Advertisement
E-Paper

বিজয়া-বিকেল যেন কফি হাউসের ভাঙা আড্ডা

সেই একই রকম আলো ঝলমলে সন্ধে। কংগ্রেসের জেলা কার্যালয়ের সামনের মাঠটা বেশ চোখে পড়ার মতো ভিড়। রয়েছেন অধীর চৌধুরীও।গ্যালোবারের মতো মতোই লুচি-বোঁদে-আলুর দম। সেই বক্তৃতা, টুকটাক হাসি, কোলাকুলি, গান সবই আছে। তবুও কি যেন নেই।

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৪১
বিজয়ার প্রণাম। বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

বিজয়ার প্রণাম। বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

সেই একই রকম আলো ঝলমলে সন্ধে। কংগ্রেসের জেলা কার্যালয়ের সামনের মাঠটা বেশ চোখে পড়ার মতো ভিড়। রয়েছেন অধীর চৌধুরীও।

গ্যালোবারের মতো মতোই লুচি-বোঁদে-আলুর দম। সেই বক্তৃতা, টুকটাক হাসি, কোলাকুলি, গান সবই আছে। তবুও কি যেন নেই।

কি নেই?

বৃহস্পতিবার, বহরমপুর টাউন কংগ্রেসের বিজয়া সম্মিলনীর সেই ছেঁড়া লাটাইয়ের সুরটাই বেঁদে দিলেন মঞ্চের গায়কও— ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই।’

যা ছুঁয়ে দেখে বুঝি সঞ্চালক, প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাসও বলছেন, ‘‘আমাদের বুঝতে হবে কাদের জন্য সেই এই হারানো পরিবেশটা তৈরি হল!’’

গতবারের বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ আলো করেছিলেন বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও ২৫ জন কাউন্সিলর। এ বার সাকুল্যে সাত জন।

নীলরতন তাঁর অনুগামী ১৮ জনকে নিয়েই তৃণমূলে চলে গিয়েছেন যোগ দিয়েছেন।যোগ দিয়েই ক্ষান্ত হননি, ৫ নভেম্বর বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে শহরের ২০০টি পুজো কমিটিকে নিয়ে ঢালাও বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছেন তিনি।

সেই অনুষ্ঠানে থাকার কথা জেলাশাসক ওয়াই রত্মাকর রাও, পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার, তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন।

গত বারের মঞ্চ আলো করেছিলেন অপূর্ব সরকার, রবিউল আলম চোধুরী, শাঁওনী সিংহ রায়, আশিস মার্জিত-সহ ডজন খানেক বিধায়ক। এ দিন ছিলেন মেরেকেটে তিন জন— জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা নওদার বিধায়ক আবু তাহের খান, বহরমপুরের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী, রানিনগরের বিধায়ক ফিরোজা বেগম।

অস্বস্তি কাটাতে বহরমপুর টাউন কংগ্রেস সভাপতি অতীশ সিংহ বলছেন, ‘‘এটা বহরমপুর টাউন কংগ্রেসের অনুষ্ঠান। তাই এ বার বহরমপুরের বাইরের বিধায়কদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ফিরোজা বেগম রানিনগরের বিধায়ক হলেও তিনি বহরমপুরেই থাকেন। আর আবু তাহের নওদার বিধায়ক হলেও তিনি জেলা কংগ্রেস সভাপতি। তাই তাঁদের দু’ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’’ শাক দিয়ে অবশ্য মাছ ঢাকা যায়!

জয়ন্ত দাস মাইক হাতে ঘোষণা করলনে, ‘‘আমাদের সঙ্গে একাত্ম হতে বীরভূমের হাসান কেন্দ্রের বিধায়ক মিল্টন রশিদ আর বীরভূম জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি এসেছেন।’’ তাঁদের কিন্তু বহরমপুর টাউন কংগ্রেসের এই অনুষ্ঠানে আসতে হয়েছে কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকারের নির্বাচনী এলকার বুকের উপর দিয়েই। একাত্ম হওয়ার তাল যে মাঝে মাঝেই কেটেছে তার টের পাওয়া গিয়েছে বিভিন্ন জনের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যেও। তাঁর ৩ মিনিটের বক্তব্যে জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু তাহের বলেন, ‘‘অশুভ শক্তির বিনাশ হোক!’’ তুমুল হাততালি। সেই অশুভ শক্তির পরিচয়ও নির্দিষ্ট করে দিলেন জয়ন্ত। দলত্যাগ না করা বহরমপুরের ৭ কাউন্সিলরকে সম্বর্ধনা গ্রহণ করার জন্য মঞ্চে আহ্বান করার সময় জয়ন্ত মাইকে ঘোষণা করেন, ‘‘প্রশাসনিক সন্ত্রাসের দুর্যোগেও যে কাউন্সিলররা বিক্রি হয়ে যাননি, তাঁদের পুষ্পস্তবক দিয়ে সম্মানিত করবেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।’’

অধীরও নাম না করে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। গত মঙ্গলবার বহরমপুর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের হাজার কুড়ি কমী নিয়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩০ লক্ষ টাকা বাজেটের ওই কর্মী সম্মেলনে এলাহি খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন ছিল। এ দিনের বিজয়া সম্মিলনীর মেনু ছিল লুচি, আলুর দম আর বোঁদে। তৃণমূলের নাম না করে ঠেস দিয়ে অধীর বলচেন, ‘‘আমাদের পাঁচ পদের ব্যবস্থা নেই। আপনাদেরকে এখানে চানা খেতে হবে বেদানা মনে করে!’’ লোকের ঢল নামলেও কোন কাউন্সিলর, কোন বিধায়ক এ বারের অনুষ্ঠানে নেই, সেই প্রসঙ্গের ফিসফিসানি এ দিন শুনতে পেয়েছেন বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ‘‘বিজয়া সম্মিলনী তো সবাই মিলে একত্র হওয়ার বিষয়। কেউ কেউ না আসায় খারাপ তো লাগবেই।’’ আসলে কফি হাইসের সেই আড্ডাটাই ভেঙে গিয়েছে যে!

Adhir chowdhury congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy