দক্ষিণের মতো এ বার উত্তর ২৪ পরগনাতেও গত বারের তুলনায় কমল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। তার মধ্যে গতবারের মতোই ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। এ জন্য স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশই কন্যাশ্রী-সহ ছাত্রীদের স্কুলছুট হওয়া রুখতে বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধার কথাই বলছেন।
উত্তর ২৪ পরগনা থেকে গতবার মাধ্যমিক দিয়েছিল ১ লক্ষ ২৮১ জন। এ বার সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৬ হাজার ৮৩০। তার মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৫০ হাজার ৩৮৮ জন। ছাত্র ৪৬ হাজার ৪৪২ জন। গত বারেও পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার বেশি ছিল। বাগদার সিন্দ্রানী সাবিত্রী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ওয়াজনবি মণ্ডল বলেন, “মাধ্যমিকে মেয়েদের সংখ্যা বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ কন্যাশ্রী প্রকল্প। ওই প্রকল্প চালু হওয়ার পর মেয়েদের স্কুলছুট হওয়া কমেছে। তা ছাড়া, সরকারি ভাবে বইপত্রও দেওয়া হচ্ছে।” একই কথা শোনা গিয়েছে হাবরার প্রফুল্লনগর বিদ্যামন্দির (উচ্চ মাধ্যমিক) প্রধান শিক্ষক সত্যজিৎ বিশ্বাসের মুখেও। তিনি আরও বলেন, “গ্রামের দিকে অভিভাবকেরা মেয়েদের শিক্ষার বিষয়ে সচেতন হয়েছেন। অতীতে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার প্রবণতা ছিল। কিন্তু এখন বিভিন্ন স্তরে নাবালিকা-বিয়ে নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। ফলে, বিয়ে না দিয়ে অভিভাবকেরা মেয়েদেরও লেখাপড়া শেখাচ্ছেন।” তবে, সার্বিক ভাবে পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা কমা নিয়ে নবম শ্রেণির পরে তাদের স্কুলছুট হওয়াকেই কারণ হিসেবে মনে করছেন অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাঁদের মতে, নবম শ্রেণি থেকে পাশ-ফেল থাকায়, গ্রামাঞ্চলে অনেক ছাত্রই অকৃতকার্য হলে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিচ্ছে। তারা সংসারের প্রয়োজনে নানা কাজে যুক্ত হয়ে পড়ছে। এই একই বক্তব্য শোনা গিয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের মুখেও। রনঘাট অঞ্চল হাইস্কুল থেকে গত বছর মাধ্যমিক দিয়েছিল ২১০ জন। এ বার সংখ্যাটা ১৬৫। প্রধান শিক্ষক অবনীভূষণ কাঞ্জিলাল বলেন, “গতবার নতুন সিলেবাস চালু হওয়ায় আমরা সকলকে পরীক্ষায় বসতে ছাড় দিয়েছিলাম। এ বার দশম শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষায় যারা অকৃতকার্য হয়েছে তাদের পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া হয়নি।” এক দিন পরেই শুরু মাধ্যমিক। তার জন্য পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। পরীক্ষা নির্বিঘ্ন করতে এবং টুকলির দৌরাত্ম্য রুখতে বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। তার মধ্যে জোর দেওয়া হচ্ছে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বন্ধের উপরে। জেলা শিক্ষা দফতরের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য চন্দন ঘোষ বলেন, “সম্প্রতি জেলাশাসকের দফতরে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ার বা ভিলেজ পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।”
গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, জেলার সব পরীক্ষাকেন্দ্রে উপযুক্ত পুলিশি ব্যবস্থা নেই। এমন পরীক্ষাকেন্দ্রও থাকে, যেখানে এক জন পুলিশকর্মীরও দেখা মেলে না। সমস্যায় পড়তে হয় স্কুল কর্তৃপক্ষকে। পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে পুলিশি প্রহরা না থাকায় টুকলিবাজদের দৌরাত্ম্য কয়েক গুণ বেড়ে যায়। স্কুলের দেওয়ালের পাইপ দিয়ে উঠে ঘরের মধ্যে টুকলি ছুঁড়ে দেওয়া থেকে শুরু করে দূর থেকে চোঙা ফুঁকেও উত্তর বলে দেওয়ার নজিরও রয়েছে। মূলত ইংরেজি ও অঙ্ক পরীক্ষার দিন টুকলির দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। আগে কিছু অভিভাবককেও টুকলি সরবরাহে মদত দিতে দেখা গিয়েছে।
বহু অভিভাবকেরই অভিযোগ, কড়া পুলিশি ব্যবস্থা না থাকার কারণেই বাইরে থেকে টুকলিবাজদের দৌরাত্ম্য ক্রমশ বাড়ছে। জেলা পুলিশের একটি সূত্র মেনে নিয়েছে, প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে উপযুক্ত নিরাপত্তা দিতে গেলে যে সংখ্যক পুলিশকর্মী মোতায়েনের প্রয়োজন, তা পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় অবশ্য সে কথা মানেননি। তিনি বলেন, “প্রতি বছরের মতো এ বারও বিভিন্ন পর্যায়ে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হবে পুলিশি টহলও।”
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে কিছু না কিছু নিরাপত্তা এ বারে রাখা হবেই। চেষ্টা চলছে প্রয়োজনে হোমগার্ড দিয়েও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার। পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছের জেরক্সের দোকানগুলি বন্ধ রাখা হবে। যানজট সমস্যা মেটাতে রাস্তায় পুলিশ বিশেষ ভাবে কাজ করবে। বসিরহাটের প্রত্যন্ত এলাকাতেও যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর বিশেষ নজর দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
উত্তর ২৪ পরগনায় এ বার মোট পরীক্ষাকেন্দ্র হচ্ছে ৩২৪টি। সব কেন্দ্রেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে এক জন করে প্রতিনিধি থাকবেন। পরীক্ষাকেন্দ্রে কেউ যাতে মোবাইল নিয়ে ঢুকতে না পারেন, সে ব্যাপারে নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এমনকী যিনি ‘গার্ড’ দেবেন, তিনিও সঙ্গে মোবাইল রাখতে পারবেন না। এ ছাড়া, প্রতিটি কেন্দ্রে একটি করে চিকিৎসক দল রাখা হচ্ছে। যাতে পরীক্ষা চলাকালীন কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy