Advertisement
E-Paper

রমরমিয়ে চলে সারমেয়ের খাবার বিক্রির ব্যবসা

তাড়াতাড়ি পকেটে খাবার ঢোকানোর কোনও উপায় নেই ওদের। না হলে হয় তো হরির লুঠের বাতাসার মতো ওরাও হুটোপাটি করে খাবার কুড়িয়ে পকেটে পুড়ত। যে যেমন পারে সাধ্য মতো টপাটপ মুখে লুফে নিয়ে পেটে পুরে নেয়। কাড়াকাড়ি মধ্যে অল্পস্বল্প ঝগড়াঝাটিও যে হয় না, তা নয়।

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৪১
চলছে ভুরিভোজ। নিজস্ব চিত্র।

চলছে ভুরিভোজ। নিজস্ব চিত্র।

তাড়াতাড়ি পকেটে খাবার ঢোকানোর কোনও উপায় নেই ওদের। না হলে হয় তো হরির লুঠের বাতাসার মতো ওরাও হুটোপাটি করে খাবার কুড়িয়ে পকেটে পুড়ত। যে যেমন পারে সাধ্য মতো টপাটপ মুখে লুফে নিয়ে পেটে পুরে নেয়। কাড়াকাড়ি মধ্যে অল্পস্বল্প ঝগড়াঝাটিও যে হয় না, তা নয়। কিন্তু আবার মিটেও যায়। কারণ লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকলে নিজেদেরই ক্ষতি। তার থেকে খাওয়ায় মন দিলে সকলেরই লাভ!

এরা দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর দ্বীপের এক পাল কুকুর। সাগর দ্বীপের কপিল মুনির মন্দিরের দর্শনার্থীরা সমুদ্রে স্নানের পরে শ’দুয়েক সারমেয়কে বিস্কুট খাওয়ান। ভিক্ষুকদের চালের প্যাকেট দান করেন। তারপর পা বাড়ান মন্দিরের দিকে। এলাকায় এই প্রথাই চলে আসছে বছরের পর বছর। আর এই কুকুরদের খাবার জোগান দিতে গঙ্গাসাগরের বেলাভূমিতে রয়েছে প্রায় ৫০টি গুমটি ভ্যানের দোকান। পুণ্যার্থীদের হাতে কুকুরের খাবার জোগান দেওয়াই যাঁদের মূল রোজগার।

কয়েক দিন আগে সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ সাগরের বেলাভূমিতে গিয়ে দেখা গেল, পুণ্যস্নানের জন্য ভিনরাজ্য থেকে এসেছেন পর্যটকেরা। স্নানের পরে কুকুরকে খাইয়ে তারপরে মন্দিরে যাচ্ছেন সকলে। কেন এমন প্রথা জানতে চাইলে দর্শনার্থীরা জানান, কুকুরকে বলা হয় মহাকাল (শিবের আর এক রূপ)। তাদের খুশি করতে পারলে তুষ্ট হবেন স্বয়ং মহাদেব। তা ছাড়া প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী, কুকুর হচ্ছে ধর্মের রূপ। মহাভারতে যুধিষ্ঠিরকে স্বর্গের পথে নিয়ে গিয়েছিল ওই সারমেয়। সে সব মাথায় রেখে ৩-৪টি করে প্লাস্টিকে মোড়া বিস্কুটের প্যাকেট কিনে ফেলেন পুণ্যার্থীরা। একটি পাত্রে রেখে ডাক দেন সারমেয়দের। তার আগেই অবশ্য হাজির বাদামি, কালো, সাদা কুকুরের পাল। দর্শনার্থীরা মুঠো ভর্তি করে বিস্কুট নিয়ে হরির লুটের মতো ছড়ান কুকুরের দিকে। প্রথমটায় নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির জন্যই হোক কিংবা প্রতিযোগিতার জন্য কুকুরদের মধ্যে সামান্য খেয়োখেয়ি শুরু হয়। তারপর সকলে শান্তিতে খাওয়ার দিকে মন দেয়। খানিক ক্ষণ বাদে দেখে গেল, ভরা পেটে সারমেয়রা সমুদ্রস্নানেও নেমেছে।

সারমেয়দের তুষ্ট করার এই রীতি অবশ্য গঙ্গাসাগর মেলার দিনগুলিতে থাকে না। কুকুরেরই দেখা মেলে না কার্যত। কোথায় যায় তারা? ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ভিড়ের মধ্যে মিশে গিয়ে কুকুর যদি গোলমাল পাকায়, তবে পুলিশ ঠেঙাবে কুকুরকে। গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে অন্যত্র ছেড়েও দিয়ে আসতে পারে। তা হলে সারা বছরের ব্যবসা কেমন করে চলবে ছোট দোকানিদের? তাই মেলার দিনগুলিতে গুমটি দোকানের ব্যবসায়ীরা কুকুরের পালকে আগলে রাখেন নিজেদের বাড়িতে।

মেলার দিনগুলিতে গুমটি থেকে মূলত চা বিক্রি হয়। গঙ্গাসাগর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আলমগীর খাঁ, সাইদুল মোল্লা, রমেন জানারা বললেন, “বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা সকলে বাড়িতে কয়েকটি করে কুকুর পুষেছি। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়ে ওদের নিয়ে আসি। ওরা খাবার পেলেই খুশি। কোনও দিন ওরা কারও কোনও ক্ষতি করেনি।”

dog fodder business dilip naskar sagar southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy