Advertisement
E-Paper

‘চমক’ যেন ‘ক্ষত’ না হয়ে ওঠে! ২১ জুলাইয়ের আগে তৃণমূলের অন্দরের আলোচনায় রাজন্যার প্রসঙ্গ, কী বলছেন নিলম্বিত নেত্রী?

দু’বছর আগে ২১ জুলাইয়ের আগের দিন দুপুর পর্যন্ত রাজন্যাও জানতেন না যে তিনি বক্তা হবেন। ২০ জুলাই বিকালে সভাস্থল পরিদর্শন করতে এসে দলের সর্বময় নেত্রী মমতা ছাত্রনেতাদের কাছে জানান, তিনি অল্পবয়সি দু’জন মেয়েকে দিয়ে বলাতে চান। সেই সূত্রেই ছাত্র সংগঠনের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের তরফে রাজন্যার নাম বলা হয়।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৫ ১৩:১১
Ahead of the July 21 annual meeting, the topic of Rajnya Halder is being discussed by many TMC leaders

২০২৩ সালে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেত্রী রাজন্যা হালদার। —ফাইল চিত্র।

উল্কার মতোই উত্থান হয়েছিল তাঁর। কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। উত্থানের এক বছরের মধ্যেই আরজি কর আবহে ছবি-বিতর্কে তাঁকে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করেছিল তৃণমূল। দু’বছরের মাথায় কসবার কলেজে ধর্ষণ-কাণ্ডের পরে নানা মন্তব্য করে তিনি আরও ‘কোণঠাসা’।

তিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেত্রী রাজন্যা হালদার। ২০২৩ সালের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে যিনি ছিলেন তৃণমূলের ‘চমক কন্যা’। আরও একটি ২১ জুলাই যখন দোরগোড়ায়, তখন তৃণমূলের অন্দরে অনেকেই আলোচনা করছেন রাজন্যা প্রসঙ্গে। যে আলোচনার নির্যাস— ‘চমক’ দেখাতে গিয়ে যেন আবার এমন ‘ক্ষত’ তৈরি না-হয়।

দু’বছর আগে তৃণমূলের বার্ষিক সমাবেশের মঞ্চে বক্তা হিসাবে যখন রাজন্যার নাম ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন মঞ্চে থাকা নেতারা নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়াচাওয়ি শুরু করেছিলেন। কারণ, প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনীকে অনেকেই চিনতেন না। সেই মঞ্চে নাতিদীর্ঘ অথচ ঝাঁঝালো বক্তৃতা করে, বাম স্লোগানের তৃণমূলীকরণ ঘটিয়ে রাতারাতি খ্যাতি পেয়েছিলেন সোনারপুরের তরুণী। তার এক মাসের মধ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়ার র‌্যাগিংয়ের কারণে মৃত্যুর অভিযোগে আলোড়িত হয়েছিল রাজনীতি। বামেদের ‘দুর্গ’ বলে পরিচিত যাদবপুরে সংগঠন বিস্তারে সেই রাজন্যাকেই দায়িত্ব দিয়েছিল দল। কিন্তু যাদবপুর ক্যাম্পাসে ছাপ ফেলতে পারেনি তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন। বরং বাম ও অতিবামেদের সঙ্গে টক্কর দিয়ে ক্যাম্পাসে নানা ভাবে দাগ কাটতে সক্ষম হয়েছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) ছাত্র শাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)।

আগামী সোমবার আবার একটা ২১ জুলাই। তার আগে তৃণমূলের নেতাদের অনেকেই একান্ত আলোচনায় বলছেন, ভোটের আগের বছর ‘সাবধান’ হওয়া প্রয়োজন। আর যেন রাজন্যা-কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি না-হয়। তাঁদের বক্তব্য, পরীক্ষিত নেতা-নেত্রীদেরই এই ধরনের সভায় বক্তার তালিকায় রাখা উচিত। দলের এক প্রবীণ নেতার কথায়, ‘‘ছাত্র-যুবদের মধ্যে অনেকেই হয়তো ভাল বক্তা। কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক বোধ কম। দলের লাইন, কোন সময়ে কী বলতে হবে বা করতে হবে, সে ব্যাপারে তাঁদের সম্যক ধারণা নেই। এই বিষয়গুলি দেখা দরকার।’’ যদিও তৃণমূলের রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দর্শন তরুণদের তুলে আনা এবং নবীন-প্রবীণের মিশেলে দলকে পরিচালনা করা। মুক্ত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কোনও ব্যক্তির বিচ্যুতি স্বাভাবিক ঘটনা। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ তো শুভেন্দু অধিকারী।’’

আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে লাগাতার নাগরিক আন্দোলন ‘চাপ’ তৈরি করেছিল শাসক তৃণমূল এবং মমতার প্রশাসনের উপর। সেই আবহেই রাজন্যা অভিনীত এবং তাঁর স্বামী প্রান্তিক চক্রবর্তী নির্মিত একটি ছবির পোস্টার ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। যে পোস্টারে রাজন্যাকে দেখা গিয়েছিল চিকিৎসকের অ্যাপ্রন পরে, হাতে স্টেথোস্কোপ নিয়ে কাশবনের সামনে দাঁড়িয়ে। মাথায় শোলার মুকুট। যার সঙ্গে আরজি করের যোগ খুঁজে পেয়েছিলেন অনেকে। সেই পর্বেই রাজন্যাদের সাসপেন্ড করে শাসকদল।

বছর ঘোরার আগেই যখন কসবার আইন কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় তৃণমূলের সঙ্গে যুক্তদের নাম জড়িয়েছে, তখন সেই রাজন্যার মন্তব্য শাসকদলের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। কসবার ঘটনায় মূল অভিযুক্তের নাম করে রাজন্যা সরাসরি বলেছেন, তৃণমূলে এমন নেতা অনেক। এ-ও অভিযোগ করেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে তাঁর নগ্ন ছবি তৈরি করে সেটি তৃণমূলের ছাত্রনেতাদের হোয়াট্সঅ্যাপে বিলি করা হয়েছিল। পাল্টা রাজন্যার উপর ‘চাপ’ তৈরি করতে নামেন তৃণমূল নেতাদের স্ত্রী-কন্যারা। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কন্যা প্রিয়দর্শিনী হাকিম এবং ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের কন্যা প্রিয়দর্শিনী ঘোষ প্রশ্ন তোলেন, কেন রাজন্যা আগে এ নিয়ে অভিযোগ জানাননি। কেন এখন বলছেন। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই স্বরূপ বিশ্বাসের স্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর জুঁই বিশ্বাসও একই প্রশ্ন তুলেছেন। তার পরে অবশ্য সোনারপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন রাজন্যা।

প্রসঙ্গত, দু’বছর আগে ২১ জুলাইয়ের আগের দিন দুপুর পর্যন্ত রাজন্যাও জানতেন না যে তিনি পরদিন বক্তার তালিকায় থাকবেন। ২০ জুলাই বিকালে সভাস্থল পরিদর্শন করতে এসে দলের সর্বময় নেত্রী মমতা ছাত্রনেতাদের কাছে জানান, তিনি অল্পবয়সি দু’জন মেয়েকে দিয়ে বলাতে চান। সেই সূত্রেই ছাত্র সংগঠনের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের তরফে রাজন্যার নাম বলা হয়। দ্বিতীয় নাম হিসাবে প্রস্তাব করা হয়েছিল হুগলি ও বীরভূমের দুই তরুণীর নাম। যদিও সময়ের অভাবে দ্বিতীয় কাউকে তোলা যায়নি। আলো পেয়েছিলেন একা রাজন্যাই।

গত বার রাজন্যা ছিলেন মঞ্চের পিছনের দিকে (বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে)। যেখানে তৃণমূলের মধ্য স্তরের নেতারা থাকেন। এ বছর কী করবেন? রাজন্যা বললেন, ‘‘এ বার দলের কর্মী হিসাবে মঞ্চের একেবারে সামনের দিকে থাকব। সেখান থেকেই নেতৃত্বের বক্তব্য শুনব।’’ তাঁকে ঘিরে দলের একাংশের আলোচনা প্রসঙ্গে কী বক্তব্য তাঁর? রাজন্যার জবাব, ‘‘যাঁরা আমার উদ্দেশে বলছেন, তাঁদের বলতে চাই, তাঁরা যেন ওই মঞ্চে জায়গা পান। বক্তৃতা করতে পারেন এবং নতুন স্লোগানের জন্ম দেন। এর বেশি আমার আর কিছু বলার নেই।’’

Rajanya Haldar TMCP 21 July Marty's Day 21 July TMC Rally
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy