E-Paper

রাস্তা খুঁড়ে যেমন খুশি মেরামতি বাড়াচ্ছে দুর্ঘটনা, নাস্তানাবুদ পুলিশ

কাজ মেটার পরে খোঁড়া রাস্তা বোজানো হয়েছে তো? যথাযথ ভাবে মেরামত করে বাকি রাস্তার মতোই করে দেওয়া হয়েছে কি? অভিযোগ, সে দিকে নজর থাকছে না কারও।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৫ ০৭:৫২
মিন্টো পার্কের কাছে ঢালাইয়ের জেরে উঁচু-নিচু হয়ে গিয়েছে রাস্তা।

মিন্টো পার্কের কাছে ঢালাইয়ের জেরে উঁচু-নিচু হয়ে গিয়েছে রাস্তা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

কাটাকুটি দাগের মতো শহর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির চিহ্ন। কখনও খোঁড়া হয়েছে কেব্‌ল নিয়ে যাওয়ার জন্য, কখনও আবার বিদ্যুতের তার বসানোর জন্য। কিন্তু সেই কাজ মেটার পরে খোঁড়া রাস্তা বোজানো হয়েছে তো? যথাযথ ভাবে মেরামত করে বাকি রাস্তার মতোই করে দেওয়া হয়েছে কি? অভিযোগ, সে দিকে নজর থাকছে না কারও। বহু জায়গাতেই বুজিয়ে দেওয়া রাস্তার গর্তে গাড়ির চাকা পিছলে যাচ্ছে। দিনে-রাতে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে মোটরবাইকের চাকাও। বৃষ্টি হলে বিপদ বাড়ছে আরও। যখন-তখন ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা।

কলকাতার রাস্তার এই বিপদ নিয়েই নাজেহাল পুলিশ এ বার আলাদা করে চিঠি দিতে চলেছে কলকাতা পুরসভা এবং পূর্ত দফতরকে। লালবাজার সূত্রের খবর, গত কয়েক দিনে এমন রাস্তার জেরে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে বেশ খানিকটা। বহু ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার পরে মোটরবাইক চালকেরা জানাচ্ছেন, রাস্তা সমান দেখে এগোচ্ছিলেন। হঠাৎ এক জায়গায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গিয়েছেন। পরে বোঝা গিয়েছে, রাস্তার ওই অংশের পিচ বাকি রাস্তার মতো নয়। লালবাজারের ট্র্যাফিক বিভাগের এক কর্তার কথায়, ‘‘বর্ষার আগে প্রতি বছর কোন কোন রাস্তা সারাইয়ের কাজ করতে হবে, তা জানতে চাওয়া হয় পুলিশের কাছে। এ বার খারাপ রাস্তার তালিকা দেওয়ার পাশাপাশি নির্দিষ্ট ভাবে এই দিকটি নিয়ে বিশেষ ভাবে জানাচ্ছি আমরা। রাস্তা খোঁড়ার পরে পুরো রাস্তাই পিচ করে দিলে বিপদ অনেকটা এড়ানো যেতে পারে।’’

কিন্তু বাস্তবে কী হয়? পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বেরিয়ে চোখে পড়ল, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ হয়ে যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউ, শ্যামবাজার, এ পি সি রোড, উল্টোডাঙা, সিআইটি রোড, কাঁকুড়গাছি, ফুলবাগান, শিয়ালদহ, এ জে সি বসু রোড, বালিগঞ্জ ফাঁড়ি, গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, টালিগঞ্জ, নিউ আলিপুর, জেমস লং সরণি, জোকা, মোমিনপুর, জাজেস কোর্ট রোড হয়ে ই এম বাইপাস, বেহালা অথবা এন এস সি বসু রোড— সর্বত্র এক ছবি। কাজের পরে রাস্তা পিচ করে দেওয়া হলেও তার মান সর্বত্র এক নয়। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, রাস্তা তৈরি হওয়ার পরে খোঁড়া হয়েছিল। এর পরে কাজ সেরে দ্রুত কোনও মতে শুধু খোঁড়া অংশটুকু পিচ দিয়ে বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে। চোখে পড়ে, ওই অংশ দিয়েই ঢুকছে বৃষ্টির জল। যা রাস্তার স্বাস্থ্যের পক্ষেও যথেষ্ট ক্ষতিকর।

পুরসভার কর্তারা অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্য পুরসভারই বিভিন্ন দফতর এবং পুরসভার সঙ্গে বাইরের সংস্থার সমন্বয়ের অভাবকে দায়ী করছেন। তাঁদের দাবি, রাস্তা খুঁড়ে জনপরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কোনও কিছু নিয়ে যেতে হলে আগাম পুরসভাকে জানাতে হয়। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কোথায়, কেন রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে, সেই তথ্য পুরসভার রাস্তা বিভাগের কাছে নেই। এর পরে নিজেদের মতো করে খোঁড়া অংশ বুজিয়ে দেয় সংশ্লিষ্ট সংস্থা। তাতেই রাস্তা জুড়ে কার্যত মৃত্যুফাঁদ তৈরি হয়ে থাকে বলে অভিযোগ। পুরসভারই এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে প্রকাশ্যে পিচ গলানো বারণ। ফলে, ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট দেওয়া যাচ্ছে না। শুধুমাত্র বিটুমিন দিয়ে রাস্তা হচ্ছে। কিন্তু সেই রাস্তা কয়েক ঘণ্টা জলে ডুবে থাকলেই ভেঙেচুরে যায়। তার মধ্যে এই ভাবে জোড়াতাপ্পি দিয়ে মেরামত করলে রাস্তা টেকে আরও অনেক কম।’’ পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, সাধারণত কোনও রাস্তা তৈরির পরে তিন বছর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে হয় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে। চতুর্থ বছরে রাস্তা ভাঙলে সারাইয়ের খরচ সরকারের। ফলে রাস্তার আয়ু বা স্থায়িত্ব বাড়লে লাভ সরকারেরই। কিন্তু কোথায়, কী ভাবে কাজ হচ্ছে, দেখার লোক কোথায়? এক পুরকর্তা বলেন, ‘‘রাস্তা তৈরির সময়ে পুর ইঞ্জিনিয়ারদের তদারকিও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কাজ দেখতে যান ক’জন?’’

কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (রাস্তা) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘যেখানে এমন সমস্যা রয়েছে, খোঁজ নিয়ে দ্রুত মেরামত করে দেওয়া হবে।’’ মেয়র ফিরহাদ হাকিমও বলেন, ‘‘বর্ষা গেলেই সব রাস্তা দ্রুত সারিয়ে ফেলা হবে।’’ কিন্তু তত দিন ঘটতে থাকা পথ দুর্ঘটনা রোখা হবে কী ভাবে? উত্তর নেই কোনও মহলের কাছেই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Accident KMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy