Advertisement
E-Paper

‘অক্সিজেন মাত্রা দেখেনি বেসরকারি হাসপাতাল’

কিছু ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেনের মাত্রা কমলেও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ দৃশ্যমান হচ্ছে না। একেই ‘হ্যাপি হাইপোক্সিয়া’ বলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২০ ০৪:১৭
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

আটান্ন বছরের করোনা আক্রান্ত প্রৌঢ়ার অক্সিজেনের মাত্রা কমলেও উপসর্গ দেখে তা বোঝার উপায় নেই। যার প্রেক্ষিতে রাসবিহারীর বাসিন্দা ওই প্রৌঢ়াকে সল্টলেকের বেসরকারি কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করেন তাঁর পরিজনেরা। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন নজরদারির অভাবে প্রৌঢ়ার দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার অভিযোগ উঠল। যার প্রেক্ষিতে ৩৬ ঘণ্টা পরই বেসরকারি হাসপাতাল থেকে মা’কে ছুটি করিয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নিলেন ছেলে বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায়।

এ দিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ জানান, রাজ্যের করোনা পজ়িটিভ রোগীদের মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে আক্রান্ত দেরিতে হাসপাতালে পৌঁছনোয় মৃত্যু হয়েছে। মুখ্যসচিবের কথায়, ‘‘দ্রুত অক্সিজেনের মাত্রা কমার পরে যখন হাসপাতালে আনা হচ্ছে, তখন আর বাঁচানোর সুযোগ থাকছে না।’’ অক্সিজেনের মাত্রা নব্বইয়ের কম হলেই সেফ হোম বা কোভিড হাসপাতালে রোগীকে আনা উচিত বলে পরামর্শ দেন তিনি।

সেই দিক থেকে সচেতন নাগরিকের পরিচয় দিয়েছিলেন বিক্রমবাবু। আক্রান্তের ছেলে জানান, গত রবিবার তাঁর মায়ের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। ছেলে জানিয়েছেন, রোগীর কোনও শারীরিক সমস্যা সে ভাবে ছিল না। কিন্তু অক্সিমিটারে মাপতেই দেখা যায় দেহে অক্সিজেনের মাত্রা ৮৮ হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসকদের পরিভাষায় যা ‘হ্যাপি হাইপোক্সিয়া’ নামে পরিচিত।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমলে সাধারণত শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেনের মাত্রা কমলেও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ দৃশ্যমান হচ্ছে না। একেই ‘হ্যাপি হাইপোক্সিয়া’ বলে। যার প্রেক্ষিতে রবিবার বিকালে সল্টলেক আমরিতে প্রৌঢ়াকে ভর্তি করিয়ে আশ্বস্ত হন ছেলে। কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি বলে অভিযোগ। বিক্রমবাবুর বক্তব্য, পরের দিন বিকেলে ভিডিয়ো কলিংয়ের সময় তিনি দেখেন তাঁর মা’কে জেনারেল বেডে রাখা হয়েছে। তাঁর দাবি, ‘হ্যাপি হাইপোক্সিয়া’র রোগীকে মনিটরিং বেডে রাখা হবে বলে জানানো হয়েছিল। কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি। এই অবস্থায় সে দিনই সন্ধ্যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে রোগীর কাছে একটি মোবাইল এবং অক্সিমিটার পাঠিয়ে দেন বিক্রমবাবু। অক্সিমিটার কেন? ছেলের বক্তব্য, ‘‘ভিডিয়ো কলে মা বলেছিল, নিয়ম করে অক্সিজেন মাপা হচ্ছিল না। তাই বাড়ির অক্সিমিটার দিয়েছিলাম।’’

রাতে মোবাইলে ভিডিয়ো কলে মায়ের অবস্থা দেখে তাঁকে ছুটি করানোর সিদ্ধান্ত নেন ছেলে। তিনি বলেন, ‘‘কথা বলে মাকে অবিন্যস্ত লাগছিল। অক্সিমিটার ব্যাগ থেকে বার করে অক্সিজেন মাপতে বললেও মা তা করতে পারছিল না। অথচ বাড়িতে নিজেই এটা করত। অনেকক্ষণ পরে আঙুলে যন্ত্রটা দিলে দেখি অক্সিজেনের মাত্রা কমে ৮৫ হয়ে গিয়েছে!’’ এরপর বিষয়টি হাসপাতালের নজরে আনা হয়। পরের দিন চিকিৎসকেরা অনুমতি না দিলেও মাকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন বিক্রম। এখন বাড়িতেই তাঁর চিকিৎসা চলছে। বিক্রমের কথায়, ‘‘হাসপাতালে থাকাকালীন মায়ের দেহে অক্সিজেনের মাত্রা ৮৫ হয়ে গেল কী ভাবে! শুধু একটা খাট-বিছানা দেওয়ার জন্য তো হাসপাতাল নয়? বাড়িতে আইসোলেশনে রাখার সুযোগ থাকলেও হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম যাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়।’’ কিন্তু সোমবার রাতের অভিজ্ঞতা সেই প্রত্যাশা পূরণ করেনি বলে দাবি ছেলের।

রোগীর বাড়ির অভিযোগ উড়িয়ে আমরি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রতি তিন ঘণ্টা অন্তর রোগীদের অক্সিজেনের মাত্রা মাপা হয়। হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী প্রৌঢ়ার দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কখনওই তিরানব্বইয়ের নীচে নামেনি।

Coronavirus in West Bengal Oximeter AMRI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy