Advertisement
E-Paper

১১ বছরেই হৃদ্‌রোগ! ডাক্তাররা দুষছেন ‘কাওয়াসাকি’কে

কোনও শারীরিক সমস্যাই বোঝা যায়নি বছর এগারোর ছটফটে ছেলের। দিব্যি স্কুলে যাচ্ছে, ক্রিকেট-ফুটবল খেলছে। হাফ-ইয়ার্লি পরীক্ষা শুরু হওয়ার ঠিক আগের দিন বিকেলে ঘটনাটা ঘটল।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:০০
হাসপাতালে কৌস্তভ। —নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালে কৌস্তভ। —নিজস্ব চিত্র।

সত্তর বছর বয়সে তার দাদু হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পেসমেকার বসেছিল। কিন্তু নাতিটি যে ক্লাস ফাইভে পড়ার সময়েই দাদুকে ছুঁয়ে ফেলবে, তা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি। ভাবার কথাও না!

কোনও শারীরিক সমস্যাই বোঝা যায়নি বছর এগারোর ছটফটে ছেলের। দিব্যি স্কুলে যাচ্ছে, ক্রিকেট-ফুটবল খেলছে। হাফ-ইয়ার্লি পরীক্ষা শুরু হওয়ার ঠিক আগের দিন বিকেলে ঘটনাটা ঘটল। গত ৩ সেপ্টেম্বর, রবিবার। হঠাৎ প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট, গলগল করে ঘাম, বুকে ব্যথা। বাবা-মা ভাবলেন, নিশ্চয় গ্যাস-অম্বলের সমস্যা হয়েছে। বাড়ির কাছে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। ততক্ষণে ব্যথা ছড়িয়ে পড়েছে ঘাড়ে, পিঠে। সঙ্গে বমি। ইসিজি করে চিকিৎসকেরা হতভম্ব। হার্ট অ্যাটাক হয়েছে পানিহাটির বাসিন্দা ক্লাস ফাইভের কৌস্তভ দাসের। ‘করনারি আর্টারি থ্রম্বোসিস’। হৃদ্‌যন্ত্রের ডানদিকের ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধেছে।

আরও পড়ুন: রোশন কেন রাজনাথের কাছে, প্রশ্ন রাজ্যের

অ্যাপোলো গ্লেনেগলস হাসপাতালে গত ৪ সেপ্টেম্বর অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করার পরে ‘থ্রম্বো সাকশান’ পদ্ধতিতে সেই জমাট রক্ত বার করেন চিকিৎসকেরা। জানিয়েছেন, আর একটু দেরি হলেই স্টেন্ট বসাতে হতো।

কিন্তু সকলের মনেই প্রশ্ন, এইটুকু ছেলের হার্টঅ্যাটাক হলো কী করে!

যে চিকিৎসক কৌস্তভের অস্ত্রোপচার করেছেন সেই প্রকাশচন্দ্র মণ্ডল জানিয়েছেন, ছেলেটির হৃদ্‌যন্ত্রের ধমনীতে চর্বি জমে তা সরু হতে শুরু করেছিল। এখন সুস্থ হলেও সারা জীবন তাকে সুষম খাবার এবং ব্যায়াম বজায় রেখে যেতে হবে। অর্থাৎ, শিশুদের জীবনযাপনের ধারায় পরিবর্তন, জাঙ্ক ফুডে ঝোঁক এবং খেলাধুলো না-করার যে প্রবণতা নিয়ে চিকিৎসকেরা বেশ কিছুদিন ধরেই চিন্তিত এবং সরব, ঠিক সেই কারণেই ৮-১০ বছর বয়সে হৃদ্‌যন্ত্রের ধমনীতে ফ্যাট জমে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা চিকিৎসকেরা পাচ্ছেন।

তবে এর বাইরেও একটা বড় কারণ রয়েছে। যা নিয়ে এতদিন বিশেষ চর্চা হয়নি। তা হলো ‘কাওয়াসাকি ডিজিজ’। এটি এক ধরনের সংক্রমণ। শিশু হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, গত ৩-৪ বছর ধরে কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে বা চিকিৎসকের চেম্বারে ১৫ বছরের নীচের বাচ্চাদের এমনকী ৬ মাস, ১ বছরের শিশুদেরও হার্ট অ্যাটাকের কেস মিলছে, যার প্রধান কারণ হলো এই ‘কাওয়াসাকি’ রোগ।

এই রোগের কারণ এখনও অজানা। হঠাৎ হয়। কোনও পরীক্ষায় রোগটি ধরাও যায় না। চিকিৎসকেরা কিছু শারীরিক লক্ষণ দেখে রোগটি অনুমান করেন। এই রোগে জ্বর হয়। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ লাল হয়ে ফুলে যায়। এর থেকে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা প্রবল হয়।

পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কার্ডিওলজিস্ট কুণাল সরকারের মতো অনেকেই জানান, তাঁরা এই ধরনের সংক্রমণ থেকে শিশুদের হার্ট অ্যাটাকের কেস পাচ্ছেন। কয়েক বছর আগে কুণালবাবু ১০ বছরের এক রোগিনীকে পেয়েছিলেন, যার করোনারি আর্টারি বাইপাস করতে হয়েছিল। কয়েক সপ্তাহ আগে ভুটান থেকে ৫ মাসের একটি মেয়েকে নিয়ে পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট নুরুল ইসলামের কাছে এসেছিলেন অভিভাবকেরা। তারও কাওয়াসাকি সংক্রমণ থেকে হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। কার্ডিওলজিস্ট অভিষেক পোদ্দারের কথায়, ‘‘৭-৮ বছর আগেও এই রোগের কথা বেশির ভাগ লোক জানতেন না। এখন আমরা মাসে ৫০-৬০টি করে কাওয়াসাকি রোগে আক্রান্ত শিশু চিহ্নিত করছি। এদের ২৫-৩০%-ই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।’’

Heart disease heart patient minor হৃদরোগ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy