E-Paper

আধার দ্বাদশ নথি হলেও তাতে স্বস্তি নেই বঙ্গে

খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পরে গত ৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, খসড়া তালিকায় কেউ যদি নিজের নাম যোগ করতে চান, তা হলে তিনি নথি হিসেবে আধার জমা দিতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন প্রথমে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে উদাহরণস্বরূপ ১১টি নথির তালিকা প্রকাশ করেছিল।

প্রেমাংশু চৌধুরী, চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:১৫

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বিহারের পরে পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় পরিমার্জনের (এসআইআর) সময় আধার কার্ডকে শুধুমাত্র পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবেই গণ্য করা হবে। নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে নয়। নির্বাচন কমিশন সূত্রের এমনই দাবি। যার অর্থ, পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর হলে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে আধার বাদে অন্য কোনও নথি দিতে হবে।

বিহারের এসআইআর-এ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর, মহাষ্টমীর দিন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হতে চলেছে। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পরে গত ৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, খসড়া তালিকায় কেউ যদি নিজের নাম যোগ করতে চান, তা হলে তিনি নথি হিসেবে আধার জমা দিতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন প্রথমে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে উদাহরণস্বরূপ ১১টি নথির তালিকা প্রকাশ করেছিল। তার মধ্যে আধার কার্ড ছিল না। সুপ্রিম কোর্ট ‘দ্বাদশ নথি’ হিসেবে আধার কার্ডকে এই তালিকায় যোগ করতে বলে।

সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পরে নির্বাচন কমিশন কি গোটা দেশে এসআইআর-এর সময় আধার কার্ড গ্রাহ্য করবে না বলতে পারে? কংগ্রেস নেতা তথা এসআইআর মামলার অন্যতম আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির যুক্তি, ‘‘উত্তর হল, কোনও ভাবেই বলতে পারে না। বিহারের ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য, তা অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এক-এক রাজ্যে এক-এক নিয়ম চলতে পারে না। ফলে অন্য রাজ্যে নির্বাচন কমিশন আধার গ্রহণ করবে না, এটা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।’’

নির্বাচন কমিশনের কর্তারা এই যুক্তি মানছেন না। তাঁদের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট আধারকে দ্বাদশ নথি হিসেবে নথির তালিকায় যোগ করতে বলেছে। কিন্তু একই সঙ্গে বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ স্পষ্ট করে দিয়েছে, আধার নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। ২০১৬-র আধার আইন অনুযায়ী আধার কার্ড আইনত নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। ১৯৫০ সালের জন প্রতিনিধিত্ব আইনের ২৩(৪) ধারা অনুযায়ী আধার কার্ড পরিচয়ের অন্যতম প্রমাণ বলে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে। পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবেই সুপ্রিম কোর্ট আধার কার্ডকে দ্বাদশ নথি হিসেবে তালিকায় যোগকরতে বলেছে।

সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশের পরে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল সন্তোষ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু রাজ্যে বহু আধার কার্ডের বৈধতা নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে। অসাধু উপায়ে, অর্থের বিনিময়ে আধার কার্ড পাইয়ে দেওয়ার ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে বিরোধীদের তরফে। অভিযোগ, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের অনেক নাগরিক, যাঁদের সে দেশের পাসপোর্টও রয়েছে, তাঁরাও আধার এবং এ দেশের ভোটার কার্ড পেয়ে গিয়েছেন। বিরোধীদের প্রশ্ন, আধার কার্ডকে পরিচয়পত্র হিসেবে গ্রহণ করলে ভোটার তালিকায় বেনো জল থেকে যাবে না তো? কমিশন সূত্রের বক্তব্য, শীর্ষ আদালত সেই দিকটিও খেয়াল রেখেছে। কোর্টের নির্দেশে বলা হয়েছে, আধার নিয়ে সংশয় তৈরি হলে তা যাচাই করে নিতে পারবে কমিশন।

অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির বক্তব্য, ‘‘এসআইআর-এর মামলায় আধার কার্ডই একমাত্র প্রশ্ন নয়। সুপ্রিম কোর্ট আধার নিয়ে আপাতত অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছে। এর বাইরে এসআইআর করতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বহু আইনের বহু ধারা ভাঙছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আমি নিশ্চিত, গোটা দেশে এসআইআর শুরুর আগে সুপ্রিম কোর্ট তার চূড়ান্ত রায় জানিয়ে দেবে।’’

পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর-এর প্রস্তুতি হিসেবে গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যে ভোটার তালিকার ‘ম্যাপিং’ শুরু হয়েছে। তাতে ২০০২ সালে এসআইআর-এ প্রকাশিত ভোটার তালিকার সঙ্গে (দরকারে এসআইআরের ভিত্তিতে তৈরি ২০০৩ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে) চলতি বছরের সর্বশেষ ভোটার তালিকা মিলিয়ে দেখা হবে। দুই তালিকাতেই যাঁদের নাম থাকবে, নতুন করে তাঁদের নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রয়োজন থাকবে না। অন্য রাজ্যে ২০০২ বা ২০০৩-এর এসআইআর-পরবর্তী ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও একই সুবিধা মিলবে। কমিশন সূত্রের দাবি, এর ফলে অন্তত ৬৫-৭০% মানুষের যাচাই শুরুতেই হয়ে যাবে। বাকি ভোটারের নথি যাচাইয়ের প্রয়োজন হতে পারে।

বিহারে নাগরিকত্ব প্রমাণের উদাহরণ স্বরূপ ১১টি নথির যে তালিকা নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করেছিল, তাতে জন্মের শংসাপত্র, মাধ্যমিক পাশের শংসাপত্র, স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার প্রমাণ, অরণ্যের অধিকার আইনে শংসাপত্র, এনআরসি, স্থানীয় প্রশাসনের তৈরি পারিবারিক রেজিস্টার, জমি-বাড়ির সরকারি দলিল, সরকারি কর্মীদের পরিচয়পত্র বা পেনশন নির্দেশিকার মতো নথির উল্লেখ ছিল। রাজ্যের নির্বাচন দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে এসআইআরের নির্দেশিকা প্রকাশের পরে জানা যাবে, এ রাজ্যে কী নথি প্রয়োজন হবে। তবে আধার থাকবে পরিচয়পত্র হিসেবেই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Special Intensive Revision West Bengal Bihar Aadhaar Cards

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy