বাড়তি রোজগারের আশায় সপরিবার পাড়ি দিয়েছিলেন বেঙ্গালুরু। তখনও বাংলাভাষী হওয়ার কারণে নানা রাজ্যে পরিযায়ীদের হেনস্থার অভিযোগের আবহ তেমন ছিল না। কিন্তু ২০২২ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশি সন্দেহে আচমকা এক রাতে পুলিশ তুলে নিয়ে যায় তাঁদের। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের দম্পতি পলাশ অধিকারী ও শুক্লা অধিকারী বছর দেড়েকের সন্তান-সহ প্রায় দশ মাস বেঙ্গালুরুর জেলে আটকে থাকেন। নথিপত্র দেখিয়ে জামিন মিললেও, মামলা চলছে সেখানকার আদালতে। এখনও হাজিরা দিতে হয়। দম্পতির ক্ষোভ, ‘‘স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও, স্বাধীন ভাবে বাঁচার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে!’’
জামালপুরের তেলে গ্রামে অ্যাসবেস্টসের চালের দু’কামরার বাড়ি পলাশদের। বছর দশেক আগে সরকারি অনুদানে এই বাড়ি তৈরি করেন তাঁরা। ২০২২ সালের জুন মাসে বাবা পঙ্কজ, মা সবিতা এবং স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বেঙ্গালুরু পাড়ি দেন পলাশ। তাঁদের গ্রাম থেকে আরও কয়েক জন যান সেখানে কাজ করতে। দৈনিক শ’তিনেক টাকা মজুরিতে হোটেল-সহ নানা প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য বাছাইয়ের কাজ করতেন তাঁরা। কিন্তু মাস দেড়েকের মাথায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে বেঙ্গালুরুর ভারথুর থানার পুলিশ তাঁদের আটক করে। বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হলেও, গ্রেফতার করা হয় পলাশ ও শুক্লাকে।
তেলে গ্রামের বাসিন্দা সুনীল অধিকারী বলেন, ‘‘ওঁদের সঙ্গে আমাকেও আটক করেছিল পুলিশ। তবে ছেড়ে দেয়। পলাশের বাবা-মায়ের নথিপত্র দেখে ছেড়ে দেওয়া হলেও, ওদের স্বামী-স্ত্রীকে কোন যুক্তিতে গ্রেফতার করা হল, এখনও অজানা!’’ পলাশেরা জানান, জমির দলিল, পরচা, পুলিশ-প্রশাসনের দেওয়া স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার শংসাপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়। আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ডের সঙ্গে ওই সব নথি যাচাই করা হয়। বেঙ্গালুরুর পুলিশ জামালপুরে তদন্তেও আসে। তারা বেঙ্গালুরুর মেট্রোপলিটন আদালতে রিপোর্ট জমা দেয়। তার পরে, জামিন মেলে। পলাশেরা বন্দি থাকাকালীন, তাঁদের জন্য আইনি লড়াই করার মাঝেই মৃত্যু হয় পঙ্কজের।
বছর দেড়েক আগে তাঁদের গ্রামের অনেকে আধার কার্ড বাতিলের চিঠি পেয়েছিলেন। পলাশেরা তা পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের নাগরিকত্ব নিয়ে নিশ্চয় প্রশ্ন নেই। তাই চিঠি আসেনি।’’ তবে বেঙ্গালুরুতে ওই ঘটনার পরেও, পেটের দায়ে সেখানেই থেকে গিয়েছিলেন তাঁরা। সম্প্রতি ধরপাকড়ের খবর শুনে গ্রামে ফিরেছেন। ওই গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের কৃষ্ণা সরকার বলেন, ‘‘জন্মের শংসাপত্র থেকে জমির পরচা— সব থাকলেও ওঁদের হয়রান করা হয়েছে।’’ দম্পতি বলেন, ‘‘রাতে ভাল ঘুম হয় না এখনও। জানি না কবে এই সঙ্কট কাটবে!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)