রোজগারের টোপ দিয়ে দুঃস্থ পরিবারের নাবালকদের ভিন্ রাজ্যে কাজে পাঠানোর চক্র চলছে, অভিযোগ উঠেছে পূর্ব বর্ধমানে। সেখানে গিয়ে নাবালকেরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলেও অভিযোগ। সম্প্রতি গুজরাতের রাজকোট থেকে গুরুতর জখম অবস্থায় বাড়ি ফেরে কালনার বছর বারোর এক কিশোর। তা নিয়ে শোরগোল হতেই, আরও অভিযোগ সামনে এসেছে। জেলা পুলিশ সূত্রের দাবি,নাবালক পরিযায়ী শ্রমিকদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
কালনার উপলতি গ্রামের ওই কিশোরের বাবা খেতমজুর। পরিবারের দাবি, বছর দুয়েক আগে, স্থানীয় এক যুবক মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকায় ছেলেকে রাজকোটে গয়না তৈরির কাজে পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। প্রাথমিক স্কুলের পড়া ছাড়িয়ে ছেলেকে পাঠানো হয়। অভিযোগ, কোনও টাকা মেলেনি। উল্টে, খাবার নষ্টের অভিযোগে বেধড়ক মারে ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
এই ঘটনার পরেই, কালনার জঙ্গলপাড়ার একটি পরিবার পুলিশে অভিযোগ করে, রাজকোটে একই কাজের জন্য ২০১৭ সালে তাদের নাবালক ছেলেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। গত সাত বছর ধরে তার খোঁজ নেই। যে দোকানে সে কাজ করত, তারা কোনও হদিস দিতে পারেনি। নিখোঁজের মায়ের অভিযোগ, ‘‘পাশের গ্রামের এক যুবক ছেলেকে রাজকোটে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। ছেলে তখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। আমরা সায় দিইনি। এক দিন কাজ থেকে ফিরে দেখি, ছেলে বাড়িতে নেই। ওই যুবক জানায়, ছেলেকে সে হাওড়া থেকে ট্রেনে তুলে দিয়েছে! এক বছর তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। তার পরে আর খোঁজ নেই!’’ গ্রামেরই আর এক পরিবারের দাবি, তাদের ছেলেকেও বছর চারেক আগে রাজকোটে পাঠানো হয়। মাস সাতেক পরে শরীরে চোট নিয়ে সে বাড়ি ফেরে।
এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, গরিব পরিবারের নাবালকদের ভুল বুঝিয়ে ভিন্ রাজ্যে কাজে পাঠানোর একটি চক্র কাজ করছে। স্থানীয় কিছু যুবক তাতে ‘এজেন্ট’ হিসাবে কাজ করছে বলে তাঁদের দাবি। কালনার তৃণমূল বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, একটি চক্র কাজ করছে। পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’
কালনা থেকে পুলিশের একটি দল ইতিমধ্যে রাজকোটে গিয়েছে। সেখানে পূর্ব বর্ধমানের বেশ কিছু নাবালকের হদিস মিলেছে। তাদের ফেরানোর আইনি প্রক্রিয়া চলছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষকে শিশুশ্রম নিয়ে সচেতন করতে একাধিক সভা করা হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)