Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

যাত্রীদের তৎপরতায় উদ্ধার তিন ভিনদেশি মেয়ে

সন্ধে ৬টা নাগাদ গোবরডাঙা স্টেশনে তখন বেশ ভিড়। হঠাৎই নারীকণ্ঠের চিৎকার ভেসে আসে। ‘বাঁচাও বাঁচাও, আমাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে।’ নিমেষে ভিড়টা ঘুরে যায় সে দিকে। দেখা যায়, ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে বসে তিনটি মেয়ে হইচই জুড়েছে। নিত্যযাত্রীরা এগিয়ে আসেন। খবর যায় জিআরপি-র কাছে। পুলিশ আসে থানা থেকে। জানা যায়, ওই তিনকন্যার বাড়ি বাংলাদেশে। সেখান থেকে কাজের লোভ দেখিয়ে তাদের এ পারে আনা হয়েছে।

গোবরডাঙায় ধৃত চার নারী পাচারকারী। —নিজস্ব চিত্র।

গোবরডাঙায় ধৃত চার নারী পাচারকারী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০২:০৯
Share: Save:

সন্ধে ৬টা নাগাদ গোবরডাঙা স্টেশনে তখন বেশ ভিড়। হঠাৎই নারীকণ্ঠের চিৎকার ভেসে আসে। ‘বাঁচাও বাঁচাও, আমাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে।’

নিমেষে ভিড়টা ঘুরে যায় সে দিকে। দেখা যায়, ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে বসে তিনটি মেয়ে হইচই জুড়েছে। নিত্যযাত্রীরা এগিয়ে আসেন। খবর যায় জিআরপি-র কাছে। পুলিশ আসে থানা থেকে। জানা যায়, ওই তিনকন্যার বাড়ি বাংলাদেশে। সেখান থেকে কাজের লোভ দেখিয়ে তাদের এ পারে আনা হয়েছে। অনেক হাত ঘুরে অবশেষে তারা পৌঁছেছে গোবরডাঙায়। কিন্তু পথঘাট কেউই কিছু চেনে না। প্ল্যাটফর্মে লোকজন দেখে ভরসা হয়, এখানে যদি চেঁচামেচি করে কিছু একটা করা যায়, হয় তো উদ্ধার পাওয়া যাবে। ওই তিনটি মেয়ের সঙ্গে আরও দুই মহিলা এবং দু’জন পুরুষ ছিল। তারা পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িত বলে বাংলাদেশি মেয়েরা অভিযোগ করে। জনতা তাদের ঘিরে রাখে। চড়-থাপ্পরও পড়ে কয়েক ঘা।

বুধবার সন্ধ্যার এই ঘটনায় জিআরপি গ্রেফতার করেছে ওই চার জনকে। রেলপুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম রীতা সরকার, শিল্পা মাঝি, স্বপন দাস ও রতন গুহ। বাড়ি হুগলির ভদ্রেশ্বর, স্বরূপনগর, গাইঘাটা ও বীজপুর এলাকা। বৃহস্পতিবার তিনকন্যাকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়েছে। তারা বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দিও দিয়েছে। পাচার চক্রের বাকিদের খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছে জিআরপি। রেলপুলিশের দাবি, ধৃতেরা স্বীকার করেছে তিনটি মেয়েকে বিক্রির উদ্দেশ্যে মুম্বই নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু চক্রটি এতটাই সক্রিয় যে পুলিশের কাছে ইতিমধ্যেই ধৃতদের জামিনের সুপারিশ করে ফোন আসতে শুরু করেছে।

বৃহস্পতিবার ধৃতদের বনগাঁ আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের শনিবার পর্যন্ত জেলহাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুলিশ সকলকে নিজেদের হেফাজতে রাখলেও কিছু আইনি জটিলতায় সেই আবেদন মঞ্জুর করতে পারেননি বিচারক। পুলিশ জানায়, পরবর্তীতে মামলা উঠবে বারাসত আদালতে। সেখানেই সকলকে নিজেদের হেফাজতে চাইবে তারা।

পুলিশ জানায়, রতনই দলের পাণ্ডা। সে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে তিনটি মেয়েকে কিনেছিল। তিনটি মেয়ের মধ্যে সতেরো ও চোদ্দো বছরের দুই নাবালিকাকে এ দেশের কোনও এক গোপন ডেরায় দুই পাচারকারী ধর্ষণ করেছে বলেও মেয়েরা জানিয়েছে পুলিশকে। তবে গোবরডাঙা থেকে ধৃত দুই পুরুষ পাচারকারী সেই কাজে যুক্ত নয় বলেও জানিয়েছে তারা।

রেলপুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের ওই তিনটি মেয়ের বাড়ি চট্টগ্রাম, নোয়াখালি ও মুন্সিগঞ্জে। সকলেই গরিব পরিবারের। ঢাকার বিউটি পার্লার, কাপড়ের দোকানে কাজ করত। দোকানে তদন্তকারী অফিসারদের তারা জানিয়েছে, তাপসী রাজ নামে ময়মনসিংহের এক পরিচিত মহিলা তাদের যশোহরে ভাল কাজ পাইয়ে দেবে বলেছিল। ২৬ অগস্ট সকালে ওই মহিলা তাদের যশোহরে নিয়ে আসে। সেখানে ওই মহিলা তাদের একটি বাড়িতে রেখে চলে যায়। ওই দিনই কয়েক জন লোক তাদের কাজের জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে বলে একটি নদী পার করিয়ে দেয়। সেখানে দু’জন লোক গাড়ি করে তাদের একটি বাড়িতে নিয়ে আসে। সেখানে আবার অন্য দু’জন হাজির ছিল। মেয়েদের মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা কেড়ে নেওয়া হয়। সে সময়েই তারা আন্দাজ করে খারাপ লোকের খপ্পরে পড়েছে। ওই বাড়িতেই তাদের দু’জনকে ধর্ষণ করা হয় বলে জানিয়েছে মেয়েরা। ঠিক মতো খেতেও দেওয়া হয়নি। তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিকেলে অটো করে ওই বাড়ির দু’জন তাদের গোবরডাঙা প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসে। সেখানে চার জনের হাতে তাদের তুলে দেওয়া হয়। পুলিশের অনুমান, গাইঘাটা সীমান্ত দিয়ে ইছামতী নদী পার করিয়ে মেয়েদের এ দেশে আনা হয়েছিল।

এ দেশে মোটা বেতনের ভাল কাজের টোপ দিয়ে বাংলাদেশ থেকে নারীপাচারের ঘটনা নতুন নয়। অনেকেই যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের শিকার হয়। অনেককে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়। তার আগে পাচারকারী, দালালদের হাতেও নির্যাতিতা হয় মেয়েরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE