মায়ের কোলে ছোট্ট মমতা। শুক্রবার বর্ধমানের একচিলতে ঘরের দরজায়। নিজস্ব চিত্র।
ধর্মতলা পৌঁছতে তখনও অনেকটা বাকি। আচমকা প্রসব যন্ত্রণা শুরু। অগত্যা বাসের পিছনের আসনে চাদর পেতে শোওয়ানো হয়েছিল অন্তঃসত্ত্বাকে। সেখানেই জন্ম নিয়েছিল কন্যা সন্তান!
২০১৯-র ২১ জুলাইয়ের সেই কথা ভুলতে কি পারেন বর্ধমানের রেখা সরকার? মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে যাওয়ার পথে জন্ম হওয়ায় পরিচিতেরা সেই মেয়ের নাম রেখেছিলেন মমতা। সকলে অবশ্য ডাকে ‘একুশি’ বলেই। রেখা বলেন, “শুনেছিলাম, দিদি নিজে নামটা দিয়েছিলেন। তাই একুশি বলেই ডাকি।” বৃহস্পতিবার ২১ জুলাই ছিল একরত্তির জন্মদিন। শুক্রবার সকালেও ছোট নীলপুরের আমবাগান এলাকায় গৃহহীনদের আশ্রয় প্রকল্পে ইটের পাঁজা বেরনো ঘরের দরজায় ঝুলতে দেখা গেল লাল, নীল বেলুন। বাবা অধীর ভোরে উঠে মেয়ের জন্য সাজিয়ে ছিলেন। বললেন, “আর তো কিছু পারিনি। কয়েকটা বেলুন এনেছিলাম। যাতে মেয়েটা দেখে খুশি হয়।” জন্মদিনেও মা-বাবার কোলে করে ট্রেনে চেপে ধর্মতলার পৌঁছে ছিল ছোট্ট মমতা।
রাস্তায় তৃণমূলের দেওয়া ভাত, ডালেই পেট ভরেছে একরত্তির। রাতে বাড়ি ফিরে ঘুম। জন্মদিনের উপহার বলতে ‘কলকাতা যাওয়া’। রেখা বলেন, “জন্ম থেকে পাউডার দুধ খেয়েই বড় হল। পয়সা কোথায় যে কিছু কিনে দেব।”
একচিলতে ঘরের টালির ফাঁক দিয়ে ঢোকা সূর্যের আলোয় চোখ চিকচিক করে অধীরের। জানালেন, আগে মাসিক ১২০০ টাকার ভাড়ায় আরও ছোট একটা ঘরে থাকতেন। একুশির জন্মের পরে, স্থানীয় তৃণমূল কর্মী অনন্ত পাল, অরূপ দে, সুজয় বিশ্বাসেরা নতুন ঘরের বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন দিনমজুর অধীরকে। ১০ বছরের ছেলে আর একুশিকে নিয়ে সেখানেই সংসার রেখার। বললেন, “ওই দাদারা স্বামীকে ভ্যানরিকশার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তাতেই ইট, বালি বয়ে যতটুকু রোজগার হয়।”
দুষ্টু হলেও বায়না নেই একুশির। খেলনা বলতে ছেঁড়া টেডিবেয়ারআর প্লাস্টিকের পুতুল। রেখা জানালেন, খাওয়াতেও ঝামেলা নেই মেয়ের। এ দিন তাই খাদ্যসাথী প্রকল্পে পাওয়া চালের ভাত আর একটা তরকারি রেঁধেছেন শুধু। মাংসতো হালেকালে।
বাসে প্রসবের পরে মা ও সন্তানকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিতে ব্যবস্থা করেছিলেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন সভাপতি প্রিয়ব্রত ঘোষ। বললেন, “ওঁরা গরিব, কিন্তু একনিষ্ঠ কর্মী। যতটা সম্ভব ওঁদের পাশে থাকি।” আর ছোট্ট মমতার বাবা-মা বলছেন, “স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভান্ডার তো দিদির জন্যই পেয়েছি। তবে নির্দিষ্ট রোজগার থাকলে ভাল হত। দিদির কি আর একুশিকে মনে আছে!’’ দরজায় দাঁড়িয়ে অধীর জানান, ওঁদের স্বপ্ন, একুশি অনেক শিক্ষিত হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াবে।
শ্রাবণের তপ্ত হাওয়ায় দুলে ওঠে রঙিন বেলুন। একুশি বলে ওঠে, “আমার বেলুন!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy