Advertisement
E-Paper

বাড়ির অদূরেই মিলল যুবকের ক্ষতবিক্ষত দেহ

পাঁচ দিন নিখোঁজ থাকার পরে রবিবার সকালে বাড়ির কাছেই উদ্ধার হল এক যুবকের ক্ষত-বিক্ষত দেহ। কান কাটা, মুখ পোড়া অবস্থায় দেহটি পড়েছিল বাড়ির পিছনে বাগানের অদূরেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৫ ০০:৫০
লম্বু বাগানে পড়ে দেহ। ইনসেটে, নিহত নিতাই দাস। ছবি: নির্মল বসু।

লম্বু বাগানে পড়ে দেহ। ইনসেটে, নিহত নিতাই দাস। ছবি: নির্মল বসু।

পাঁচ দিন নিখোঁজ থাকার পরে রবিবার সকালে বাড়ির কাছেই উদ্ধার হল এক যুবকের ক্ষত-বিক্ষত দেহ। কান কাটা, মুখ পোড়া অবস্থায় দেহটি পড়েছিল বাড়ির পিছনে বাগানের অদূরেই।

বাদুড়িয়া চণ্ডীপুর আমতলা এলাকার এই ঘটনায় নিহত যুবকের নাম নিতাই দাস (২২) ওরফে নিতু। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, বিয়েতে মত ছিল না দু’বাড়ির। ছেলেমেয়ের মধ্যে তা নিয়ে বচসাও হয়। যার জেরে ফোন করে ডেকে নিয়ে গিয়ে নিতুকে খুন করেছে প্রেমিকা ও তার বাড়ির লোকজন। মেয়েটির বাড়ির লোকজন অবশ্য গোটা বিষয় নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তাঁদের দাবি, খুনের ঘটনায় তাঁদের কোনও যোগ নেই। পুলিশ পরিবারটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। মেয়েটিকে থানায় এনেও কথা বলছে।

নিতুর দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য বসিরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে কিছুই বলা সম্ভব নয়।’’

তদন্তকারী অফিসারদের অনুমান, মৃতদেহে যে ভাবে পচন ধরেছিল, অন্তত তিন দিন আগে নিতুকে খুন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। যেখান থেকে দেহ মিলেছে, সেখান দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন অনেকে। কখন, কী ভাবে দেহ ফেলে রেখে যাওয়া হল, তা ভাবাচ্ছে পুলিশকে। তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, আক্রোশবশতই ঝুঁকি নিয়ে দেহ বাড়ির অত কাছে ফেলে গিয়েছে আততায়ী। মোটর বাইকটির হদিশ মেলেনি। নিতুর বাড়ির লোকের দাবি, বাড়ি থেকে বেরনোর সময়ে তাঁর কাছে কয়েক হাজার টাকা ছিল। কিন্তু নিতুর পকেট থেকে পাওয়া গিয়েছে কয়েকশো মাত্র টাকা। বাকি টাকাই বা কোথায় গেল, তা-ও ভাবাচ্ছে পুলিশকে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বামী জয়দেববাবুর মৃত্যুর পরে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে থাকতেন নিতাইয়ের মা কবিতাদেবী। নিতাইয়ের দুধের ব্যবসা ছিল। স্থানীয় এক তরুণীর সঙ্গে কিছু দিন আগে তাঁর পরিচয় হয়। বিষয়টি জানাজানি হলেও দু’টি পরিবার বিয়েতে রাজি ছিলেন না। পুলিশ জানতে পেরেছে, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ নিতুর মোবাইলে একটি ফোন আসে। ‘এখুনি আসছি’ বলে মোটর বাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। পর দিন‌ জানা যায়, সঙ্গিনীকে নিয়ে ওই রাতেই নিতু চলে যান বনগাঁয় এক আত্মীয়ার বাড়িতে। পর দিন, বুধবার সকালে আলাদা আলাদা ভাবে দু’জন সেখান থেকে বেরিয়ে যান। রাতে দু’জনের ঝগড়াঝাটি হয়েছিল বলেও জানতে পেরেছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।

মেয়েটি বাড়িতে ফিরে এলেও নিতাই ফেরেননি। তাঁর সঙ্গে আর মোবাইলেও যোগাযোগ করতে পারেননি বাড়ির লোকজন। মাঝে একবার এক বন্ধুর মোবাইলে ফোন করে নিতাই বলেছিলেন, ‘‘আমি আর বাড়ি ফিরতে পারছি না।’’ তাঁকে কেউ আটকে রেখেছে কিনা, তা জানতে চাইলে মোবাইলের ‘সুইচড অফ’ হয়ে যায়।

রবিবার বেলা ১১টা নাগাদ আমতলা এলাকায় একটি রাস্তার পাশে লম্বু গাছে ঘেরা একটি জায়গায় নিতাইয়ের দেহ উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তদন্তকারীরা জানান, ওই যুবকের মুখের ডান দিক অ্যাসিডে পুড়িয়ে দেওয়ার মতো চিহ্ন ছিল। ডান কান খানিকটা কাটা। গলার কাছে কাটা দাগ, চোখ বেরিয়ে আসছে। পাশে পড়ে ছিল সিগারেটের প্যাকেট, মোবাইল, জলের বোতল, কীটনাশক, ঠান্ডা পানীয়, লাইটার। নিতুর পকেট থেকে উদ্ধার হয় মোটর বাইকের চাবি, কয়েকশো টাকা এবং খুচরো পয়সা-সহ মানিব্যাগ, রুমাল। ব্যাগের মধ্যে থেকে মেলে চিঠি, ফোন নম্বর লেখা কাগজের টুকরো।

জনতার ক্ষোভের মুখে প্রথমে দেহ উদ্ধার করা যায়নি। পরে অপরাধীদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে জনতা শান্ত হয়। দেহ উদ্ধার করে পাঠানো হয় ময়না-তদন্তে।

ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে মৃতের ভগ্নীপতি প্রবীর দে বলেন, ‘‘আমাদের অনুমান, অত রাতে মেয়েটিই মোবাইলে ডেকেছিল নিতুকে। ঝগড়া করে ওকে সঙ্গে না নিয়ে একাই বাড়ি ফিরে আসে। পরে মেয়ে আর তার বাড়ির লোকজন পরিকল্পনামাফিক লোক লাগিয়ে খুন করেছে নিতুকে।’’

নিতুর মা কবিতাদেবী বারবারই জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। কোনও মতে বললেন, ‘‘ব্যবসার কাজে ছেলেটা সারা দিন বাইরে বাইরে ঘুরে সবে খেতে বসেছিল। হঠাৎ ফোন পেয়ে উঠে গেল। সেই যে গেল, আর ফিরে এল না।’’

Youth Baduria Chandipur Amtala south bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy