Advertisement
E-Paper

বইমেলায় বাংলা সাহিত্যের দুই দিকপাল ব্যক্তিকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন

সমরেশ বসু ও নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সম্পর্কে বলেছেন যথাক্রমে নবকুমার বসু ও অভিরূপ সরকার

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৫০
‘আখর কলকাতা’য় অভিরূপ সরকারের বক্তব্য

‘আখর কলকাতা’য় অভিরূপ সরকারের বক্তব্য

বাংলা সাহিত্যের দুই নক্ষত্র সমরেশ বসু ও নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে গত ২৪ জানুয়ারি, প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন, পূর্ব-পশ্চিম-এর সহযোগিতায়, তাঁদের ‘আখার’ উদ্যোগের একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেন কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলায়।

ওই সন্ধ্যার আমন্ত্রিত বক্তারা ছিলেন সমরেশ বসুর পুত্র নবকুমার বসু ও নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জামাতা অভিরূপ সরকার।

কথোপকথনে সুমন্ত্র সেনগুপ্ত

কথোপকথনে সুমন্ত্র সেনগুপ্ত

“বিদেশে বসবাস করা সত্ত্বেও, আমি প্রতি বছর বইমেলায় অংশ নিই। তবে প্রতি বারই যে আমি কোনও না কোনও অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে থাকি, তা নয়। অনেক সময়ে বাংলা সাহিত্যের অনুরাগী হিসেবেই এই মেলায় এসেছি,” বক্তা নবকুমার বসু, যিনি নিজেও এক জন প্রখ্যাত লেখক। ‘অলীক উড়ান’, ‘নাগরিক’, ‘চিরসখা’ ও ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’ তাঁর উল্লেখযোগ্য বইগুলির মধ্যে কয়েকটি। শল্যচিকিৎসার পেশা ছেড়ে সাহিত্যেই মনোনিবেশ করেন তিনি। বিগত ৪৮ বছর ধরে সাহিত্য সৃষ্টির কাজেই নিয়োজিত আছেন। নবকুমার এই উপলব্ধিতে পৌঁছন যে, খুব কম সাহিত্যিকই সাহিত্য জগতে সমরেশ বসুর মতো এক নতুন ধারা সৃষ্টি করতে পেরেছেন।

তিনি বলেন, “তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়) পরে বাংলা সাহিত্যে সমরেশ বসুর সমতুল্য বা তাঁকে ছাপিয়ে যাওয়ার মতো অবদান কোনও সাহিত্যিকই রাখতে পারেননি। সমরেশ বসু যখন লিখতে শুরু করেন, তখন আমরা সবে স্বাধীন হয়েছি। বাংলাদেশ (তখনকার পূর্ব পাকিস্তান) থেকে আগত উদ্বাস্তু সমস্যা সামলাতে আমরা ব্যস্ত। কিন্তু তাঁর প্রথম কয়েকটি লেখাই প্রমাণ করে দেয় যে, তিনি এক জন ভিন্ন ধরনের লেখক। তাঁর সাহিত্যকে চার ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম পর্যায়টি ছিল ১৯৪৮-১৯৫৮। এটিকে প্রস্তুতি পর্বও বলা চলে। অথচ সেই সময়েই উনি ‘বি টি রোডের ধারে’, ‘গঙ্গা’, ‘নয়নপুরের মাটি’র মতো উপন্যাস লেখেন, যেগুলি পাঠক আজও মনে রেখেছেন।”

সমরেশ-পুত্রের সংযোজন, “তার পরে, ১৯৬৮-তে তাঁর লেখা এক অন্য মোড় নেয়। এবং ‘পাঠান’, ‘তিন পুরুষ’ ও অন্যান্য উপন্যাসে তিনি যে ধরনের সাহিত্য সৃষ্টি করেন, তা বিতর্কের জন্ম দেয়। শেষ দশক ১৯৭৮-১৯৮৮-এর মধ্যে তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলির অন্যতম ছিল ‘দেখি নাই ফিরে’। উপন্যাসটি অসমাপ্ত থেকে যায়। তাঁর সৃষ্টির উৎকর্ষ কখনওই ম্লান হয়নি। বাংলা সাহিত্যকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব কেবল বাংলাদেশের হতে পারে না। উনি ‘কালকূট’ ছদ্মনামেও লিখতেন। দু’ ধরনের অথচ সমগুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য রচনা করার জন্য তাঁকে সম্মানিত করা উচিত।”

অন্য দিকে, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সম্পর্কে কয়েকটি গল্প শোনান অভিরূপ সরকার। তিনি বলেন, “আমি ওঁকে নীরেন কাকা বলে ডাকতাম। কারণ, উনি আমার বাবার বন্ধু ছিলেন। আমার শাশুড়ি-মা ও নীরেন কাকার মধ্যে যে ভালবাসা ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক ছিল, তা আমি আগে কখনও দেখিনি। যদিও তাঁদের রাজনৈতিক মতবাদ ছিল ভিন্ন, তবুও একে অপরকে বুঝতে তাঁদের কোনও অসুবিধে হত না। নীরেন কাকা ভগবানে খুব বিশ্বাস করতেন। মনে আছে, আমার বিয়ের পর, ধূমপান করার কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সেই সময়ে, নীচে হাসপাতালের মন্দিরে পুজো দেওয়ার পরে এক পুরোহিত রোগীদের মধ্যে ফুল বিতরণ করতেন। নীরেন কাকাকেও দিতেন। কারণ, নীরেন কাকার ধর্মবিশ্বাসে কোনও ঘাটতি ছিল না।”

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র রাজনীতি সম্পর্কে ভিন্ন মত পোষণ করতেন। তবুও তাঁদের মধ্যে ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। সে স্মৃতি ভাগ করে নিয়ে অভিরূপবাবু বলেন, “অশোক কাকা মারা গেলে নীরেন কাকা আমাকে ফোন করেন। অত শোকাহত আমি তাঁকে কখনও দেখিনি।”

অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগে, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও সমরেশ বসুর কবিতা আবৃত্তি করে শোনান সোমা আইচ। সমরেশ বসুর ছোটগল্প ‘আদাব’ পাঠ করেন সুমন্ত্র সেনগুপ্ত।

জয়িতা চৌধুরি, সদস্য, পূর্ব-পশ্চিম

জয়িতা চৌধুরি, সদস্য, পূর্ব-পশ্চিম

জয়িতা চৌধুরি, সদস্য, পূর্ব-পশ্চিম

“সুমন্ত্র সেনগুপ্ত’র গল্প পাঠ আমার খুব ভাল লেগেছে। আমি পূর্ব পশ্চিম-এর সঙ্গে নাটক করি। তাই এই ধরনের অনুষ্ঠান আমায় খুব সমৃদ্ধ করে। আমি অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাই। যখনই সম্ভব হয়, তখনই আমি এই রকম অনুষ্ঠান দেখি।”

সইফুল ইসলাম, সংগঠক, পূর্ব-পশ্চিম

সইফুল ইসলাম, সংগঠক, পূর্ব-পশ্চিম

সইফুল ইসলাম, সংগঠক, পূর্ব-পশ্চিম

“এই অনুষ্ঠানটি ছিল বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। কারণ, আমরা আমাদের দুই প্রিয় সাহিত্যিকের জন্মশতবর্ষে তাঁদের সম্মান জানাতে চেয়েছিলাম। তা করার জন্য আমরা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নিই। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানতে পেরে আমাদের এক নতুন অভিজ্ঞতা হল। কারণ, এক জন কবির মধ্যে যে মানুষটি থাকেন, তাঁকে আমরা সচরাচর দেখতে পাই না। তা ছাড়া সমরেশ বসুর সাহিত্য যে জীবনেরই প্রতিচ্ছবি, তা আবারও সচেতন ভাবে তুলে ধরেন তাঁর পুত্র।”

স্বাতী দাশ, সদস্য, পূর্ব-পশ্চিম

স্বাতী দাশ, সদস্য, পূর্ব-পশ্চিম

স্বাতী দাশ, সদস্য, পূর্ব-পশ্চিম

“আমার দুই অতি প্রিয় সাহিত্যিক সম্পর্কে ছিল এই অনুষ্ঠান। আমি যখন আমার ছেলেকে ‘আদাব’ পড়াই, সে দিন আমি ইমোশানাল হয়ে পড়েছিলাম। আজ আমি উপলব্ধি করি যে, আজকের এই অনিশ্চিত সময়ে ওই গল্পটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।”

অনুষ্ঠানের ডিজিটাল মিডিয়া পার্টনার ছিল আনন্দবাজার অনলাইন।

Abhirup Sarkar Nirendranath Chakraborty Samaresh Basu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy