শীতের শুরু থেকেই পিকনিকের ভিড় বাড়ছে বাগদা ব্লকের পারমাদনের বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্যে। শীতের আমেজ মেখে পিকনিকের পাশাপাশি গাছগাছালি ঘেরা পরিবেশে সময় কাটানোর টানেই মানুষ আসছেন এখানে।
৯৩ হেক্টর এলাকা নিয়ে অভয়ারণ্যটি তৈরি। তার মধ্যে ৬৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে রয়েছে ‘ডিয়ার পার্ক’। বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত অভয়ারণ্যে ঢুকতে সাধারণ মানুষের জন্য টিকিট কাউন্টার খোলা থাকে। খোলামেলা পরিবেশে জীবজন্তু দেখার সময়সীমা অবশ্য বিকেল ৪টে পর্যন্ত। তবে বাইরেই রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য নোটিস সারা দিনে ‘তাঁদের’ দেখা না-ও মিলতে পারে।
বনগাঁ শহর থেকে সড়ক পথে বিভিন্ন এলাকার মধ্যে দিয়েই পৌঁছন যাওয়া পারমাদনে। বনগাঁ-বাগদা সড়ক ধরে বাগদার দিকে যাওয়ার পথে কলমবাগান বাজার থেকে বাঁ দিকে বেয়ারা সড়ক। সেখান থেকে হয় কড়ঙ্গ-ঝুপা, নয় তো বেয়ারা হয়ে পৌঁছনো যায় ইছামতীর পাশের অভয়ারণ্যে। হেলেঞ্চা থেকে হেলেঞ্চা-দত্তফুলিয়া সড়ক ধরে নলডুগারি বাজার থেকে বাঁ দিকে এগোলেই পারমাদনে। যদিও এই পথের দূরত্ব একটু বেশি। অভয়ারণ্য ঢোকার আগে অবশ্য চাঁদার জুলুমের খপ্পরে পড়লেও অবাক হবেন না।
শীতের সকালে কাউন্টারের বাইরে দীর্ঘ লাইনে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ জড়ো হন। পিকনিকের জন্য হলে জন-প্রতি টিকিটের মূল্য ৬৫ টাকা, শুধুই অভয়ারণ্য দেখতে টিকিটের দাম ৬০ টাকা। ভিতরে যানবাহন রাখারও জায়গা রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের ছাড়ের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রমাণপত্র প্রয়োজন।
মূল অভয়ারণ্যে কারও প্রবেশ নিষেধ। মূল অরণ্যে পিকনিক করারও অনুমতি নেই। তার জন্য এলাকা নির্দিষ্ট করা আছে। তবে কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে। যেমন পিকনিকের সময় লাউডস্পিকার বাজানো যাবে না। বাদ্যযন্ত্র বা প্লাস্টিকের ব্যাগ নিয়েও ভিতরে ঢোকা নিষেধ। মদ্যপান করা যাবে না, ছবি তোলা যাবে না, ভিতরে গাড়ির হর্ন বাজানোর উপরেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রায় ৪০০টির মতো হরিণ রয়েছে এখানে। তা ছাড়াও ময়ূর, ম্যাকাও, লাভ বার্ড, কাকাতুয়া, সারস, পাহাড়ি টিয়া, সাদা বক, মাছরাঙা, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ পর্যটকদের নজর কাড়ে। সারি সারি মিনজিরি, অর্জুন, জারুল, মেহগনি, শিরীষ, লম্বু, পিটালি, আম, জাম, আমলকি, বহেড়ার মতো গাছের মধ্যে দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে কখন যে সময় পেরিয়ে যাবে, বোঝাই যায় না। কিছুটা সময় অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখতে হবে ওষধি গাছের উদ্যান দেখার জন্য। যেখানে কালমেঘ, কুলেখাড়া, কারিপাতা, কালো ধুতরা, কাঁটা বিশল্যকরণী, বাসক, ঘৃতকুমারী-সহ হাজারো গাছ রয়েছে। বোর্ডের উপরে তাদের নাম-ধাম, গুণাবলী লেখা আছে। উত্তর ২৪ পরগনার বিভাগীয় বনাধিকারিক অরুণাংশু পাণ্ডা বলেন, “পর্যটকদের কাছে অভয়ারণ্যটিকে আরও আকর্ষণীয় করতে সম্প্রতি একটি বাটারফ্লাই পার্ক তৈরি করা হয়েছে। মূলত ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এখানে মানুষের ভিড় বেশি হয়। সে সময়ে মানুষ পিকনিকও করতে আসেন।”
অভয়ারণ্যকে কেন্দ্র করে এলাকার বহু মানুষ বিকল্প আয়েরও পথ খুঁজে পেয়েছেন। গেটের বাইরে দোকানপাট খুলেছেন অনেকে। তৈরি রয়েছে কিছু হোটেল-রেস্টুরেন্টও। সাইকেল, মোটর বাইক, গাড়ি রাখার জায়গা থেকেও উপার্জন আসছে। পিকনিকের জন্য মাঠ ভাড়া দেওয়ারও চল আছে। অভয়ারণ্যের পিছন দিকে কচুরিপানায় ভরা ইছামতী গ্রামবাসীরা নিজেরাই উদ্যোগ করে পরিষ্কার করছেন। ফলে নৌকো ভ্রমণের সাধও মেটাতে পারেন পর্যটকেরা। বিট অফিসার সুবীর ঘোষ বলেন, “২৫ ডিসেম্বর এই মরসুমে সব থেকে বেশি ভিড় হয়েছিল। ওই দিন ৮৫ হাজার টাকা আয় হয়েছে বন দফতরের। এখানে বন দফতরের লজ ও বাংলো রয়েছে। সাধারণ মানুষ চাইলে সেখানে থাকতে পারেন। বারাসতে আমাদের বিভাগীয় অফিস থেকে বাংলো ভাড়া করতে হয়। লজ ভাড়া হয় অনলাইনে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy