Advertisement
E-Paper

ঝড়-বৃষ্টি মাথায় গ্রামবাসীরা তৈরি করলেন রিং বাঁধ

অবশেষে তৈরি হল রিং বাঁধ। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাত জেগে হিঙ্গলগঞ্জের রমাপুর গ্রামে রায়মঙ্গল নদীতে রিং বাঁধ তৈরি করে গ্রামের মধ্যে নোনা জল ঢোকা আটকালেন বাসিন্দারা। গ্রামবাসীদের এমন আন্তরিকতাকে সাধুবাদ জানিয়েছে প্রশাসনও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫১
চলছে বাঁধের কাজ।—নিজস্ব চিত্র।

চলছে বাঁধের কাজ।—নিজস্ব চিত্র।

অবশেষে তৈরি হল রিং বাঁধ। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাত জেগে হিঙ্গলগঞ্জের রমাপুর গ্রামে রায়মঙ্গল নদীতে রিং বাঁধ তৈরি করে গ্রামের মধ্যে নোনা জল ঢোকা আটকালেন বাসিন্দারা। গ্রামবাসীদের এমন আন্তরিকতাকে সাধুবাদ জানিয়েছে প্রশাসনও।

বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিস আলি বলেন, “যে ভাবে গ্রামের মানুষ প্রশাসনের সহযোগিতা করেছে তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। তবে ওই এলাকায় বাঁধকে শক্তপোক্ত করার জন্য জেলাশাসক এবং সেচকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে।”

গত সোমবার রাত তখন ১০টা। রমাপুর স্কুলবাড়ি ঘাটের কাছে বাড়ি মনোরঞ্জন মণ্ডলের। খাওয়ার পরে হাত ধুতে বাইরে বেরিয়েছেন। কানে এল রায়মঙ্গল নদীর জলের শব্দ। তার পাশাপাশি ঝপাং ঝপাং করে জলের মধ্যে মাটির চাঁই পড়ার শব্দ। গত তিন বছর আগে রমাপুর স্কুলবাড়ি এলাকায় আস্ত একটা কংক্রিটের জেটিঘাট রায়মঙ্গলের গভীরে তলিয়ে গিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে মনোরঞ্জনবাবু বুঝতে পেরেছিলেন যে বাঁধ ভাঙতে চলেছে। একবার বাঁধ ভেঙে নদীর নোনা জল গ্রামে ঢুকলে একফসলি ধান নষ্ট হয়ে যাবে। চাষিদের দুর্গতির শেষ থাকবে না। সে কথা ভেবে তিনি প্রথমে খবর দেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য খগেন কামিলাকে। রাতেই জড়ো হয় এলাকার লোকজন। নদীর দিকে আলো ফেলতেই দেখা যায় কেবল বাঁধ-ই নয়, ভেঙে পড়ছে চড়ে থাকা গাছপালাও। মাত্র তিন ঘণ্টায় একে একে প্রায় ৪০০ ফুট বাঁধ এবং ওই বাঁধের সামনে থাকা ৫০০ ফুটের মতো চর এবং শতাধিক গাছগাছালি নদীর গর্ভে তলিয়ে যায়। তখন ভাটা থাকায় গ্রামের মধ্যে নোনা জল ঢুকতে পারেনি। তবে জোয়ার আসলে যে গ্রামের মধ্যে জল ঢুকে পড়বে, এই আশঙ্কায় আতঙ্কিত ছিলেন গ্রামের মানুষ। প্রথমে পঞ্চায়েত পরে সেচ দফতরের সহযোগিতায় শুরু হয় বাঁধ বাঁধার কাজ।

মঙ্গলবার সকাল থেকে গ্রামের মানুষ রিং বাঁধ তৈরির কাজে হাত লাগান। সে সময়ে এসে পৌঁছন সেচদফতরের কর্তারা। তাঁদের উদ্যোগে রাত জেগে কাজ করার জন্য জেনারেটর এনে আলো এবং মাইকের ব্যবস্থা করা হয়। বুধবার ঘটনাস্থলে যান সেচ দফতরের আধিকারিক এবং হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও। বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরাও বাঁধ বাঁধার কাজে হাত বাড়িয়ে দেন। দুপুর নাগাদ ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায় শতাধিক গ্রামবাসী ঝুড়ি-কোদাল নিয়ে বাঁধের কাজ শুরু করেছে। বাঁধের দায়িত্বে থাকা সেচ দফতরের কর্মী পলাশকান্তি দাস বলেন, “নদীর পাড়ে বেশ কিছু তলিয়ে গিয়েছে। দেড়শো মিটার আয়লা বাঁধও ভেঙে পড়েছে। সামনেই কালীপুজো। নদীতে জল বাড়ার আগে প্রায় সাড়ে ৭০০ ফুট রিং বাঁধের কাজ শেষ করা হবে।” মাজেদ আলি, করুণা মণ্ডল, লিলি বিবি, গৌর বেরা বলেন, “কয়েক বছর আগে এক রাতের মধ্যে আস্ত একটা জেটিঘাট চলে গিয়েছিল রায়মঙ্গলের গর্ভে। তাই দেরি না করে সকলেই বাঁধ মেরামতে লেগে পড়ি।”

বাঁধ নিয়ে চিন্তিত প্রশাসনও। কর্তাদের কথায়, “২০০৯ সালে ঘটে যাওয়া আয়লার আতঙ্ক এখনও কাটেনি। শক্তপোক্ত বাঁধই যদি রাতারাতি বসে যেতে পারে, তা হলে আর কোন বাঁধ রক্ষা করতে পারবে রায়মঙ্গল নদী পাড়ের বাসিন্দাদের?” স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, আসলে দীর্ঘ দেখভালের অভাবের পাশাপাশি বড় নদীর জলের ধাক্কায় বাঁধের মাটির তলা ফাঁক হয়ে পড়ছে। ফলে যতই বাঁধের পাশের চরে গাছ লাগানো হোক কিংবা চওড়া আয়লা বাঁধ করা হোক নোনা জলে গ্রাম ভাসার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তাই সুন্দরবন এলাকায় বাঁধের নিচের দিকে আলগা হয়ে পড়া মাটি ভাল ভাবে পরীক্ষা করার পরে তবেই আয়লা বাঁধ করতে হবে বলে দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।

বসিরহাটের মহকুমাশাসক শেখর সেন বলেন, “রমাপুরে রিং বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। সামনের কোটালে নদীর জল বাড়ার আগেই যাতে বাঁধের কাজ শেষ করা যায় তার সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।”

ring dam basirhat hingalganj romapur village villagers southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy