Advertisement
E-Paper

শহরে প্রাণঘাতী রূপ ভাইরাস অ্যাডেনো-র, মৃত্যু তিন শিশুর

অনেকটা একই উপসর্গ নিয়েই মধ্য কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল চাকদহের বাসিন্দা ১৪ মাসের পবিত্র দাস। প্রথমে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও পরে ফের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৯ ০১:৫৭

সর্দি, কাশির সঙ্গে ধুম জ্বরে প্রথমে কাবু হয়ে পড়েছিল দু’বছরের আলেয়া হাজরা। একে জ্বর ছাড়তে চাইছে না, তার উপরে দোসর শ্বাসকষ্ট। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। চেষ্টা করেও আলেয়াকে বাঁচানো যায়নি। গত ফেব্রুয়ারির ঘটনা। চিকিৎসকেরা জানান, ছোট্ট আলেয়া অ্যাডেনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল।

অনেকটা একই উপসর্গ নিয়েই মধ্য কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল চাকদহের বাসিন্দা ১৪ মাসের পবিত্র দাস। প্রথমে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও পরে ফের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ফের ওই হাসপাতালেই তাকে ভর্তি করার পরে শিশুটির শরীরে অ্যাডেনোভাইরাস পজিটিভ চিহ্নিত হয়। তাকে ভেন্টিলেশনেও রাখতে হয়। তবে মঙ্গলবার পবিত্রকে ভেন্টিলেশন থেকে বার করা গিয়েছে।

বস্তুত, এই বছরের শুরু থেকেই শহর ও শহরতলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অ্যাডেনোভাইরাস। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিশুরোগ চিকিৎসকেরা। আতঙ্কের বিষয়, গত তিন মাসে অ্যাডেনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনটি শিশুর মৃত্যুও হয়েছে। পার্ক সার্কাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে সেখানে গত তিন মাসে অন্তত ৭০ জন শিশু ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য আসে। তাদের মধ্যে এখনও ১৬ জন ভর্তি, যাদের ছ’জন গুরুতর অসুস্থ। শিশুরোগ চিকিৎসকেরা জানান, অনেক হাসপাতালেই ছবিটা এমনই। ওয়ার্ডে সংক্রমণ ঠেকাতে অ্যাডেনোভাইরাস আক্রান্ত শিশুদের আলাদা ওয়ার্ডে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পার্ক সার্কাসের একটি বেসরকারি হাসপাতাল।

আক্রান্ত কারা

• ১-৪ বছরের শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে লক্ষণ
• সর্দি, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট
• নাক দিয়ে জল পড়া
• দ্রুত জ্বরের মাত্রা বাড়তে থাকা প্রতিকূলতা
• নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ নেই
• উপসর্গ কমানোর ওষুধ দেওয়া হয়

শিশুরোগ চিকিৎসকেরা জানান, সাধারণত ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আবহাওয়ায় এই ভাইরাসের প্রভাব টের পাওয়া যেত। সর্দি, কাশি, জ্বরের সঙ্গে গলা ব্যথা, গলার ভিতরে লাল ও চোখ লাল হলেও জীবনহানির ব্যাপার ছিল না। শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘আগে অ্যাডেনোভাইরাস থেকে ডায়রিয়া পেতাম। জ্বরের সঙ্গে কনজাংটিভাইটিস দেখা যেত। এখন সাধারণ জ্বর থেকে সেটা ভেন্টিলেশন পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে।’’ শিশুরোগ চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, ‘‘এই ভাইরাসের মোকাবিলায় নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। সাপোর্টিভ থিওরি মেনে চিকিৎসা হচ্ছে। শ্বাসকষ্ট হলে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে, তাতে কাজ না হলে ভেন্টিলেশন। অন্য জীবাণু যাতে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে, সে জন্য উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা।’’ সর্দি, কাশির সঙ্গে জ্বর এলে শিশুকে তাঁদের কাছে নিয়ে যেতে বলছেন চিকিৎসকেরা।

কী করবেন

• ভিড় থেকে শিশুকে দূরে রাখুন
• বাড়ির কারও সর্দি-কাশি হলেও মুখ ঢেকে রাখুন
• শিশুকে ধরার আগে হাত পরিষ্কার করে নিন
• জ্বর হলেই শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান

নাছোড়বান্দা ভাইরাসের মোকাবিলায় সচেতনতার উপরে জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। শিশুরোগ চিকিৎসক নিকোলা ফ্লিন বলেন, ‘‘বাজার, স্টেশনের মতো জনবহুল এলাকায় বাচ্চাকে না নিয়ে যাওয়া ভাল। বাড়িতে কারও সর্দি, কাশি হলে বা বাইরে থেকে সর্দি, কাশি নিয়ে কেউ বাড়িতে এলে বাচ্চাকে মাস্ক পরিয়ে রাখুন। জীবাণুর চোরাগোপ্তা আক্রমণ থেকে বাঁচতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।’’ আরও এক শিশুরোগ চিকিৎসক পবিত্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গত বছর পর্যন্ত ছবিটা এ রকম ছিল না। ১-৫ বছরের শিশুদের বেশি কাবু করছে অ্যাডেনোভাইরাস। একে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তার উপরে ভাইরাসের হানায় দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে জটিলতা বাড়ছে।’’ ভাইরাসের এই প্রাণহানি আচরণের পিছনে দূষণ একটি বড় কারণ বলে মনে করেন তিনি।

Health Diseases Adenoviruses
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy