এ বারের লক্ষ্মীপূর্ণিমা খুব একটা সুখকর হল না কাকদ্বীপ এবং ডায়মন্ড হারবার মহকুমার মৎস্যজীবীদের কাছে। দশমীর পর থেকে যে ট্রলারগুলি মাছ ধরতে বেরিয়েছিল, ঘূর্ণিঝড় হুদহুদের আগাম বার্তা তাদের ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে বন্দর এলাকায়। চলতি মরসুমে একে সমুদ্রে মাছের আকাল, তার উপরে নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড় সব মিলিয়ে এই নিয়ে প্রায় ৭ বার বিপর্যস্ত হলেন মৎস্যজীবীরা। তবে এ বারের ক্ষতি অন্য বারের তুলনায় অনেক বেশি। মৎস্যজীবীদের সংগঠনের একটি সূত্রের দাবি, কাকদ্বীপ ও ডায়মন্ড হারবার মিলিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন ট্রলার মালিক ও মৎস্যজীবীরা।
দশমীর পর থেকে লক্ষ্মী পূর্ণিমাএই সময়ে মৎস্যজীবীদের জন্য সমুদ্র খানিকটা দরাজ হয়। জোয়ারের টানে ফুলে থাকা সমুদ্রে মেলে ইলিশ ছাড়াও অন্য মাছ। কিন্তু এ বার বাদ সাধল হুদহুদ। গত তিন চার দিন ধরে ওই ঝড় উপকূলের দিকে ফুঁসতে থাকায় আর ভরসা করতে পারেননি মৎস্যজীবীরা। প্রশাসনের তরফে আগাম সতর্কবার্তা পেয়েই অনেক ট্রলার ফিরতে শুরু করে ৮ অক্টোবর থেকে। শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশ ট্রলারই ফিরে এসেছে। কোনওটি মাছ না ধরে, আবার কারও ভাগ্যে জুটেছে ছিটেফোঁটা। ১ জুন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় ৭ বার আবহাওয়া খারাপ হওয়ার জেরে মাছ ধরা বিপন্ন হল। প্রতি বারই ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৎস্যজীবী-ট্রলার মালিকেরা।
কাকদ্বীপের মৎস্যজীবী সুভাষ সরকারের দু’টি ট্রলার রয়েছে। দশমীর পরে সেগুলি গিয়েছিল মাঝ সমুদ্রে। ঝড়ের বার্তা পেয়ে ফিরতেই হয়েছে। সুভাষবাবু বলেন, “প্রতিটি ট্রলারের এক একটি ট্রিপে প্রায় ১ লক্ষ টাকা করে খরচ হয়। ডিজেল, মাঝিদের রেশন এবং বরফ মিলিয়ে ট্রলার পিছু এ বার আমার প্রায় ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতি হল।” সুভাষবাবুর মতো কাকদ্বীপ, নামখানা, রায়দিঘি, ফ্রেজারগঞ্জ, মৈপিঠ থেকে প্রায় আড়াই হাজার ট্রলার মালিক এ বার পূর্ণিমায় মাছের আশায় নৌকো ভাসিয়েছিলেন দশমীর পর থেকে।
এমনকী, লক্ষ্মীপুজোর পরে যাত্রা শুরু করে সমুদ্রে পৌঁছতেই ফেরার বার্তা পেয়েছেন অনেকে। প্রশাসনের তরফে ৭ অক্টোবর থেকেই ট্রলারগুলিকে ফেরার জন্য বার্তা পাঠানো হয়েছিল। গত তিন দিন ধরে কাকদ্বীপ, নামখানার বিভিন্ন ঘাটে ট্রলারের ভিড়। কোনও কোনও ট্রলারে এক মণেরও কম ইলিশ ধরা গিয়েছে বলে আক্ষেপ করছেন মৎস্যজীবীরা। যেখানে ভরা মরসুমের পূর্ণিমায় প্রায় ১৫-২০ মণ ইলিশ নিয়ে ফেরে ট্রলারগুলি, সেখানে হুদহুদ অনেককেই ফিরতে বাধ্য করেছে খালি হাতে।
কাকদ্বীপের মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা বিজন মাইতি বলেন, “এ বার একটু আগাম বার্তা পাওয়া গিয়েছে বলে সমস্ত ট্রলারগুলিকে সতর্ক করা গিয়েছে। কিন্তু যা খবর পেয়েছি, অন্য সময়ে সমুদ্র থেকে ফিরে মাছ বিক্রির পর ট্রলারের শ্রমিকদের হাতে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার টাকা করে থাকে। এ বার তাঁদের একেবারেই ফাঁকা হাতে ফিরতে হয়েছে।”
শুক্রবারও ফিরেছে অনেক ট্রলার। এফবি সূর্যনারায়ণের স্মৃতি এখনও তাজা। তাই ঝুঁকি নিতে চাননি অনেক মালিকই। মাস দেড়েক আগে এ রকমই একটি নিম্নচাপে পড়ে ওই ট্রলার উল্টে মারা গিয়েছিলেন ৬ জন মৎস্যজীবী। এখনও নিখোঁজ এক জন। জাল পাতার সঙ্গে সঙ্গেই ফলে মাছের আশা ছেড়ে তীরের দিকে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন মৎস্যজীবীরা। রায়দিঘির মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা জয়কৃষ্ণ হালদার জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ট্রলারই ফিরে এসেছে চার-পাঁচ দিন আগে। কারণ কাকদ্বীপ থেকে প্রায় দেড় দিন লাগলেও, রায়দিঘি থেকে গভীর সমুদ্রে পৌঁছতে দু’দিন লেগে যায়। তাই বার্তা পাওয়ার পর আর গভীর সমুদ্রের দিকে যাননি এই এলাকার বেশির ভাগ মৎস্যজীবী।
অন্য দিকে, হুদহুদের আতঙ্ক ছড়িয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকাতেও। কয়েক বছর আগে ওই এলাকায় ভয়ঙ্কর আয়লা ঘটে গিয়েছে। সেই স্মৃতি এখনও টাটকা। জরুরি পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে রবিবার, প্রশাসনের তরফে সমস্ত ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি কর্মী-সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। বসিরহাটের মহকুমাশাসক শেখর সেন জানান, হুদহুদের কারণে ব্লকে ব্লকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সুন্দরবন এলাকা-সহ মহকুমার সমস্ত ফ্লাড সেন্টার তৈরি রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি পলিথিন,পানীয় জল-সহ পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সিভিল ডিফেন্স ও ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট দলকেও তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। সুন্দরবন এলাকায় বড় নদীতে যারা মাছ ধরতে যান, তাঁদের রবিবারের আগে ফেরার নির্দেশ জারি হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy