Advertisement
E-Paper

মাথা থেঁতলানো, বস্তাবন্দি দেহ মিলল হাওড়ার ভ্যাটে

ছেলেধরা বা চোর সন্দেহে গণপিটুনির একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে হাওড়ায়। রবিবার রাতে এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে মারধরের পরের দিনই পাওয়া গেল অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মাথা থেঁতলানো বস্তাবন্দি মৃতদেহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৩৭
হাওড়া ব্রিজ সংলগ্ন এই ভ্যাটেই মেলে এক যুবকের দেহ। দেহটি নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ (ইনসেটে)। সোমবার সকালে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

হাওড়া ব্রিজ সংলগ্ন এই ভ্যাটেই মেলে এক যুবকের দেহ। দেহটি নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ (ইনসেটে)। সোমবার সকালে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ছেলেধরা বা চোর সন্দেহে গণপিটুনির একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে হাওড়ায়। রবিবার রাতে এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে মারধরের পরের দিনই পাওয়া গেল অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মাথা থেঁতলানো বস্তাবন্দি মৃতদেহ। তাঁর আনুমানিক বয়স পঁয়তাল্লিশ বছর। দেহটি উদ্ধার হয় হাওড়া ব্রিজ সংলগ্ন সিপিটি কোয়ার্টার্সের উল্টো দিকের একটি ভ্যাট থেকে। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি সম্ভবত ভবঘুরে ছিলেন। তাঁকে মাথা থেঁতলে খুন করা হয়েছে। দেহটি পাঠানো হয়েছে ময়না-তদন্তে। এ ক্ষেত্রেও ওই ব্যক্তি গণপিটুনির শিকার কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এ দিকে, সোমবারই গুজব রটানোর বিপদ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে একটি বিশেষ সভার আয়োজন করেছিল হাওড়া সিটি পুলিশ। সেখানে গুজব ছড়ানো রুখতে সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যায় হাওড়া থানা এলাকার চিন্তামণি দে রোডে এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে বেধড়ক মারধর করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ, ওই যুবক এক শিশুকন্যাকে খাবারের লোভ দেখিয়ে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ মেয়েটি চিৎকার শুরু করে। ওই যুবক পালানোর চেষ্টা করলে তাঁকে ধরে ফেলেন স্থানীয়েরা। শুরু হয় মারধর। খবর পেয়ে হাওড়া থানার পুলিশ গিয়ে অভিযুক্তকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম শেখ ইলিয়াস। বছর তিরিশের ওই যুবকের বাড়ি টিকিয়াপাড়া এলাকার জেলিয়াপাড়ায়। পুলিশের দাবি, ওই যুবকের বিরুদ্ধে চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে।

এই ঘটনার পরের দিন, সোমবার সকালেই হাওড়া ব্রিজের কাছে সিপিটি কোয়ার্টার্সের উল্টো দিকের একটি ভ্যাট থেকে মাথা থেঁতলানো একটি বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, সকালে ওই ভ্যাট থেকে আবর্জনা তুলতে গিয়েছিলেন হাওড়া পুরসভা নিযুক্ত একটি ঠিকাদার সংস্থার সাফাইকর্মীরা। তখনই দেহটি ভ্যাটে পড়ে থাকতে দেখা যায়। আতঙ্কিত কর্মীরা খবর দেন তাঁদের ঠিকাদারকে। এর পরে খবর যায় স্থানীয় গোলাবাড়ি থানায়। তড়িঘড়ি পুলিশ ছুটে আসে। আসেন পুলিশের পদস্থ কর্তারাও।

পুলিশ জানায়, মৃতের মাথায় গভীর ক্ষত রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ নিশ্চিত, ওই ব্যক্তিকে মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয়েছে। ময়না-তদন্তেই গোটা বিষয়টি পরিষ্কার হবে। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। সাম্প্রতিক কালে হাওড়ায় একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা ঘটলেও এক জনেরও মৃত্যু হয়নি। এ দিন তাই মাথা থেঁতলানো দেহ উদ্ধারের খবরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। পুলিশও নড়েচড়ে বসে। বিশেষ করে, যে গোলাবাড়ি থানা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে, এ দিন সেই থানা এলাকাতেই গুজব নিয়ে পুলিশের বৈঠক থাকায় বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়ে যায়।

হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি গণপিটুনির শিকার কি না, তা পরিষ্কার নয়। তবে সমস্ত সিসি ক্যামেরার ছবি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

এ দিন সন্ধ্যায় গুজব নিয়ে পুলিশের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পিলখানার কারবালা মসজিদের ইমাম আবদুল হামিদ থেকে ক্রাইস্ট চার্চ অব হাওড়ার ফাদার ভিক্টর ডেভিড এবং জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা। সকলেই আহ্বান জানান, কোনও অচেনা লোককে রাতে এলাকায় দেখলেই ছেলেধরা ভাববেন না। প্রয়োজনে পুলিশকে খবর দিন। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার বিশাল গর্গ বলেন, ‘‘গুজব রুখতে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকে প্রচার, থানায় থানায় বৈঠক, লিফলেট বিলি ছাড়া আরও একটি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ বার সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Death Dead Body Vat Howrah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy