E-Paper

‘আজকের বিজেপি বা হিন্দুত্ববাদীদের কী চোখে দেখতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’? উত্তর দিলেন অমর্ত্য সেন

প্রশ্নোত্তর পর্বে রবীন্দ্রনাথ ও আজকের হিন্দুত্ববাদ প্রসঙ্গে প্রশ্নটা তাঁর ‘অমর্ত্যদা’র জন্যই ছেড়ে দেন সুগত। তাতে সে যুগে বিজেপির সমমনস্ক ভারতীয় হিন্দু মহাসভার প্রতি রবীন্দ্রনাথের বীতরাগের কথাই বলেন অমর্ত্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:২৯
অমর্ত্য সেন।

অমর্ত্য সেন। —ফাইল চিত্র।

আজকের বিজেপি বা হিন্দুত্ববাদীদের কী চোখে দেখতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর?

প্রশ্নটা ঠিক সরাসরি আলোচ্য বিষয়ভুক্ত ছিল না। তবু ঢুকেই পড়ল আলোচনার পরিসরে। কলকাতার শনিবার সন্ধ্যা, আমেরিকার শনিবার সকালে যখন ইন্ডিয়ান ডায়াস্পোরা ওয়াশিংটন ডিসি মেট্রো তথা দেশান্তরী ভারতীয়দের সমিতির ডাকে ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ও রাজনীতি, ১৯২৪-৪১’-শীর্ষক বক্তৃতার আসর বেশ জমে উঠেছে। মূল বক্তা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ সুগত বসু। সেই বক্তৃতা নিয়েই দীর্ঘ মন্তব্য করলেন প্রবীণ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও। প্রশ্নোত্তর পর্বে রবীন্দ্রনাথ ও আজকের হিন্দুত্ববাদ প্রসঙ্গে প্রশ্নটা তাঁর ‘অমর্ত্যদা’র জন্যই ছেড়ে দেন সুগত। তাতে সে যুগে বিজেপির সমমনস্ক ভারতীয় হিন্দু মহাসভার প্রতি রবীন্দ্রনাথের বীতরাগের কথাই বলেন অমর্ত্য। আরও একটু স্পষ্ট করেই বিষয়টা বোঝালেন অমর্ত্য। তিনি বলেন, “রবীন্দ্রনাথের ঘরে বাইরে মনে থাকলে স্পষ্ট বোঝা যায়, সংখ্যাগুরুর স্বৈরাচার রবীন্দ্রনাথের তীব্র ভাবে অপছন্দ ছিল।”

এর আগে সুগতও প্রাক্-স্বাধীন ভারতে হিন্দু, মুসলিম সংঘাত নিয়ে রবীন্দ্রনাথের অবস্থান প্রসঙ্গে ঘরে বাইরে-র কথাই বলেছিলেন। তাঁর উপন্যাসে স্বদেশি আন্দোলনের নামে গরিব মুসলিম চাষি, দোকানদারদের উপরে জুলুমবাজির কড়া সমালোচনাই করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বিশ্বকবির ভারত-ভাবনার পিছনেও ‘জনগণমন অধিনায়ক’ গানটির দ্বিতীয় স্তবকের ভাবনা মেলে ধরেন সুগত। যেখানে হিন্দু বৌদ্ধ শিখ জৈন পারসিক মুসলমান খ্রিস্টানিকে নিয়ে পূর্ব, পশ্চিমের প্রেমহার গাঁথার কথা বলেছেন কবি।

মূল আলোচনায় রবীন্দ্রজীবনের ওই শেষ পর্বে বিভিন্ন তাঁর দেশে সফর, লেখালিখি এবং সমকালীন রাজনীতির হাত ধরাধরির কথাই উঠে এসেছে সুগতের বক্তৃতায়। ১৯২৪-২৫ এ রবীন্দ্রনাথ চিন, জাপান এবং পরে আর্জেন্টিনা সফরে ব্যস্ত। এক ধরনের অধ্যাত্মচেতনার বন্ধনে তিনি এশীয় ঐক্যর স্বপ্ন দেখছেন তখন। চিনের মানুষ সেই রবীন্দ্র আধ্যাত্মিকতাকে পুরোটা বোঝেনি। সুগত এ দিন দেখালেন, কী ভাবে ১৯২৪-এর আধ্যাত্মিকতা থেকে ১৯৩০-এর দশকের পরিশেষ কাব্যে রবীন্দ্রনাথ ‘প্রশ্ন’ কবিতার সেই তিক্ত জীবনবোধে এসে পৌঁছন। অমর্ত্যও রবীন্দ্রনাথের রাশিয়ার চিঠি এবং সভ্যতার সঙ্কটে সমকাল তথা পরিপার্শ্ব নিয়ে সজাগ রবীন্দ্রচেতনার কথাই বলেন। গান্ধীর সঙ্গে নানা মতবিরোধেও রবীন্দ্রনাথের পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক উঠে আসে। আর শেষ জীবনের অশক্ত রবীন্দ্রনাথের মধ্যেও সুভাষচন্দ্র বসুকে দেখে দেশের রাজনীতি নিয়ে প্রাণিত হওয়ার কথা বলেন সুগত। তখন সুভাষকে ‘দেশনায়ক’ বলে বরণ করেছেন কবি। এবং দেশের যুদ্ধে শরিক হতে না-পারার আক্ষেপ অনুভব করছেন। স্যান ডিয়েগোয় ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসের অধ্যাপক অনিকেত দে-র স্বাগত সম্ভাষণের পরে বলা শুরু করেছিলেন সুগত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Amartya Sen Rabindranath Tagore indian politics Hinduism

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy