Advertisement
E-Paper

‘পোস্ত’ নিয়ে তপ্ত ছোট আঙারিয়া

গ্রাম পাল্টেছে। সতেরো বছরে ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে ছোট আঙারিয়ার সেই ‘হামলা বাড়ি’ও। সিপিএম নেতাকর্মীরা এখানে দিব্যি ঘুরছেন। ঘরছাড়া হতে হয়েছে শ’খানেক তৃণমূল কর্মী-সমর্থককে। যাঁরা সেই সময়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কেন এই অবস্থা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ শেষ কিস্তি। আগে খাদানে দাপট ছিল বামেদের। এখন তৃণমূলের। তবু কিছু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক গ্রামছাড়া! আর ঘুরপথে খাদান-ব্যবসায় ফের সিপিএমের লোকেরা! ঘরছাড়াদের অভিযোগ, দলের স্থানীয় নেতৃত্ব সিপিএমের সঙ্গে বোঝাপড়া করে ওই ব্যবসার দখল নিয়েছেন। সেখানে পুলিশেরও ‘হিসেব’ রয়েছে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:২৮
ছোট আঙারিয়া গ্রামে নিহতদের স্মরণে। —নিজস্ব চিত্র।

ছোট আঙারিয়া গ্রামে নিহতদের স্মরণে। —নিজস্ব চিত্র।

বালি-খাদান, পাথর-খাদানকে ছোট আঙারিয়ার বাসিন্দারা ‘পোস্ত’ বলেন। এলাকার অনেকেই সেখানে কাজ করেন। গড়বেতার এই গ্রামে যত গোলমাল এই ‘পোস্ত’র তোলাবাজি নিয়েই! অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের বহর যেন সে কথাই বলছে।

আগে খাদানে দাপট ছিল বামেদের। এখন তৃণমূলের। তবু কিছু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক গ্রামছাড়া! আর ঘুরপথে খাদান-ব্যবসায় ফের সিপিএমের লোকেরা! ঘরছাড়াদের অভিযোগ, দলের স্থানীয় নেতৃত্ব সিপিএমের সঙ্গে বোঝাপড়া করে ওই ব্যবসার দখল নিয়েছেন। সেখানে পুলিশেরও ‘হিসেব’ রয়েছে।

ঘরছাড়াদের দলে রয়েছেন এক মোরাম ব্যবসায়ী। তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে কিছুদিন আগে আমারই খাদানের মোরাম লুঠ করে উত্তরবিলে আড়াই কিলোমিটার রাস্তা হল। আমি থাকলে তা সম্ভব হতো না।’’ আর এক ঘরছাড়া তৃণমূল কর্মীর কথায়, ‘‘পুলিশের একাংশ আমাদের থেকে টাকা না-পেয়ে ওঁদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। পুলিশকে ওঁরা বেশি রোজগার দিচ্ছে।’’

ওঁরা কারা?

ঘরছাড়ারা যে সব সিপিএম নেতাকর্মীর নাম করছেন, তাঁদের কেউ ছোট আঙারিয়া মামলায় অভিযুক্ত, কেউ আবার নেতাই-সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রাম-মামলায় অভিযুক্ত। বক্তার মণ্ডলের ভাই ওসমান-খুনেও অভিযুক্ত রয়েছেন কয়েক জন। সকলেই অবশ্য জামিনে রয়েছেন। আর নিজেদের দলের নেতাদের মধ্যে ঘরছাড়ারা বারবার বলছেন গড়বেতার বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী (নান্টি) এবং ব্লক সভাপতি শ্যামাপদ ঘোষের নাম।

সিপিএমের গড়বেতা জোনাল কমিটির নেতা সামেদ গায়েন অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, ‘‘ওখানে আমরা কোথায়? ওখানে যত গোলমাল বালি-বোল্ডার নিয়ে। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে।’’ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বা খাদানের দখলদারি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিধায়ক আশিসবাবু। তবে দলীয় কর্মীদের ঘরছাড়া নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা পুলিশ প্রশাসনের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারি না। ওরা গ্রামে শান্তি রাখতে যা করবে, সেটাই মান্যতা দেওয়া উচিত।” একই সঙ্গে অবশ্য তিনি সিপিএমের অভিযুক্তদের গ্রামে থাকা নিয়ে রক্ষণাত্মক মন্তব্যই করেছেন। আশিসবাবুর কথায়, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশেই ওঁরা এলাকায় রয়েছেন। তা ছাড়া ওঁরা তো সে ভাবে কোনও অশান্তি করছেন না। পুলিশ সুপার নিশ্চয় বিষয়টা দেখছেন।”

কী বলছেন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ?

খাদান নিয়ে পুলিশের একাংশের তোলাবাজির অভিযোগ ভারতীদেবী মানেননি। তাঁর আশ্বাস, “গ্রামের একজনও সংসার পরিজন ছেড়ে বাইরে থাকুন, সেটা কখনই কাম্য নয়। ওঁরা আমার অফিসে নির্ভয়ে আসুন। আমি তালিকা তৈরি করব। পুলিশ ঘরছাড়াদের গ্রামে পৌঁছে দেবে। কোনও সমস্যা হবে না।’’

গত বছর পর্যন্ত এনামুল-গোপালরা একসঙ্গে পুজোর আনন্দে মেতেছেন। কিন্তু এ বার পুলিশ সুপারের আশ্বাসেও ভয় কাটছে না তাঁদের। উত্তরবিলের মুকুল ভাঙির কথায়, ‘‘গতবার কামারপুকুর, বদনগঞ্জে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে রাতভর ঠাকুর দেখেছি। কিন্তু এ বার হুমকির মুখে পড়ে গ্রাম ছাড়তে হয়েছে। ফিরব কোন সাহসে? আমার দোষটা যে কী, সেটাই এখনও বুঝতে পারলাম না।’’

Chhoto Angaria Violence Clash TMC CPM তৃণমূল ছোট আঙারিয়া সিপিএম
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy