Advertisement
E-Paper

প্রেমের জালে ঠিকানা যৌনপল্লি

দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়েই কিছু পাচারকারী মেয়েদের ভিন রাজ্যে কাজ দেওয়ার নাম করে পাচার করে দেয়। অনেকে আবার বিয়ে করে নিয়ে এসে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দিচ্ছে। প্রেমের টোপ দিয়েও চলছে পাচার। পরিস্থিতির খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ দ্বিতীয় কিস্তি।দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়েই কিছু পাচারকারী মেয়েদের ভিন রাজ্যে কাজ দেওয়ার নাম করে পাচার করে দেয়। অনেকে আবার বিয়ে করে নিয়ে এসে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দিচ্ছে। প্রেমের টোপ দিয়েও চলছে পাচার। পরিস্থিতির খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ দ্বিতীয় কিস্তি।

সামসুল হুদা

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৫০
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

ভালবেসে বাড়ির থেকে পালিয়ে এসেছিলেন বছর একুশের এক তরুণী। ভেবেছিলেন প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ে করে সুখে সংসার করবেন। শেষ পর্যন্ত সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের ওই তরুণীর ঠাঁই হয়েছিল মুম্বইয়ের এক যৌনপল্লিতে। কারণ প্রেমিক তাঁকে সামান্য টাকায় বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ।

শুধু ওই তরুণী নয়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং মহকুমার ক্যানিং ১ ও ২, বাসন্তী, গোসাবা ব্লক, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় এখন প্রায়শই ঘটছে এই ঘটনা। আর নারী পাচার এখানকার এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ক্যানিং মহকুমা তথা সুন্দরবনের অধিকাংশ মানুষই দরিদ্র সীমার নীচে বাস করেন। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়েই কিছু লোক মেয়েদের ভিন রাজ্যে কাজ দেওয়ার নাম করে পাচার করে দেয়। অনেকে আবার বিয়ে করে নিয়ে এসে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দিচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও নারী পাচার রুখতে জেলা পুলিশ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নানা সময়ে গ্রামে গ্রামে প্রচার চালাচ্ছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘নারী পাচার রোধের জন্য আমরা বিভিন্ন স্কুলে প্রচার চালাই। এমন ঘটনার খবর পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’ তবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির মতে, এ বিষয়ে সরকারকেও আরও তৎপর হতে হবে। পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলেই পাচার বন্ধ করা সম্ভব হবে।

এক বছরে ওই মহকুমায় প্রায় ১২টি নারী পাচারের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু সব কিছুর পরেও নারী পাচার রোধে আরও সচেতনতার প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকে।

গত বছর বাসন্তীর নফরগঞ্জের এক নাবালিকা বাবা মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিল। তালদি স্টেশনে মেয়েটিকে একা পেয়ে এক মহিলা তার সঙ্গে ভাব জমায়। পরে ওই মহিলা তাকে কিছু খাইয়ে বেহুঁশ করে পুণেতে বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ। এ বছর মার্চ মাসে ক্যানিঙের পুলিশ ও এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে। ওই নাবালিকা এখন জেলার চাইল্ড ওয়েল ফেয়ার কমিটিতে রয়েছে।

জয়নগরের এক তরুণীর বিয়ে হয়েছিল প্রতিবেশি এক যুবকের সঙ্গে। ওই যুবক মুম্বইতে কাজ করত। বিয়ের পর সে স্ত্রীকে নিয়ে মুম্বই চলে যায়। অভিযোগ, এরপর সেখানকার এক যৌনপল্লিতে তাঁকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। বছর পঁচিশের ওই মেয়েটির কোনও খোঁজ না মেলায় তাঁর বাড়ির লোক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপরেই ওই তরুণীকে উদ্ধার করা হয়।

ক্যানিঙের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে শুভশ্রী রপ্তান জানান, ওই মহকুমায় আমরা নিত্য নারী পাচারের ঘটনার খবর পাচ্ছি। পুণে, গোয়া, মুম্বই, দিল্লি, আমেদাবাদ-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ওই সব মেয়েদের পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘উন্নত প্রযুক্তির যুগেও আমাদের নারী পাচার রোধ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। এটি অত্যন্ত দুঃখের ও লজ্জার।’’

কী ভাবে পাচারের খবর মেলে?

শুভশ্রীদেবী জানান, বিভিন্ন রাজ্যে আমাদের লিঙ্ক ম্যান থাকে। যেখান থেকে খবর পাওয়া যায়। এরপরেই পুলিশের সঙ্গে যোগোযোগ করে মেয়েদের উদ্ধার করা হয়। তবে এ বিষয়ে বাড়ির লোকেদের এবং মেয়েদের নিজেদের আরও সচেতন হতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

পাচার হয়ে যাওয়ার পর ওই সব মেয়েরা যখন গ্রামে ফিরে আসে তখন তাদের সঙ্গে কেউ কথা বলতে চান না। এমনকী তাঁরা সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বাড়ির লোকেরাও তাঁদের নিতে নারাজ। খিদের যন্ত্রণা মেটাতে হতাশ মেয়েগুলির মধ্যে অনেকেই পুরনো জায়গায় ফিরে যেতে চায়।

তবে অনেকে আবার নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যান। বাসন্তীর একটি মেয়ে উদ্ধারের পর ঋণ নিয়ে মুদির দোকান তৈরি করেছেন। দুই সন্তান নিয়ে বেশ সুখেই জীবনযাপন করছেন এখন ওই মহিলা। কম হলেও এমন
নজিরও রয়েছে।

women trafficking
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy