রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার বেআইনি বাজি কারখানায় মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। অথচ জাতীয় পরিবেশ আদালতের বারবার নির্দেশ সত্ত্বেও সে সব বন্ধ হচ্ছে না। এ বার ওই সব কারখানা চিহ্নিত করতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।
বিজ্ঞাপনে পর্ষদ আহ্বান জানাবে, যে সব ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কারখানা পর্ষদের অনুমোদন বেআইনি ভাবে চলছে, সেগুলি অবিলম্বে অনুমোদন চেয়ে আবেদন করুক। প্রসঙ্গত, আতসবাজি উৎপাদনকে কুটির শিল্প হিসেবে গণ্য করা হয়। ব্যবসায়ীদের হিসেবে, এই রাজ্যে বাজি কারখানা ৩০ হাজারের বেশি। পর্ষদ বলছে, বৈধ বাজি কারখানা রয়েছে ১১টি।
পর্ষদ সূত্রের খবর, দু’-তিন দিনের মধ্যে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন বেরোবে। মঙ্গলবার পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘বাজি কারখানাগুলিকে পর্ষদের অনুমোদন প্রক্রিয়ায় আনা জরুরি। বিজ্ঞাপন সে ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে।’’ পর্ষদের আশা, বিজ্ঞাপন দেখে অনুমোদন চেয়ে আবেদন করলে বহু বেআইনি বাজি কারখানার খোঁজ মিলবে, সেগুলিকে পর্ষদের নজরদারিতে আনা যাবে।
গত নভেম্বরেই মুর্শিদাবাদের রেজিনগর এলাকায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। গত আট বছরে পশ্চিমবঙ্গে ৪০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন বেআইনি বাজি কারখানার বিস্ফোরণে। এমনই তথ্য পেশ করা হয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালতে।
বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করতে পরিবেশ আদালতে মামলা করেছেন পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। ওই মামলায় পরিবেশ আদালত, ২০১৫-র অক্টোবর থেকে বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করার নির্দেশ দিচ্ছে রাজ্যকে। অথচ সেই নির্দেশ এখনও কার্যকর হয়নি।
এ দিন এক সাংবাদিক বৈঠকে পর্ষদ ও রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের সমালোচনা করেছে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা কেন্দ্রীয় সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’। তাদের তরফে নব দত্ত ও শশাঙ্ক দে বলেন, ‘‘বেআইনি বাজি কারখানার খোঁজ পেলে পর্ষদের উচিত, সেগুলি বন্ধ করে আইনি পথে যাওয়া। বেআইনি কারখানাকে পর্ষদ কেন আইনের আওতায় আনবে?’’
‘সবুজ মঞ্চ’-এর বক্তব্য, ওই সব কারখানায় মারণ বোমাও তৈরি হচ্ছে, যা ভারত ও প্রতিবেশী দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক। ওই কারখানাগুলিতে শিশুদেরও কাজে লাগানো হচ্ছে। প্রসঙ্গত রেজিনগরের ঘটনায় মৃতদের এক জন নাবালক। প্রবীণ আইনজীবী গীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘শব্দ দূষণের পাশাপাশি, বাজির ধোঁয়ায় বিষিয়ে যাচ্ছে বাতাস। অথচ বেআইনি বাজি কারখানার বিরুদ্ধে পর্ষদ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’’
পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র অবশ্য বলছেন, ‘‘আমরা ওই সব বাজি কারখানার অস্তিত্বই জানি না। বিজ্ঞাপন বেরোনোর পরে ওদের খোঁজ পেলে জানাব, কারখানা চালাতে কী কী নিয়ম মানতে হবে।’’ কিন্তু এখন মৃত্যুমিছিল আটকাতে বেআইনি কারখানাগুলি কে বন্ধ করবে? কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘এটা পুলিশের কাজ।’’ রাজ্য পুলিশের এডিডি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা বলেন, ‘‘বিষয়টি জানি। বেআইনি বাজি কারখানাগুলি চিহ্নিত করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy