বেশি সময় পাইনি প্রস্তুতির জন্য। সন্ধ্যায় বই নিয়ে আমায় বসতে দেখে আমার ৮ বছরের মেয়ের প্রশ্ন, বাবা তুমি তো স্কুলে পড়াতে যাও। তোমাকেও পরীক্ষা দিতে হবে? মেয়ের পাশে বসেই পড়াশোনা করেছি শেষ কয়েক দিন। ওর এই সরল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি। এ পরীক্ষায় পাশ না-করলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে, ৩১ ডিসেম্বর থেকে আমার আর শিক্ষকতার চাকরি থাকবে না। কী করে সংসার চালাব? কার দোষে আমায় এ ভাবে ভুগতে হচ্ছে?
পরীক্ষা ভাল দিলেও এ সব ক্ষেত্রে কী হবে বলা কঠিন। অনেকটা ওয়ান ডে ক্রিকেটের মতো। যাঁরা আরও ভাল দিলেন, তাঁরা উতরে যাবেন। প্রথমবারের পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি আমাদের থেকে বেশি ভাল ছিল। তাই পাশ করবই হলফ করে বলা যাবে না। খালি মনে হচ্ছে, ভবিষ্যৎটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। এসএসসির দাগিদের তালিকায় আমার নাম নেই। দাগিদের ছেঁটে ফেলা হয়েছে।তাহলে তো চাল কাঁকর আলাদা হয়ে গেল। তবু কেন ফের পরীক্ষায় বসতে হল আমাদের? অসম্ভব মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে আছি। শারীরিক কষ্টটাও নেহাত কম নয়। সাত বছর শিক্ষকতা করার পরেও রাজ্য এবং বিচার ব্যবস্থার কাছ থেকে এই যন্ত্রণার উপহার পেলাম। রাজ্যসরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলছে। ওএমআর শিটেরকার্বন কপি দিয়েছে। এই সরকারের মুখে স্বচ্ছতা কথাটা এখন হাস্যকর লাগছে। র্যাঙ্ক জাম্প, সাদা খাতা জমা দেওয়া কত রকমের না দুর্নীতি হয়েছে ২০১৬ সালের এসএসসিতে। আমার পক্ষে এই সরকারকে বিশ্বাসকরাই মুশকিল।
গত দেড় বছর ধরে রাস্তায় ছিলাম। বিকাশ ভবনে রাতের পর রাত জেগেছি। কসবার শিক্ষা ভবনের অভিযানে বুকে, পেটে পুলিশের লাথি খেয়েছি। সেই যন্ত্রনা বয়ে বেড়াচ্ছি। জীবনের এই পর্ব কোনওদিন ভুলব না।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)