Advertisement
E-Paper

শীর্ষে স্থায়ী নিয়োগ নেই, নম্বর ছাঁটাই কলকাতার

আরও কিছু দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছত্রচ্ছায়ায় থাকবে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, ঠিক হয়ে গিয়েছে কিছু দিন আগেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থার মূল্যায়নে জেভিয়ার্স বেশি নম্বর পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিড়ম্বনা বেড়েছে। নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১২

আরও কিছু দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছত্রচ্ছায়ায় থাকবে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, ঠিক হয়ে গিয়েছে কিছু দিন আগেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থার মূল্যায়নে জেভিয়ার্স বেশি নম্বর পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিড়ম্বনা বেড়েছে। নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ।

এ বার ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল বা নাক-এর মূল্যায়নে আগের তুলনায় এক ধাপ পিছিয়ে গিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ওই প্রতিষ্ঠান সূত্রের খবর, পড়াশোনার ক্ষেত্রে নম্বর কম না-পেলেও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অদক্ষতার জন্যই নম্বর কমেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের। ‘এ’ গ্রেড ধরে রাখলেও ২০০৮ সালে পাওয়া ৩.৩০ নম্বর থেকে কিছুটা কমে এ বার কলকাতার নম্বর হয়েছে ৩.২০। উপাচার্য, রেজিস্ট্রারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘদিন স্থায়ী নিয়োগ না-হওয়ায় সামগ্রিক ভাবে কলকাতার প্রশাসনিক দক্ষতা কমেছে বলেই মনে হয়েছে নাকের পরিদর্শকদের। তা ছাড়া ২৫ শতাংশ শিক্ষক-পদ খালি পড়ে থাকার প্রভাবও পড়েছে মূল্যায়নে।

সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ কিন্তু পৌঁছে গিয়েছে অনেকটা উপরে। নাক সূত্রের খবর, মোট চারের মধ্যে ওই কলেজ এ বার পেয়েছে ৩.৭৭ নম্বর অর্থাৎ ‘এ++’ গ্রেড। বাংলার নাম সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে উজ্জ্বল করেছে তারা। কঠিন লড়াইয়ে গুয়াহাটি কটন কলেজ এবং কেরলের সেন্ট জোসেফ কলেজকে (৩.৭৬) হারিয়ে দেশের সেরা সেন্ট জেভিয়ার্স। এখনও পর্যন্ত দেশের কোনও কলেজ এত নম্বর পায়নি বলে নাক সূত্রের খবর। নাক-এর নিয়মে চারের মধ্যে ৩.৫১ পেলে ‘এ+’ গ্রেড হয়। ‘এ++’ পেতে হলে প্রয়োজন ন্যূনতম ৩.৭৬। এ বারের মূল্যায়নের রিপোর্ট এসেছে মঙ্গলবার।

তার পরেই টনক নড়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। সেন্ট জেভিয়ার্সের নম্বর এত ভাল হওয়া সত্ত্বেও কলকাতা কেন সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারল না, তা নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ-সহ সব স্তরে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নম্বর কমে যাওয়ার খবরে দুশ্চিন্তার ভাঁজ রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তাদের কপালেও। কোন কোন ক্ষেত্রে ত্রুটি-গাফিলতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নম্বর বাড়ল না, তা জানতে চেয়ে নাক-কে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। কোথায় কোথায় নাক কত নম্বর দিয়েছে, তা জানতে চান অস্থায়ী উপাচার্য আশুতোষ ঘোষ। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘কোন ক্ষেত্রে কত নম্বর পেয়েছি, তা না-জেনে কিছু বলা মুশকিল। নাক-প্রতিনিধিরা পঠনপাঠন ও গবেষণা ক্ষেত্রে তো আমাদের প্রশংসাই করে গিয়েছিলেন। তবু নম্বর কেন কমে গেল, তা জানতে চাইব। পুরো বিষয়টিই খতিয়ে দেখতে হবে।’’

ডিসেম্বরে পরিদর্শনে এসে নাক-প্রতিনিধিরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামোয় অনেক ত্রুটি আছে। কোনও কোনও ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই পরিষেবা নেই কেন, উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের মতো দু’-দু’টি শীর্ষ পদে দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী নিয়োগ কেন হয়নি, সেই সব প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। নম্বরের ক্ষেত্রে যে তার প্রভাব পড়তে পারে, তখনই সেটা আন্দাজ করা গিয়েছিল। অস্থায়ী রেজিস্ট্রার সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি দেখার কথা নাক-এর। সেই সময়সীমা ধরলে ওই দু’টি পদেই স্থায়ী ব্যক্তিরা ছিলেন। তবু মূল্যায়নের নম্বরে কেন প্রভাব পড়ল, তা বুঝতে পারছি না।’’

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক থেকেও বেশ পিছিয়ে রয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকী ডেঙ্গির বাহক এডিস মশার লার্ভাও পাওয়া গিয়েছিল রাজাবাজার ও কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে। উপাচার্য এ দিন বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শৌচালয় এবং চত্বরকে পাঁচতারা হোটেলের ধাঁচে গড়ে তোলা কখনওই সম্ভব নয়। তবু যতটুকু পেরেছি, চেষ্টা করেছি আমরা। যেটুকু নম্বর কমেছে, তাতে তেমন কোনও প্রভাব পড়বে না। কারণ গ্রেড ‘এ’ রয়েছে।’’ উপাচার্য যা-ই বলুন, কানাঘুষো শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেই। এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘উন্নতি তো করাই যায়নি। উল্টে নম্বর কমেছে। এখনই হাল না-ধরলে বি‌শ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা যে শোচনীয় হবে, সেটা প্রায় নিশ্চিত।’’ উচ্চশিক্ষা দফতর অবশ্য জানাচ্ছে, স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি গড়া হয়েছে। শূন্য পদও পূরণ হবে।

সেন্ট জেভিয়ার্সের সাফল্যের পরে প্রশ্ন উঠছে প্রেসিডেন্সি নিয়েও। কলেজ অবস্থায় ২০০৭ সালে ‘এ+’ গ্রেড পেয়েছিল প্রেসিডেন্সি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার পরেই সেটা ‘এ’ গ্রেডে নেমে আসে। সেন্ট জেভিয়ার্স এ বছরই বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হতে চলেছে। বিলও পাশ হয়েছে বিধানসভায়। প্রশ্ন উঠছে, বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরে জেভিয়ার্স কি এই ফল ধরে রাখতে পারবে?

অধ্যক্ষ ফেলিক্স রাজ বলেন, ‘‘এই সাফল্যের জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকা, প্রাক্তন পড়ুয়া, বর্তমান ছাত্রছাত্রী-সহ সকলকে ধন্যবাদ। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরেও এই মান ধরে রাখতে পারব, আমরা আশাবাদী।’’

Calcutta University Administration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy