ছাত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগে পাঁচ ছাত্রকে সাময়িক ভাবে কলেজে ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। রীতিমতো নোটিস দিয়ে সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার প্রতিবাদে বুধবার থেকে গোসাবার পাঠানখালির হাজি দেশারত কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশনে বসেছে আরএসপি প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন পিএসইউ।
কলেজ সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত গত ৯ ডিসেম্বর। দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ওই দিন লিখিত অভিযোগে জানান, আগের সন্ধ্যায় নবীনবরণ অনুষ্ঠানে তাঁকে লক্ষ করে অশালীন মন্তব্য করেছে কলেজেরই কয়েক জন ছাত্র। পাঁচ জন ছাত্রের নামও জানান তিনি। ছাত্রদের দাবি, সে সময়ে কয়েক দফা শাস্তি ঘোষণা করা হলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শীতকালীন ছুটি শেষ হওয়ার পরে কলেজ খুললে ফের একটি নোটিসে ঘোষণা করা হয়, ওই পাঁচ ছাত্র ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত কলেজে ঢুকতে পারবেন না। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ছাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে ওই ছাত্রেরা যাতে কোনও ভাবে প্রভাব খাটাতে না পারে, সে জন্যই এই নিষেধাজ্ঞা। প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত ছাত্রেরা সকলেই পিএসইউ সমর্থক। ছাত্র সংসদের দখল পিএসইউ-এর হাতে। ওই সংগঠনের দাবি, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চাপেই ওই পাঁচ ছাত্রকে সাময়িক ভাবে কলেজে না ঢোকার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তারই প্রতিবাদে অনশন বলে জানিয়েছে ছাত্র সংসদ। তাতে সামিল হয়েছেন অভিযুক্ত পাঁচছাত্র-সহ ২০ জন পড়ুয়া।
আন্দোলনকারী ছাত্রেরা জানান, ১০ ডিসেম্বর অভিযুক্ত ছাত্রদের এক জনকে কলেজ থেকে সাসপেন্ড করা হয়, দু’জনকে হোস্টেল থেকে সাসপেন্ড করা হয়। দু’জনকে কড়া ভাবে সতর্ক করে কর্তৃপক্ষ চিঠি পাঠান। ১১ ডিসেম্বর ওই শাস্তি নোটিস বোর্ডেও ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এরপরে গত ২১ ডিসেম্বর ওই চিঠি এবং নোটিস দু’টিই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ২ জানুয়ারি যখন কলেজ খোলে, তখন একটি নোটিসে পড়ুয়ারা দেখেন, পাঁচ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত কলেজে ঢোকা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। দুই অভিযুক্তের মন্তব্য, “সামনেই ছাত্র সংসদের নির্বাচন। সে কারণে টিএমসিপি পরিকল্পিত ভাবে ফাঁসিয়ে আমাদের কলেজে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে। ভুয়ো তদন্ত কমিটি বসিয়ে এখন আমাদের শাস্তিরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” সাসপেনশনের চিঠি দিয়ে ফের তা প্রত্যাহার করে কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি গড়ার সিদ্ধান্তের পিছনে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চাপ আছে বলেই তাঁদের মত। অভিযুক্তদের কেউ কেউ আরও জানিয়েছেন, অভিযোগকারিণী ছাত্রী স্থানীয় তৃণমূল নেতার মেয়ে। তাই ছাত্র সংসদের নির্বাচন প্রভাবিত করতে প্রধান প্রতিপক্ষ পিএসইউ সমর্থক ছাত্রদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ আনা হয়েছে। কলেজে ঢোকার নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিলে তাঁরা অনির্দিষ্টকাল অনশন চালাবেন বলেও দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রত্নাকর পানি বলেন, “ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গড়ে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের সাসপেন্ড করার কোনও সিদ্ধান্ত কখনও জানানো হয়নি। তাঁদের কড়া ভাবে সতর্ক করে একটি নোটিস কেবল দেওয়া হয়। পরে জেনারেল বডির বৈঠকের সিদ্ধান্তে যা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তদন্তের স্বার্থেই ওই ছাত্রদের আগামী ১৫ তারিখ পর্যন্ত কলেজে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।” ছাত্রদের অনশনের বিষয়ে তিনি বলেন, “ওঁরা যে পন্থা নিয়েছেন, তা ঠিক নয়। ছাত্রেরা আমাদের সন্তানের মতো। নিজেদের শরীরকে কষ্ট না দিয়ে অন্য ভাবেও আন্দোলন করতে পারতেন। ওঁদের কাছে অনুরোধ রাখব, যাতে অনশন তুলে নেন।”
গোসাবার তৃণমূলের বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর বলেন, “পিএসইউ-এর অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। টিএমসিপি কোনও ভাবেই এ ব্যাপারে যুক্ত নয়। কলেজের একটি মেয়ের সঙ্গে অভব্য আচরণ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কলেজ যা ভাল মনে করেছে, সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”