শক্তিবৃদ্ধিতে যা যা করণীয় সবই হচ্ছে বলে তাঁর দাবি। বিকাশেরকথায়, ‘‘আমাদের চেষ্টা থাকবে, তৃণমূলের সন্ত্রাসকে উপেক্ষা করে সব আসনে প্রার্থী দেওয়া। নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট হলে তৃণমূল অনেক জায়গাতেই গোহারা হারে হারবে।”
বাসন্তী ব্লকের আরএসপি সম্পাদক আকবর জমাদারের আবার দাবি, অনেকেই ভুল বুঝতে পেরে তৃণমূলের থেকে মুখ ঘুরিয়েছেন। অনেকে দলে ফিরছেন। মিটিং-মিছিল চলছে। তাঁর কথায়, ‘‘ভোট যদি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়, তা হলে ভোটের ফলাফল অন্য রকম হবে। আমরা সব পঞ্চায়েতেই প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করব।”
আইএসএফের বাসন্তী ব্লক সম্পাদক বাবুলাল মোল্লা বলেন, “আমরা সবে নতুন, সংগঠন সদ্য শুরু করেছি। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন আমাদের ক্রমাগত হয়রান করছে। মিটিং-মিছিলে বাধা দিচ্ছে। তবে এ ভাবে আমাদের আটকে রাখা যাবে না। সব আসনে না পারলেও বাসন্তীতে সমস্ত পঞ্চায়েতেই প্রার্থী দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy