Advertisement
E-Paper

তিন হাসপাতালে ঠোক্কর খেয়ে ঘুরল জখম ছাত্র

মুমূর্ষু অবস্থায় কলকাতার তিনটি সরকারি হাসপাতালে ঘোরার পরে অবশেষে বুধবার সন্ধ্যায় চিকিত্‌সা শুরু হল মোস্তাক আহমেদ গাজির। মঙ্গলবার পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিল বসিরহাটের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মোস্তাক। তার অন্য দুই সহপাঠী ঘটনাস্থলে মারা যায়। মাথায় ও পায়ে গুরুতর চোট পাওয়া মোস্তাককে কলকাতায় নিয়ে আসেন তার পরিবারের লোকেরা।

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:১০
বাবুসোনা ও মসিউর

বাবুসোনা ও মসিউর

মুমূর্ষু অবস্থায় কলকাতার তিনটি সরকারি হাসপাতালে ঘোরার পরে অবশেষে বুধবার সন্ধ্যায় চিকিত্‌সা শুরু হল মোস্তাক আহমেদ গাজির।

মঙ্গলবার পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিল বসিরহাটের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মোস্তাক। তার অন্য দুই সহপাঠী ঘটনাস্থলে মারা যায়। মাথায় ও পায়ে গুরুতর চোট পাওয়া মোস্তাককে কলকাতায় নিয়ে আসেন তার পরিবারের লোকেরা। কিন্তু শহরের তিনটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল আরজিকর, নীলরতন সরকার, এসএসকেএম তাকে ফিরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে (এনআরএস) তাকে ভর্তি নিয়েছে। চিকিত্‌সকেরা জানিয়েছেন, মোস্তাকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

গত মঙ্গলবার স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট থানার আমতলার কাছে টাকি রোডে দুর্ঘটনায় পড়েছিল ১৬ বছরের মোস্তাক ও তার দুই সহপাঠী মসিউর রহমান ও বাবুসোনা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুপুর দেড়টা নাগাদ তারা তিন জন একটি মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিল। আচমকা হাসনাবাদগামী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের ধাক্কা মারে। ছিটকে পড়ে তিন জনেই। তখনই উল্টো দিক থেকে আসা একটি ইট-বোঝাই লরি তাদের পিষে দিয়ে যায়। দুই ছাত্র মারা যায়। জখম মোস্তাককে আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

আর, তার পরেই শুরু হয়ে যায় ছেলেটিকে ভর্তি করা নিয়ে টানাপোড়েন। মোস্তাকের আত্মীয়-পড়শিদের অভিযোগ, আরজিকরের জরুরি বিভাগে তাকে পরীক্ষা করে চিকিত্‌সকেরা জানান, তার মাথায় যে ধরনের আঘাত রয়েছে, তার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিত্‌সক দরকার। কিন্তু ওই হাসপাতালে তেমন চিকিত্‌সক নেই। ছেলেটিকে যেন এসএসকেএম কিংবা এনআরএসে নিয়ে যাওয়া হয়। মোস্তাকের প্রতিবেশী শাহাজান মণ্ডল জানান, আরজিকর থেকে মোস্তাককে তাঁরা এনআরএসের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানেও ওই বিভাগের কোনও চিকিত্‌সক নেই বলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

শাহাজানের অভিযোগ, “এনআরএস থেকে আমাদের বলা হয়, দু’দিন পরে চিকিত্‌সক পাওয়া যাবে। এখানে ফেলে রেখে লাভ নেই। বরং এসএসকেএমে নিয়ে চলে যান।” রাতেই মোস্তাককে নিয়ে এসএসকেএমে পৌঁছন তাঁরা। কিন্তু তারাও ছেলেটিকে ভর্তি নেয়নি। মোস্তাকের পরিজনদের অভিযোগ, সেখানে মোস্তাকের রিপোর্ট দেখানো হলেও কোনও পরীক্ষা করাননি জরুরি বিভাগে থাকা চিকিত্‌সকেরা। প্রায় বিনা চিকিত্‌সাতেই রাতভর ছেলেটিকে নিয়ে ভর্তির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন পরিবারের লোকেরা। বুধবার বিকেল পর্যন্তও সেই সুযোগ মেলেনি। বরং ওই অবস্থায় পড়ে থেকে ছাত্রটির অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকায় তাকে ফের এনআরএসে নিয়ে যান আত্মীয়-পড়শিরা। সেখানে ফের তাকে প্রত্যাখান করা হয় বলে অভিযোগ। শেষমেশ হাসপাতাল সুপার আলি আমামের উদ্যোগে সন্ধ্যায় মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে তার ঠাঁই হয়।

কেন আরজিকর বা এসএসকেএম ছেলেটিকে ফিরিয়ে দিল? কেনই বা এনআরএস প্রথমে তাকে ভর্তি না নিয়ে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছিল? রাত পর্যন্ত এই সব প্রশ্নের কোনও সদুত্তর হাসপাতাল কর্তারা দিতে পারেননি। তবে তিনটি হাসপাতাল সূত্রেই বলা হয়েছে, তাদের যা পরিকাঠামো তাতে কোনও ভাবেই গুরুতর আহতকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা নয়। কেন এমন ঘটল, তার তদন্ত হবে বলেও কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন। তদন্তের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য ভবনও। তবে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য, এমন তদন্ত অতীতে অনেক ঘটনাতেই হয়েছে। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। বরং রোগী প্রত্যাখ্যানের চেনা ছবিটাই বারবার বেআব্রু হয়েছে।

southbengal dikshya bhuyian basirhat accident death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy