E-Paper

দিদির বাড়ি যেতে গিয়ে রাজনৈতিক তাণ্ডবের বলি ভাই

রাজু এলাকায় শাসক দল তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তবে পরিবারের দাবি, ভাঙড়ের গোলমালে রাজু জড়িত নন। তিনি মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে চিনাপুকুর থেকে ঘটকপুকুরে দিদি হাসিনা বিবির বাড়ি যাচ্ছিলেন।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩ ০৭:৪৪
An image of Boys

(বাঁ দিকে) রাজু মোল্লা এবং হাসান আলি মোল্লা। —ফাইল চিত্র।

মায়ের উপরে রাগ হলে ভরসা দিদি। গরিব পরিবারে ভাই ও দিদির মধ্যে বরাবরই সুন্দর বোঝাপড়া। সেই দিদির বাড়িতে যাওয়ার সময়েই রাজনৈতিক গোলমালের মধ্যে পড়ে মৃত্যু হল ভাইয়ের। এই ঘটনায় স্তম্ভিত পরিবার।

অন্য একটি ঘটনায় রাতে ফোনে কথা বলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সংঘর্ষের জেরে ভাইয়ের মৃত্যু দেখলেন এক দাদা। আমপানে ঘর না পেয়ে বিরোধী রাজনীতির দিকে ঝুঁকেছিলেন ভাই।

আচমকা গোলমালে সেই ভাইয়ের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না দাদা। ওই রাতেই বারুইপুর পুলিশ জেলার এএসপি এবং তাঁর দেহরক্ষীও গুলিবিদ্ধ হন।গণনা চলাকালীন মঙ্গলবার রাতে ভাঙড়ের কাঁঠালিয়া হাইস্কুল গণনা কেন্দ্রের কাছে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তিন জনের। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত তিন জনের নাম রেজাউল গাজি, রাজু মোল্লা (৩০) ও হাসান আলি মোল্লা (২৬)। রেজাউলের মৃত্যু হয়েছে ঘটনাস্থলেই। ভাঙড়ের শোনপুরের চিনাপুকুরের বাসিন্দা রাজু এবং কাঁঠালিয়ার বাসিন্দা হাসানকে মঙ্গলবার রাতে কলকাতার দু’টি হাসপাতালে আনা হয়। রাজু হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মারা যান। হাসপাতালে আসার এক ঘণ্টা পরে মৃত্যু হয় হাসানের।

রাজু এলাকায় শাসক দল তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তবে পরিবারের দাবি, ভাঙড়ের গোলমালে রাজু জড়িত নন। তিনি মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে চিনাপুকুর থেকে ঘটকপুকুরে দিদি হাসিনা বিবির বাড়ি যাচ্ছিলেন। হাসিনা বাড়িতে ভাইয়ের জন্য অপেক্ষাও করছিলেন। রাতভর অপেক্ষার পরেও যাননি রাজু। বুধবার ভোরে কাশীপুর থানার পুলিশের থেকে শ্যালকের মৃত্যুর খবর পান বলে জানিয়েছেন রাজুর ভগিনীপতি সইফুদ্দিন মোল্লা। তিনি বলেন, ‘‘রাজু আমার একমাত্র শ্যালক। ওর মা লোকের বাড়ি কাজ করেন। আমার শাশুড়ির সঙ্গে ঝগড়া হলেই রাজু আমাদের বাড়ি চলে আসত।’’ এ দিন এন আর এস হাসপাতালের মর্গের সামনে রাজুর শোকে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখা যায় দিদি হাসিনাকে।

কাঁদতে কাঁদতে হাসিনা বলছিলেন, ‘‘আর কত গোলমাল হবে? ভাই তো আর ফিরে আসবে না। মা কাকে নিয়ে থাকবে?’’ গুলিবিদ্ধ রাজুর দেহ রাস্তা থেকে উদ্ধার করে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে ভাঙড়ের কাশীপুর থানার পুলিশ। রাজুকে সেখানেই মৃত ঘোষণা করা হয় বলে জানা গিয়েছে।

কাঁঠালিয়া হাইস্কুলে গণনা চলাকালীন জেলা পরিষদের একটি আসন নিয়ে মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রের বাইরে গোলমাল শুরু হয়েছিল। স্থানীয়েরা জানান, কাঁঠালিয়া হাইস্কুলের বাইরে একের পর এক বোমা পড়তে থাকে। কয়েক রাউন্ড গুলিও চলে। ওই গণনা কেন্দ্রের কাছাকাছিই বাড়ি হাসান আলি মোল্লার। সক্রিয় কর্মী না হলেও আইএসএফের সঙ্গে তাঁর ভালই যোগাযোগ ছিল। আমপানে ঘর ভেঙে যাওয়ার পরেও তৃণমূল তাঁকে ঘর দেয়নি বলে অভিযোগ। তখনই হাসান আইএসএফের দিকে চলে যান।

তাঁর দাদা কাশেম আলি মোল্লার কথায়, ‘‘আমপানের পরে তৃণমূল নিজেদের লোকেদের মধ্যে ঘর বিলি করায় ভাই প্রতিবাদ করে আইএসএফে গিয়েছিল। তার পর থেকেই হুমকি ও শাসানি দেওয়া হত। তবে, ভাই খুব সক্রিয় ভাবে আইএসএফ করত না। ছেলেকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি নিয়ে আসার পরে ভাই আবার বেরিয়েছিল। তখনই ওই ঘটনা।’’ তিনি জানান, রাতেই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় হাসানকে। এক ঘণ্টার মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়। হাসানের মাথায় গুলি লেগেছিল বলে জানায় পরিবার।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে থেকেই তৃণমূল ও আইএসএফের মধ্যে সংঘর্ষ নিয়ে গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত বলে জানান মৃতদের পরিজনেরা। উত্তপ্ত ভাঙড়ের পরিস্থিতি সামাল দিতে মঙ্গলবার রাতেই সেখানে পৌঁছন ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ) আকাশ মাঘারিয়া। পাঠানো হয় আইপিএস অফিসার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীকেও। তাঁর সঙ্গেই পাঠানো হয় র‌্যাফ। ঘটনাস্থলে যান এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সিদ্ধিনাথ গুপ্তও।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Death Political Violence West Bengal Panchayat Election 2023

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy