Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
কাউন্সেলিং-বিতর্ক

হুমকি রেখেই ঘেরাও উঠল প্রেসিডেন্সিতে

উনিশ ঘণ্টা পরে ঘেরাও উঠল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে কর্তৃপক্ষকে পড়ুয়ারা পরিষ্কার জানিয়ে রাখলেন, এই মুক্তি একেবারেই সাময়িক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫৬
Share: Save:

উনিশ ঘণ্টা পরে ঘেরাও উঠল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে কর্তৃপক্ষকে পড়ুয়ারা পরিষ্কার জানিয়ে রাখলেন, এই মুক্তি একেবারেই সাময়িক।

স্নাতক স্তরে প্রবেশিকা পরীক্ষায় মেধা তালিকার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। কাউন্সেলিংয়ের সময়সীমা বাড়ানো-সহ আরও কিছু দাবিও রয়েছে তাঁদের। সেই দাবি আদায়ের জন্যই শুক্রবার রাত আটটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার ও কয়েক জন আধিকারিককে ঘেরাও করেন ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। রাতভর দফায় দফায় বৈঠক চলে। শনিবার বিকেল তিনটে নাগাদ কর্তৃপক্ষের ‘ভেবে দেখার’ আশ্বাস পেয়ে সাময়িক ভাবে ঘেরাও তুলে নেন ওই পড়ুয়ারা। তবে তাঁদের হুঁশিয়ারি, আগামী কাল, সোমবারের মধ্যে সব দাবি মানা না হলে ফের আন্দোলন শুরু হবে।

প্রেসিডেন্সিতে এ দিনই স্নাতক স্তরে ভর্তির কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে। কিন্তু তা নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছে। এক পড়ুয়ার অভিভাবক জানান, পদার্থবিদ্যায় অনার্স নিয়ে পড়ার জন্যে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়েছিলেন তাঁর ছেলে। এ দিন ছিল কাউন্সেলিং। তালিকা প্রকাশ হতে দেরি হওয়ায় ওই পড়ুয়া তামিলনাড়ুর ইন্ডিয়ান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যান। ৩ অগস্ট তালিকা প্রকাশ করে জানানো হয়, ৬ এবং ৭ অগস্ট কাউন্সেলিং। ফলে ওই ছাত্র আর কলকাতায় পৌঁছতে পারেননি। তাঁর মা এ দিন স্কুলের অধ্যক্ষার স্বাক্ষর-সহ ছেলের দ্বাদশ শ্রেণির সিবিএসই বোর্ডের ডিজিটাল সার্টিফিকেট নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, সেই শংসাপত্রকে গুরুত্ব দেননি বিজ্ঞান বিভাগের ডিন গাঁধীকুমার কর। ডিন-এর বক্তব্য, গোটা ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড। তারাই বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দিয়েছে, আসল মার্কশিট ছাড়া কাউন্সেলিংয়ে যোগ দেওয়া যাবে না। তবে বেশ কিছু অভিভাবক যে এই সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে এসেছেন, সে কথা স্বীকার করেন ডিন।

জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান সজল দাশগুপ্তও জানান, ডিজিটাল মার্কশিটকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে কয়েক জন অভিভাবক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি প্রাথমিক ভাবে অনুমতিও দেন। তা হলে পরে কী সমস্যা হল? সজলবাবু বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, এই ধরনের ডিজিটাল মার্কশিট নকল হতে পারে। তখন বলি, কোনও সংশয় থাকলে কাউন্সেলিংয়ে সুযোগ দেওয়ার দরকার নেই।’’

আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা অবশ্য দাবি জানিয়েছেন, ভর্তি হতে আসা ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার দিকটিই কর্তৃপক্ষকে দেখতে হবে। নানা কারণে যাঁরা এ দিন কাউন্সেলিংয়ে হাজির হতে পারেননি, তাঁদের জন্য সময়সীমা বাড়াতে হবে। কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই ব্যাপারে এখনও কোনও আশ্বাস দেননি। তবে উপযুক্ত জায়গায় তা নিয়ে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন রেজিস্ট্রার। তিনি এ দিন জানিয়েছেন, কাউন্সেলিংয়ের পরে চূড়ান্ত যে মেধাতালিকা তৈরি হবে, সেখানে নামের পাশে প্রাপ্ত নম্বরও দেওয়া থাকবে।

হিন্দু হস্টেলের সামনে অবস্থান

প্রেসিডেন্সির ঘেরাও উঠল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আর এক দল পড়ুয়া শনিবার দুপুর থেকে অবস্থানে বসলেন হিন্দু হস্টেলের সামনে। তাঁরা হিন্দু হস্টেলের আবাসিক। এ দিন বিকেল তিনটে নাগাদ পড়ুয়ারা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপর ঘেরাও উঠিয়ে নেন। তার আগেই সাড়ে ১২টা নাগাদ শুরু হয় হিন্দু হস্টেলের সামনে অনির্দিষ্ট কালের অবস্থান। ছাত্রদের অভিযোগ, হিন্দু হস্টেল সারানোর জন্য ১১ মাস সময় নিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সারানোর কাজে ২০১৪-র মাঝামাঝি হাত দেওয়া হয়। গত বছর সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও এখনও হস্টেল সংস্কারের কাজ শেষ হয়নি। ফলে আবাসিকেরা থাকতে পারছেন না। এর প্রতিবাদেই তাঁদের অবস্থান-বিক্ষোভ। ছাত্রদের হুঁশিয়ারি, যতদিন তাঁরা হস্টেলের ঘর না ফিরে পাচ্ছেন, ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।এ দিন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া বলেন, ‘‘হস্টেলের কাজে হাত দিয়ে দেখা গিয়েছে, যা ভাবা গিয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশি সংস্কার প্রয়োজন। না হলে সমস্যা থেকেই যাবে। এই বাড়তি কাজের কারণে সময় ও অর্থ দুটোই বেশি লাগছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘ছাত্রদের থাকার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে নিউটাউনে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের যাতায়াতের জন্য গাড়ির ব্যবস্থাও আছে। সমস্যাটা ছাত্রদের বুঝতে হবে।’’ তবে কাজ শেষ হতে আর কত সময় লাগতে পারে, সেই সম্পর্কে উপাচার্য নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Presidency University Gherao
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE