Advertisement
E-Paper

জুজু বিজেপি, ভোটে জিততে মরিয়া তৃণমূল শরণাপন্ন বড়মার

মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণি দেবীর (বড়মা) আশীর্বাদ নিয়ে গেলেন বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দীপেন্দু বিশ্বাস। বসিরহাট মহকুমার সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটে এর আগে কখনও সেখান থেকে কোনও তৃণমূল প্রার্থী এসে বড়মার আশীর্বাদ নিয়েছেন, এমনটা মনে করতে পারেন না দলের নেতারাই। এমনকী, কয়েক মাস আগে হয়ে যাওয়া লোকসভা ভোটে বসিরহাট কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী ইদ্রিস আলিও আসেননি গাইঘাটা মতুয়াদের পীঠস্থান, ঠাকুরবাড়িতে। তা হলে এ বার কেন সেই দরকার পড়ল?

সীমান্ত মৈত্র ও নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৫৪
মতুয়াদের মন্দিরে তৃণমূল প্রার্থী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

মতুয়াদের মন্দিরে তৃণমূল প্রার্থী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণি দেবীর (বড়মা) আশীর্বাদ নিয়ে গেলেন বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দীপেন্দু বিশ্বাস।

বসিরহাট মহকুমার সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটে এর আগে কখনও সেখান থেকে কোনও তৃণমূল প্রার্থী এসে বড়মার আশীর্বাদ নিয়েছেন, এমনটা মনে করতে পারেন না দলের নেতারাই। এমনকী, কয়েক মাস আগে হয়ে যাওয়া লোকসভা ভোটে বসিরহাট কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী ইদ্রিস আলিও আসেননি গাইঘাটা মতুয়াদের পীঠস্থান, ঠাকুরবাড়িতে। তা হলে এ বার কেন সেই দরকার পড়ল?

আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর এই কেন্দ্রের উপনির্বাচন। একে তো চতুর্মুখী লড়াই এ বার। তার উপরে, গত লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে প্রায় ৩০ হাজার ভোটে বিজেপির পিছিয়ে থেকে এ বার লড়তে নামছে শাসক দল। এর আগে দীর্ঘ বছর আসনটি দখলে রেখেছিল সিপিএম। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে রাজ্যে বিজেপির অগ্রগতিকে রোখার বার্তা দিতে তৃণমূলের পক্ষে এই আসনে জয় পাওয়া কার্যত সম্মানের লড়াই। দলের তাবড় নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ তো বটেই এক ঝাঁক অভিনেতা-অভিনেত্রী-কলা-কুশীলবকে এখানে প্রচারে এনে বিজেপিকে টক্কর দেওয়ার কথা ভাবছে তৃণমূল। মতুয়া ভোটের কথা মাথায় রেখে তাই দীপেন্দুকে এ দিন ঠাকুরবাড়িতে ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল বলেই মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহল। বসিরহাট মহকুমা মতুয়া মহাসঙ্ঘের হিসেব অনুযায়ী, বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে হাজার দশেক মতুয়া ভোটার আছেন।

সোমবার বেলা সওয়া ২টো নাগাদ দলীয় সমর্থকদের বাইক-মিছিল সঙ্গে নিয়ে ঠাকুরবাড়িতে পৌঁছয় দীপেন্দুর গাড়ি। বড়মা ঘরেই ছিলেন। বনগাঁর সাংসদ তথা বড়মার বড় ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের স্ত্রী মমতা বালা দীপেন্দুকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। দীপেন্দু বড়মার পা ছুঁয়ে প্রণাম করে আর্শীবাদ চান। বড়মা মাথায় হাত রাখেন। বলেন, ‘‘জয় হোক।” দীপেন্দুর সঙ্গে এ দিন ছিলেন গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ধ্যানেশ নারায়ণ গুহ, বড়মার নাতি সুব্রত ঠাকুর ও দলীয় নেতারা। বড়মা বলেন, ‘‘ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করছি, ও যাতে জয়ী হতে পারে।’’ বড়মার ঘর থেকে বেরিয়ে দীপেন্দু যান হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে। সেখানে প্রণাম সেরে বলেন, ‘‘ভোটে দাঁড়িয়েছি, তাই বড়মার আর্শীবাদ নিতে এখানে এসেছিলাম। উনি আর্শীবাদ করেছেন। তবে এর আগেও টাটা অ্যাকাডেমিতে যাওয়ার আগে ঠাকুরবাড়ি এসেছি।” ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ কত পুরনো, সেটাও প্রমাণ করতে চেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। জানান, ঠাকুরবাড়ির কাছেই গোবরডাঙায় তাঁর পিসির বাড়ি। সেখান থেকে সাইকেল নিয়ে এসেছিলেন আগে।

২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই অবশ্য বিভিন্ন নির্বাচনে দাঁড়িয়ে তৃণমূল প্রার্থীদের ঠাকুরবাড়িতে এসে বড়মার আর্শীবাদ নিয়ে যাওয়া কার্যত রুটিন হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নানা সময়ে এসেছেন এখানে। মতুয়াদের জন্য নানা পরিষেবার কথা ঘোষণা করেছেন। মমতা রেলমন্ত্রী থাকাকালীনই ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে তাঁর এই সখ্যের শুরু। তার ফলও পেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। মতুয়া ভোটের বড় অংশই তৃণমূলের সঙ্গে থেকেছে এবং উত্তর ২৪ পরগনা তো বটেই সংলগ্ন আশপাশের জেলাতেও (যেখানে মতুয়া ভোটের প্রভাব আছে) ভোটের নিরিখে ভাল ফল করেছে তৃণমূল। কিন্তু বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র বা তার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের কোনও প্রার্থী এর আগে ঠাকুরবাড়িতে এসে বড়মার আশীর্বাদপ্রার্থী হয়েছেন কিনা, তা মনে করতে পারছেন না দলের নেতারাও। যে কারণে, বিরোধীদের কেউ কেউ বলছেন, বসিরহাট দক্ষিণ আসনে তৃণমূল এ বার চাপে আছে। দীপেন্দুর ঠাকুরবাড়িতে আসা তারই প্রমাণ।

পরশ তব। মতুয়াদের বড়মার কাছে বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের তৃণমূল প্রার্থী দীপেন্দু বিশ্বাস।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আমাদের প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। সেই জয় আরও তরান্বিত করতেই দীপেন্দু এ দিন বড়মার আর্শীবাদ নিতে গিয়েছিলেন। বড়মার দুই ছেলে দলের মন্ত্রী ও সাংসদ। ফলে আমি মনে করি, বড়মাও আমাদের বাইরে নন। তাই তাঁর আর্শীবাদ নেওয়া হয়েছে।” জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, বড়মা শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন। তা লিফলেট আকারে বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে বিলি করা হবে।

তৃণমূলের মতুয়া-ঘনিষ্ঠতার পূর্ব ইতিহাসকে গুরুত্ব দিতে না চাইলেও মতুয়া ভোটব্যাঙ্ককে পাশে পেতে তাঁরা যে আগ্রহী, সে কথা বোঝা গিয়েছে বাকি তিন প্রার্থীর কথায়।

বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ লোকসভার মতো বিধানসভার উপনির্বাচনেও আমাকেই সমর্থন করবেন, এই বিশ্বাস আমার আছে।” অন্য দিকে, কংগ্রেস প্রার্থী অসিত মজুমদারের কথায়, “বড়মার দুই ছেলে তৃণমূল করেন। ওঁরা ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেলেছেন।” পাশাপাশি তাঁর আশা, মতুয়ারা তাঁকেই ভোট দেবেন। কী বলছেন সিপিএম প্রার্থী মৃণাল চক্রবর্তী? তিনি বলেন, “মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতারা সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন। আমরাও তাঁদের সঙ্গে সেই উন্নয়নের শরিক ছিলাম। মতুয়ারা ধর্মের ভিত্তিতে একত্রিত হয়ে রাজনৈনিক কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আমি বিশ্বাস করি না। ওঁদের আর্শীবাদ থেকে বঞ্চিত হব না।” বসিরহাট মহকুমার যুব মতুয়া মহাসঙ্ঘের সম্পাদক প্রদীপ দাস অবশ্য সরাসরিই জানিয়ে দিলেন, তাঁরা মনে করেন এলাকার পঞ্চায়েত, পুরসভা, বিধানসভা এবং লোকসভায় একই দল ক্ষমতায় থাকলে এলাকার প্রকৃত উন্নয়ন হয়।” প্রদীপবাবুর কথায়, “সে দিক থেকে বিচার করে আমরা দীপেন্দুকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

চতুর্মুখী লড়াইয়ে ভোটের মার্জিন কারও বেশি হবে না বলে মনে করেন বিভিন্ন দলের স্থানীয় নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে এ বার মতুয়াদের ভূমিকাকে গুরুত্ব দিতে হচ্ছে সব পক্ষকেই।

nirmal bose nirmal basu shimanto moitra byelection bjp tmc bangaon dipendu biswas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy