Advertisement
E-Paper

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, বিশেষ বেঞ্চ হয়ে সুপ্রিম কোর্ট! মমতার মন্ত্রিসভার তৈরি শূন্যপদ ঘিরে তিন বছরের মোকদ্দমাপর্ব

এসএসসিতে নিয়োগের জন্য ২০২২ সালে অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি হয়। ওই শূন্যপদ তৈরির পর থেকেই বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করে। হাই কোর্টের একক বেঞ্চ থেকে বিশেষ বেঞ্চ হয়ে মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ পর্যন্ত।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:১২
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করল না সুপ্রিম কোর্ট।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করল না সুপ্রিম কোর্ট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

সূত্রপাত ২০২২ সালে। এসএসসিতে নিয়োগের জন্য অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির পর থেকে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি বৈধ কি না, তা নিয়ে প্রায় তিন বছর ধরে চলল মামলা-মোকদ্দমাপর্ব। মামলা শুনল একাধিক বেঞ্চ। প্রথমে হাই কোর্টের একক বেঞ্চ, পরে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশে হাই কোর্টের বিশেষ বেঞ্চ, শেষে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।

স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় গত সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য। এ বার এসএসসিতে অতিরিক্ত শূন্যপদ মামলাতেও রায় জানাল শীর্ষ আদালত। তবে এ বারের রায়ে কিছুটা স্বস্তি মিলল রাজ্যের। এসএসসিতে অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্তে কোনও হস্তক্ষেপ করেনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ।

২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালে কলকাতা হাই কোর্টে বেশ কিছু মামলা দায়ের হয়েছিল। মামলা ওঠে হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। ২০২১ সালে ওই দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি মামলায় প্রথম সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। পরে সিবিআই তদন্তের প্রেক্ষিতে কিছু ‘বেআইনি’ নিয়োগ বাতিলেরও নির্দেশ দেন তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। হাই কোর্টের ওই নির্দেশের পরে ২০২২ সালে ছ’হাজারেরও বেশি অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা দফতর। ওই বছরের ৫ মে ৬৮৬১টি অতিরিক্ত শূন্যপদ (সুপারনিউমেরারি পোস্ট) তৈরিতে অনুমোদন দেয় রাজ্য মন্ত্রিসভা।১৯ মে এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়।

অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির পর থেকেই তা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করে। অভিযোগ ওঠে, ‘বেআইনি নিয়োগ’ বাঁচানোর জন্যই সুপারনিউমেরারি বা অতিরিক্ত পদ তৈরি করা হয়েছিল। ওই বছরে তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় অতিরিক্ত শূন্যপদের বিজ্ঞপ্তি আটকে দেন। এ বিষয়ে সিবিআই তদন্তেরও নির্দেশ দেন তিনি। পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এসএসসি সংক্রান্ত মামলার শুনানির জন্য নতুন বেঞ্চ গঠিত হয়। ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির বিশেষ বেঞ্চে এসএসসি সংক্রান্ত যাবতীয় মামলার শুনানি শুরু হয়। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ এই তিন মাসে ১৭টি শুনানি হয় বিশেষ বেঞ্চে। অতিরিক্ত শূন্যপদের মামলাটিও ছিল ওই বিশেষ বেঞ্চেই। শুনানিপর্ব শেষে গত বছরের ২২ এপ্রিল রায় ঘোষণা করে হাই কোর্টের বিশেষ বেঞ্চ। রায়ে বলা হয়, অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না।

বিচারপতি বসাকের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে ২০১৬ সালের এসএসসিতে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াকেই বাতিল করে দেওয়া হয়। বলা হয়, নিয়োগ প্রক্রিয়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪ এবং ১৬ লঙ্ঘন করেছে। তাই পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে রায়ে বলা হয়, অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরিতে যাঁরা যুক্ত (মন্ত্রিসভা), তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারবে সিবিআই। প্রয়োজনে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা যাবে।

হাই কোর্টের বিশেষ বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। ২০২৪ সালের ২৪ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। এর পরে এই মামলায় আরও অনেক পক্ষ যুক্ত হয়। ওই মাসেই ২৯ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি প্রথম শুনানির জন্য ওঠে। প্রথম শুনানির দিনই শীর্ষ আদালতের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পার্দিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না। পরের মাসে (৭মে) সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির ক্ষেত্রে রাজ্যের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আপাতত সিবিআই তদন্ত করতে পারবে না। হাই কোর্টের বিশেষ বেঞ্চের রায়ের উপরেও স্থগিতাদেশ দেয় শীর্ষ আদালত। গত বছরের জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, এই মামলায় প্রধান পাঁচটি পক্ষের বক্তব্য শোনা হবে। এই প্রধান পাঁচটি পক্ষ হল— রাজ্য সরকার, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, হাই কোর্টের মূল মামলাকারীরা, হাই কোর্টের নির্দেশে যাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে ও সিবিআই।

এসএসসি সংক্রান্ত মামলা মোট ২০ বার শুনানির জন্য ওঠে সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে মামলার শুনানি শেষ হয় গত ১০ ফেব্রুয়ারি। ওই দিনই শুনানিপর্ব শেষ করে রায় স্থগিত রাখে আদালত। এত দিন এসএসসির ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার সঙ্গেই অতিরিক্ত শূন্যপদ মামলার শুনানি চলেছিল। তবে গত সপ্তাহে ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় রায় ঘোষণা করেছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। ওই সময়েই জানানো হয়, অতিরিক্ত শূন্যপদের বিষয়টি মঙ্গলবার শোনা হবে। সেই মতো আজ মামলাটি উঠলে হাই কোর্টের নির্দেশকে খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরিতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল। রাজ্যপালের অনুমোদনও নেওয়া হয়েছিল। সেই কারণে আদালতের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই।

Supreme Court Mamata Banerjee West Bengal government SSC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy