Advertisement
০৩ মে ২০২৪
TET Examinations

ছ’বছরে চাকরি হয়নি, মৃত্যুর পরেও লড়াই টেট উত্তীর্ণের পরিবারের

প্রাথমিকের টেট-এর আগে পুরনো কথা আর মুনমুনের চাকরি না-পাওয়ার আক্ষেপই বার বার উঠে এসেছে তাঁর পরিবারের লোকজনের মুখে।

মুনমুনের ছবির সামনে মেয়েকে পড়াচ্ছেন সুব্রত।

মুনমুনের ছবির সামনে মেয়েকে পড়াচ্ছেন সুব্রত। —নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
জামালপুর শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:০৭
Share: Save:

২০১৪ সালে টেট পাশ করেন। দু’বার মৌখিক পরীক্ষায় ডাক পেয়েও চাকরি পাননি। নিয়োগের দাবিতে কলকাতায় আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন। আড়াই বছর আগে শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই মারা যান পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের মুনমুন ঘোষ। তাঁর চার বছরের মেয়ে এখন স্থানীয় একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পড়াশোনা শিখছে। মুনমুনের শাশুড়ি কল্পনা ঘোষ একদা তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন। স্বামী সুব্রতও দলের কাজ করতেন। সুব্রত এখন বলেন, “চাষবাস করে সংসার চালাই। স্ত্রীর স্বপ্ন যাতে মেয়ে পূরণ করতে পারে, সে জন্য লড়াই করছি।’’

আজ রবিবার, প্রাথমিকের টেট-এর আগে পুরনো কথা আর মুনমুনের চাকরি না-পাওয়ার আক্ষেপই বার বার উঠে এসেছে তাঁর পরিবারের লোকজনের মুখে।

মুনমুনের বাপের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানেরই মন্তেশ্বরের উজানা গ্রামে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পাশ করে বিএড করেন তিনি। এরই মধ্যে জামালপুরের জাঙ্গীপুর গ্রামের সুব্রতর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ২০২০ সালে মেয়ে হয় তাঁদের। সুব্রত বলছিলেন, “আমি মুনমুনের মতো শিক্ষিত নই। আমাদের আর্থিক অবস্থাও ভাল নয়। বাবা আর আমি মিলে চার বিঘা জমিতে ফসল ফলিয়েই সংসার টানছি।’’ ২০১৬ ও ২০২১ সালে প্রাথমিকে নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায় ডাক পেয়েছিলেন মুনমুন। পরিবারের কথায়, আশা ছিল চাকরিটা হয়ে যাবে। আর চাকরি পেলে মেয়েটাকে ভাল করে মানুষ করতে পারবেন তাঁরা। কিন্তু তা হয়নি।

২০২১ সালের ১৩ জুলাই মাত্র ৩০ বছর বয়সে মারা যান মুনমুন। পরিবারের দাবি, করোনার উপসর্গ নিয়ে বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমে ১৫ দিন ভর্তি ছিলেন তিনি। মেয়ের বয়স তখন দেড়। কল্পনা বলেন, “বৌমা চাকরি পেলে ভাল স্কুলে পড়তে পেত নাতনি। কিন্তু আমাদের সেই ক্ষমতা নেই।’’

২০১৮ সালে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য হন কল্পনা। সুব্রতও দলের কাজ করতেন। আত্মীয়দের দাবি, বেকারদের জন্য তৃণমূল সরকার কাজের ব্যবস্থা করলে মুনমুনের মতো অনেক পরিবারের আক্ষেপ থাকত না। মুনমুনের বাবা বিকাশ ঘোষ বলেন, “ছোট থেকেই মেয়ের শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন ছিল। বিয়ে, তার পরে ওর চিকিৎসায় প্রায় চার লক্ষ টাকা খরচ হয়। ভেবেছিলাম মেয়ে ফিরে এলে, চাকরি পেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিছুই ঠিক হল না।’’ মাঠে যাওয়ার আগে, চার বছরের মেয়েকে পড়ান সুব্রত। তাঁর কথায়, “টেট উত্তীর্ণ হয়েও শিক্ষিকা হতে পারেনি মুনমুন। যত কষ্টই হোক না কেন, মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করতেই হবে।’’

তৃণমূল বিধায়ক (জামালপুর) অলোক মাঝির আশ্বাস, “সুব্রতর মেয়ের পড়াশোনার বিষয়ে সব সময় পাশে থাকব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TET Examinations West Bengal school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE