Advertisement
E-Paper

ফিরতি ট্রেনের টিকিট কাটেন আকাঙ্ক্ষা

তার সঙ্গে থাকতে থাকতেই ভোপাল ছেড়ে বাড়ি ফেরার ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন আকাঙ্ক্ষা শর্মা— জেরায় উদয়ন দাস এমনই জানিয়েছে বলে দাবি পুলিশের। ব্যাঙ্ক-রেকর্ড পরীক্ষা করে বাঁকুড়া পুলিশও দেখেছে, গত বছর ১২ জুলাই আকাঙ্ক্ষার অ্যাকাউন্ট থেকে ‘অনলাইন’-এ ওই টিকিট কাটা হয়েছে।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৭

তার সঙ্গে থাকতে থাকতেই ভোপাল ছেড়ে বাড়ি ফেরার ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন আকাঙ্ক্ষা শর্মা— জেরায় উদয়ন দাস এমনই জানিয়েছে বলে দাবি পুলিশের। ব্যাঙ্ক-রেকর্ড পরীক্ষা করে বাঁকুড়া পুলিশও দেখেছে, গত বছর ১২ জুলাই আকাঙ্ক্ষার অ্যাকাউন্ট থেকে ‘অনলাইন’-এ ওই টিকিট কাটা হয়েছে। কিন্তু কবে ওই ট্রেন ছিল, কেনই বা আকাঙ্ক্ষা ভোপাল থেকে ফিরতে চাইছিলেন— জেরায় তার জবাব পুলিশ পায়নি।

বৃহস্পতিবার জেলার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হিরা বলেন, ‘‘উদয়ন নানা সময় নানা কথা বলছে। তাই আকাঙ্ক্ষা কেন ফেরার টিকিট কেটেছিলেন, তা নিয়ে এখনই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।’’

মঙ্গল ও বুধবারের প্রাথমিক জেরার পরে পুলিশ অনুমান করছিল, বাঁকুড়ার ওই তরুণীর খুন হওয়ার পিছনে দু’টি কারণ থাকতে পারে— হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাকরিস্থলে কবে সে আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ে যাবে, লাগাতার এই প্রশ্নের মুখে অস্বস্তিতে পড়েছিল উদয়ন বা উদয়নের জীবনে আকাঙ্ক্ষা ছাড়াও অন্য কোনও মহিলার অস্তিত্ব।

আরও পড়ুন: আমেরিকা যেতে চাওয়াই কি কাল হল আকাঙ্ক্ষার?

পুলিশ অবশ্য উদয়নের এই ‘তত্ত্বে’ পুরোপুরি বিশ্বাস করছে না। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘দু’জনের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল, এটা ঠিক। হয়তো সে জন্যই আকাঙ্ক্ষা বাড়ি ফিরতে চাইছিলেন, সেটাও ঠিক। কিন্তু মন কষাকষির যে সব কারণ উদয়ন দাবি করছে, সেগুলো সত্যি কি না তা নিয়ে আমরা নিশ্চিত নই। কারণ, অন্য পুরুষটি কে, কোথায় থাকে, তার মোবাইল নম্বরই বা কী, কোন-কোন সময়ে আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সেই লোকটি কথা বলত— সে সব নিয়ে বিশদ জানতে চাইলেই কিন্তু উদয়ন আমতা-আমতা করতে শুরু করছে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, আকাঙ্ক্ষাকে খুনের পরেই তাঁর কিছু গয়না সে বিক্রি করে দিয়েছিল বলে উদয়ন জেরায় পুলিশকে জানিয়েছে। সে সব বিক্রি করে সে প্রায় ৬০ হাজার টাকা পায়, এমন কথাও বলেছে। তবে পুলিশ সুপার বলছেন, ‘‘যে সব গয়না উদয়ন বিক্রি করেছে, সেগুলো সম্ভবত ওর নিজের মায়ের।’’ আকাঙ্ক্ষার দেহ পুঁতে ফেলার সময় গলায় থাকা একটি হার কিন্তু খোলা হয়নি। সাকেতনগরের বাড়িতে ২ ফেব্রুয়ারি আকাঙ্ক্ষার কঙ্কাল উদ্ধারের পরে, হাড়গোড়ের

মধ্যে পারিবারিক সেই হার চিনতে পেরেই দিদির দেহ শনাক্ত করেন আকাঙ্ক্ষার ভাই আয়ুষ। বাঁকুড়া পুলিশ আকাঙ্ক্ষার দেহাবশেষের নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ইতিমধ্যে উদয়নের পাসপোর্ট পরীক্ষা করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, ২০১১-র ২৪ ডিসেম্বর সে পাঁচ দিনের জন্য সিঙ্গাপুরে গিয়েছিল। পরের বছর ২২ জানুয়ারি সে ভিয়েতনাম গিয়েছিল চার দিনের জন্য। উদয়নের শেষ বিদেশ সফর ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল রাশিয়ায়, মস্কো শহরে। জন্মদিনটা (২৪ এপ্রিল) সেখানে কাটিয়ে দু’দিন পরে সে দেশে ফেরে। তবে কী মতলবে সে বিদেশে গিয়েছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। ওই তিনটি সফরের উল্লেখ বাদে উদয়নের পাসপোর্টে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন দফতরের ‘স্ট্যাম্প’ থাকলেও তদন্তে পুলিশ জেনেছে, তা ভুয়ো। উদয়ন কখনই আমেরিকায় যায়নি।

এক পুলিশ-কর্তার দাবি, আমেরিকা নিয়ে উদয়নের এটিই একমাত্র ‘জালিয়াতি’ নয়। ওয়াশিংটনে ‘ইউনিসেফ’-এ যে চাকরির ভরসায় বাড়ি ছেড়েছিলেন ২৮ বছরের আকাঙ্ক্ষা, তার নিয়োগপত্রটিও ‘ভুয়ো’। সেটি উদয়নের বানানো। সাকেতনগরের বাড়ি থেকে বাঁকুড়া পুলিশ অনেক কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করেছিল। তার মধ্যে থেকেই সেই জাল নিয়োগপত্র মিলেছে। এক তদন্তকারী জানাচ্ছেন, উদয়ন তাদের বলেছে, ছোটবেলা থেকেই আমেরিকা ছিল তার কাছে ‘স্বর্গের মতো’। তার ধারণা ছিল, আমেরিকায় সবাই বিত্তশালী। দামি গাড়ি চড়ে। ঝাঁ চকচকে পোশাক পরে। তাই বড় হয়ে সে-ও আমেরিকা যাবে এবং বিলাসব্যসনের জীবন কাটাবে এমন একটা ‘বিশ্বাস’ তার মাথায় গেঁথে গিয়েছিল। পুলিশ সুপার অবশ্য বলেন, ‘‘উদয়ন ওর কথা বলছে। আমরাও ধাপে ধাপে তদন্তে এগোচ্ছি। দেখাই যাক না।’’

আরও পড়ুন: ভাঙচুরের সে বার-এ বার, তফাত কি শুধু জরিমানায়

বাঁকুড়ার তদন্তকারীদের উদয়ন জানিয়েছে, সে বাবা-মা-র শ্রাদ্ধশান্তি করতে ‘প্যারোল’-এ ছুটি চায়। ক্ষমা চাইতে দেখা করতে চায় আকাঙ্ক্ষার বাবা শিবেন্দ্র শর্মা-মা শশীবালাদেবীর সঙ্গেও। মেয়ের পারলৌকিক কাজ করতে এ দিনই সপরিবার পটনার উদ্দেশে রওনা হন শিবেন্দ্রবাবু। তিনি ফোনে বলেন, ‘‘পুলিশ চাইলে তবেই ওর (উদয়ন) সঙ্গে দেখা হবে। না হলে, যার জন্য এমন দিন দেখতে হল, তার সঙ্গে কীসের দেখা!’’

Akanksha Sharma Udayan Das Murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy