Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
ধুর পাচারকারী

মেয়ে পাচার: দর ওঠা-নামা করে পার্টি বুঝে

বাংলাদেশের গরিব পরিবারের মেয়েদের এ দেশে ভাল বেতনে কাজের টোপ দিয়ে নিয়ে আসে কিছু অসাধু চক্র। যারা ওই মেয়েদের একটি যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেয়। পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে তাদের এ দেশে আনাটা ঝুঁকির হয়ে দাঁড়ায় ওই সব বেআইনি কারবারিদের।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সীমান্ত মৈত্র
শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৩২
Share: Save:

চোরাপথে বাংলাদেশিদের বেশির ভাগই কাজের খোঁজে আসেন এ দেশে। কিন্তু কেন তাঁরা পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে আইনি ভাবে আসেন না?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজের খোঁজে ভিনদেশে আসতে চাইলে ভিসা পেতে সমস্যা হয়। তা ছাড়া, পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে এ দেশে কেউ ঢুকলে তাঁর নাম-ঠিকানা এ দেশের অভিবাসন বা শুল্ক দফতরে নথিভুক্ত হয়ে যায়। ফলে ভিসার মেয়াদ শেষ হলে দেশে ফেরার বাধ্যবাধকতা থাকে। চোরাপথে এ সব সমস্যা নেই।

বাংলাদেশের গরিব পরিবারের মেয়েদের এ দেশে ভাল বেতনে কাজের টোপ দিয়ে নিয়ে আসে কিছু অসাধু চক্র। যারা ওই মেয়েদের একটি যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেয়। পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে তাদের এ দেশে আনাটা ঝুঁকির হয়ে দাঁড়ায় ওই সব বেআইনি কারবারিদের।

চিকিৎসার জন্য যাঁরা আসেন, অনেক সময়ে তাঁদের দ্রুত এ দেশে আসার প্রয়োজন পড়ে। সে ক্ষেত্রে পাসপোর্ট-ভিসা করনোর মতো সময় না থাকলে বেআইনি পথকেই বেছে নেন তাঁরা। এ দেশের আত্মীয়-পরিজনের বাড়িতে অনেকে বেড়াতে আসেন। দালাল ধরে আসাটাও তাঁদের অনেকের কাছে দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই সব পরিস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়েই ‘ধুর’ পাচারকারীদের রমরমা বাড়ে।

পাচারকারীরা যে রকম সংগঠিত ভাবে সিন্ডিকেট গড়ে ব্যবসা চালাচ্ছে, তাতে তাদর অনেক লোকবলের দরকার। যেমন ‘লিঙ্কম্যান।’ এদের কাজ হল, সীমান্তের ও পার থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের হিসেব ও দেশের দালালদের কাছ থেকে বুঝে নেওয়া। মাথা গুণে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা দেখে নেওয়া হয়। পুলিশ-বিএসএফের নজর এড়িয়ে এ পারের নিরাপদ আস্তানায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে লিঙ্কম্যানেরা।

‘লাইনম্যান’ও ‘ধুর’ পাচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। যাতায়াতের পথে মোবাইল নিয়ে তারা পুলিশ ও বিএসএফের উপরে নজরদারি চালায়। তেমন বুঝলে ফোনে লিঙ্কম্যানদের খবর পৌঁছে দেয়। দালাল ধরে এ পারে পৌঁছনোর খরচ মোটামুটি দু’আড়াই হাজার টাকা। তবে ‘পার্টি’ বুঝে দর ওঠানামা করে। সীমান্তের যে সব এলাকায় পাহারা বেশি, যেখানে অনুপ্রবেশের খরচ বেশি।

বহু জায়গায় সীমান্তের বাসিন্দাদের সঙ্গে সিন্ডিকেটের সম্পর্ক আছে। বাংলাদেশিদের আত্মীয় সাজিয়ে সাময়িক ভাবে বাড়িতে রাখে তারা। এ জন্য সিন্ডিকেট তাদের খরচ-খরচা দেয়। দু’দেশের মানুষের চেহারা, ভাষা প্রায় এক রকম হওয়ায় একবার দেশে ঢুকে পড়লে বাংলাদেশিদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে পুলিশ-বিএসএফের পক্ষে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। সীমান্তে বিএসএফের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। পুলিশ নিজেদের ‘সোর্স’ বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের বিজিবি ও বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গেও জেলা পুলিশ কর্তারা বৈঠক করেছেন। দু’দেশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান বেড়েছে। গত দু’মাসে প্রায় ৫০০ জন বাংলাদেশি অনুপ্রেবশকারী হাতে ধরা পড়েছে।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় নজরদারি বাড়িয়ে সাফল্য এসেছে। হাবরা থানার পক্ষ থেকে সম্প্রতি যশোর রোডে বাস থামিয়ে কিছু বাংলাদেশিকে ধরা হয়েছে। পুলিশ জানায়, পেট্রাপোল এলাকায় অটো ও ভ্যান চালকদের বলা হয়েছে, অচেনা বা সন্দেহজনক কেউ গাড়িতে উঠলেই যেন দ্রুত পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। চালকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশিদের গাড়িতে তুললে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষ সতর্ক হলে ধুর সিন্ডিকেটের কারবার রোখা অনেক সহজ হবে।’’ (শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Border Women Trafficking
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE