Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Congress

পঞ্চায়েতের ‘শিক্ষা’ নিয়ে লোকসভার ভাবনা কংগ্রেসে

কমিশনের দেওয়া সর্বশেষ পরিসংখ্যানের নিরিখে দেখা যাচ্ছে, গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রত্যাশিত ভাবেই কংগ্রেসের সব চেয়ে বেশি আসন এসেছে মুর্শিদাবাদ থেকে।

inc.

দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে ঢোকার আগে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী, সনিয়া গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং ডি শিবকুমার। মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে। ছবি: পিটিআই।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৩ ০৬:৫৭
Share: Save:

রাজ্যে সাংগঠনিক শক্তি সীমিত। বাধা-বিপত্তির মোকাবিলা করে পঞ্চায়েতে প্রার্থী দেওয়া গিয়েছিল প্রায় ১৭ হাজার আসনে। সন্ত্রাস, ভোট লুট এবং গণনায় কারচুপির বিস্তর অভিযোগ সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে জয় এসেছে আড়াই হাজারের বেশি আসনে। কঠিন পরিস্থিতিতে বাংলায় তৃণমূল স্তরে মোটেও খারাপ নয় বলে মনে করছে কংগ্রেস। এবং পঞ্চায়েতে মাটি কামড়ে লড়াই থেকে রসদ নিয়েই আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে চাইছে তারা। প্রদেশ কংগ্রেসের সেই পরিকল্পনায় এখনও পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরার কোনও ভাবনা নেই। বরং, আগের মতোই বামেরা আছে।

জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরের আসনভিত্তিক চূড়ান্ত হিসাব মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। গ্রাম পঞ্চায়েতের চূড়ান্ত ফল এখনও কমিশন দেয়নি। তবে কমিশনের দেওয়া সর্বশেষ পরিসংখ্যানের নিরিখে দেখা যাচ্ছে, গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রত্যাশিত ভাবেই কংগ্রেসের সব চেয়ে বেশি আসন এসেছে মুর্শিদাবাদ থেকে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর জেলায় ১১০০-র বেশি আসন জিতেছে দল। মালদহে তারা জয় পেয়েছে ৬০০-র বেশি, উত্তর দিনাজপুরে ২০০, বীরভূমে ১২৫, নদিয়ায় ১১৬, পুরুলিয়ায় ১১২ আসনে। প্রদেশ সভাপতি অধীরের কথায়, ‘‘ভোট কী ভাবে হয়েছে, বাংলায় সকলেই দেখেছেন! ভোট করতে দিলে মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরে আমাদের ফল আরও অনেক ভাল হত। তবু প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে কংগ্রেস কর্মীরা যে ভাবে লড়াই করেছেন, ভাবা যায় না।’’

পঞ্চায়েত ভোটের নামে বাংলায় পুরোদস্তুর ‘প্রহসন’ হয়েছে বলে অভিযোগ সব বিরোধী দলেরই। সন্ত্রাস ও কারচুপির অভিযোগ তুলেও কঠিন লড়াইয়ের প্রায় ১১ হাজার আসন জয়ের জন্য রাজ্যের বিজেপি নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ-সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। প্রদেশ কংগ্রেসে আক্ষেপ, বাংলায় কংগ্রেস কর্মীদের একই রকম লড়াইয়ের জন্য দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্বের তরফে প্রকাশ্যে অন্তত উৎসাহবর্ধক কোনও বার্তা আসেনি! বরং, এই রক্তারক্তির ভোটের পরেও বেঙ্গালুরুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে বসে সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গেরা বৈঠক করায় বাংলায় দলের কর্মীদের হতাশা ও ক্ষোভ সামাল দিতে হচ্ছে প্রদেশ নেতৃত্বকে।

তবে পঞ্চায়েতের লড়াই থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে আগামী লোকসভা ভোটের জন্য প্রস্তুতিতে বামেদের পাশে নিয়ে এগোনোর কথাই ভাবছে প্রদেশ কংগ্রেস। দলীয় সূত্রের খবর, সংসদের বাদল অধিবেশনের পরে সিপিএমের সঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ ফের আলোচনা হতে পারে। বিরোধী বৈঠকের জন্য সনিয়া-রাহুলেরা বেঙ্গালুরু যাওয়ার আগে দিল্লিতে এআইসিসি-র স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক ছিল। যেখানে সনিয়া-রাহুলের মুখোমুখি হয়েছিলেন লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা অধীর। বাংলায় কৌশল বদল করে তৃণমূলের প্রতি ‘নরম অবস্থান’ নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করার কোনও বার্তা এআইসিসি শীর্ষ নেতৃত্ব সেখানে দেননি। তারই পাশাপাশি, পঞ্চায়েতের ফলের প্রাথমিক পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, মুর্শিদাবাদ, মালদহ-সহ কিছু জায়গায় বাম ও কংগ্রেসের ভোট ভাগাভাগির ফলে লাভবান হয়েছে তৃণমূল, কোথাও বিজেপি। অর্থাৎ বাম-কংগ্রেস জোট থাকলে এই ‘প্রহসনে’র ভোটেও অনেক ক্ষেত্রে তৃণমূলকে হারানো যেত। পরিযায়ী শ্রমিক অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদের ডোমকলের মতো ব্লকে বাম ও কংগ্রেসের ফল তুলনায় ভাল হয়েছে। লোকসভার প্রস্তুতি শুরু করার আগে এই সব তথ্যই মাথায় রাখছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।

অধীর সরাসরিই বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েতের অসম লড়াইয়ে কংগ্রেসের যে প্রার্থীরা জিতেছেন, এমনকি যাঁরা হেরেছেন, তাঁদের অনেককেও ভাঙিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে তৃণমূল। এখন জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের ক্ষমতা পেয়ে গিয়েছেন যথাক্রমে বিডিও এবং আইসি-রা! তৃণমূলের সঙ্গেই আসরে নেমেছে পুলিশ। দল বাঁচাতে আমাদের লড়তে হচ্ছে।’’ একটি সূত্রের ইঙ্গিত, এআইসিসি-র ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের পরে রাজ্যে রাজ্যে পর্যবেক্ষক এবং নেতৃত্বেও বদল আসতে পারে। তবে বঙ্গ কংগ্রেসের অন্দরে তৃণমূলপন্থী সুর এখনও একেবারেই জোরালো নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress West Bengal Lok Sabha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE