Advertisement
E-Paper

হার্টের জরুরি অস্ত্রোপচার, অপেক্ষা সাত মাস!

জরুরি অপারেশন হলেও অপেক্ষা ছাড়া গতি নেই। বাঁচার জন্য দিতে হবে লাইন। কেন? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। গত সাত মাস ধরে হার্টের অস্ত্রোপচারের জন্য রাজ্যের সেরা সরকারি হাসপাতালে অপেক্ষা করছেন সামসুরনাহার। বুকে মাঝেমধ্যেই যন্ত্রণা হয়। ঘুমোতে যাওয়ার সময়ে শ্বাসকষ্ট।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৮ ০৩:৩৭
কামালউদ্দিন শেখ ও তাঁর স্ত্রী সামসুরনাহার বিবি।

কামালউদ্দিন শেখ ও তাঁর স্ত্রী সামসুরনাহার বিবি।

কামালউদ্দিন শেখ জানেন না, তাঁর আড়াই বছরের বাচ্চাটা আর কত দিন তার মাকে পাবে! কামালউদ্দিন শেখ জানেন না হার্টের দুরারোগ্য অসুখ নিয়ে আর কত দিন তাঁর স্ত্রী, ২২ বছরের সামসুরনাহার বিবি প্রতি সপ্তাহে হাসপাতালে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে পারবেন!

গত সাত মাস ধরে হার্টের অস্ত্রোপচারের জন্য রাজ্যের সেরা সরকারি হাসপাতালে অপেক্ষা করছেন সামসুরনাহার। বুকে মাঝেমধ্যেই যন্ত্রণা হয়। ঘুমোতে যাওয়ার সময়ে শ্বাসকষ্ট। আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিওভাস্কুলার বিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, হৃৎপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালন সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। ছিদ্র ধরা পড়েছে। দ্রুত অস্ত্রোপচার না হলে
বাঁচানো যাবে না। কিন্তু আরজিকরে সেই অস্ত্রোপচার হবে না, এসএসকেএমে যেতে হবে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই তাই এসএসকেএমে ছোটাছুটি শুরু হয়েছে তাঁদের। কিন্তু যে অস্ত্রোপচারকে ডাক্তারেরা নিজেরাই ‘জরুরি’ বলে জানিয়েছিলেন, সে জন্য সাত মাস কেটে গেল?

কামালউদ্দিন জানান, প্রতি সপ্তাহে রোগীকে সঙ্গে নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরে ১২ মার্চ অস্ত্রোপচারের দিন নির্ধারিত হয়েছিল। কিন্তু ভর্তি হওয়ার আগে হাসপাতাল জানায়, বেড না থাকায় নির্ধারিত দিনে অস্ত্রোপচার করা যাবে না। ফের অপেক্ষায় থাকেন সামসুরনাহার। ২ এপ্রিল ফের অস্ত্রোপচারের দিন নির্ধারিত হলেও একই কারণে ফের বাতিল হয়। আপাতত জুনে অস্ত্রোপচার হওয়ার আশ্বাস মিললেও নির্দিষ্ট দিন পাওয়া যায়নি।

শহরের দু’প্রান্তে হার্টের দুটি ইনস্টিটিউট! ১৩ বছর আগে এই দুটি কেন্দ্র চালু করার সময়ে দাবি করা হয়েছিল, যে কোনও একটিতেই হৃদরোগের যাবতীয় জটিল অস্ত্রোপচারের চিকিৎসা সাধারণ মানুষ করাতে পারবেন। দাবি করা হয়েছিল, দেশের যে কোনও প্রান্তের হৃদরোগ চিকিৎসাকেন্দ্রের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে এই দুটি কেন্দ্র। ১৩ বছর পরে সামসুরনাহারের মতো ভুক্তভোগীরা প্রশ্ন তুলেছেন, চিকিৎসার সুযোগই যদি না পাওয়া যায়, তা হলে আর অন্য জায়গার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার কথা বলে কী হবে?

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এসএসকেএমে মাসে ২৩ থেকে ২৫টি বাইপাস অস্ত্রোপচার হয়। অপেক্ষায় থাকেন কয়েক হাজার রোগী। অপেক্ষা করতে করতে আট মাস, ১০ মাস, কখনও কখনও বছর ঘুরে যায়। এসএসকেএম হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘বর্ধমান, উত্তরবঙ্গের মতো রাজ্যের একাধিক মেডিক্যাল কলেজ থেকে রোগী রেফার হয়ে আসে। আরজিকর হাসপাতালের রোগীর অধিকাংশ অস্ত্রোপচারের জন্য এসএসকেএমে আসছেন। এত রোগীর চাপেই অপেক্ষা দীর্ঘ হচ্ছে।’’ এসএসকেএমে মাসে প্রায় ১৫০টি পেসমেকার বসানোর অস্ত্রোপচার হয়। স্টেন্ট বসানোর অস্ত্রোপচার হয় মাসে প্রায় ২৫০টি। দিনে ইকো করা হয় গড়ে ৬০ জনের।

আরজিকরে মাসে অস্ত্রোপচার হয় সর্বাধিক আটটি। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, প্রতিটি বাইপাস সার্জারি করতে প্রায় ছয় থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। মাত্র চারজন চিকিৎসক এত সময়ের অস্ত্রোপচার ধারাবাহিকভাবে করতে পারছেন না। তাই আরজিকরের একাধিক রোগীকে এসএসকেএমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এক কর্তার কথায়, ‘‘পর্যাপ্ত শয্যা কিংবা চিকিৎসক নেই। এভাবে এরকম প্রতিষ্ঠান চালানো যায় না। বাধ্য হয়েই রোগী রেফার করতে হচ্ছে।’’ তাঁরা জানান, বার বার স্বাস্থ্য ভবনে লিখিতভাবে জানানো হলেও ফল হয়নি।

কোনও কেন্দ্র চালু করার আগে পরিকাঠামোর আগাম পরিকল্পনা থাকে না কেন? কেন প্রয়োজনে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ডাক্তার এনে মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থার কথা ভাবে না স্বাস্থ্য দফতর? পরিষেবা বাড়াতে কি কোনও পরিকল্পনা রয়েছে স্বাস্থ্যকর্তাদের? কোনও প্রশ্নেরই উত্তর রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য দেননি। শুধু বলেন, ‘‘সব হচ্ছে। সব হবে।’’

হবে! কিন্তু কবে?

(চলবে)

Health Medical Negligence Government Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy