বাটারফ্লাই ভিলেজ ছবি সংগৃহীত।
ইন্দোনেশিয়ার রামধনুর ছটা কলকাতায়। আকাশে নয়, সেই রামধনু হাত-পা মেলে সটান নেমে এসেছে মাটিতে। নামিয়ে এনেছেন পঁচাত্তুরে ‘তরুণ’ পরিমল দে।
শুধু সবুজের সমারোহ নয়। রয়েছে পুকুরও। খেলে বেড়াচ্ছে হাঁস। গ্রাম নয়, এই দৃশ্য খাস কলকাতার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের গাঙ্গুলিবাগানের বিদ্যাসাগর কলোনির। নাম ‘মাদার আর্থ থিম পার্ক’। আর এই পার্ককে ঘিরে ছড়িয়ে রয়েছে ‘বাটারফ্লাই ভিলেজ’। যে-ভিলেজের বিভিন্ন বাড়ি থেকে রাস্তা সেজেছে লাল-নীল-হলুদ-সবুজে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। পরিবেশ রক্ষার তাগিদে নিজের খরচে ইন্দোনেশিয়ার রামধনু গ্রামের অনুপ্রেরণায় নিজের পাড়াকে এ ভাবে সাজিয়ে তুলেছেন এলাকার বাসিন্দা পরিমলবাবু। থিম পার্ক গড়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুমতি নিয়ে তাঁদের আবাসস্থলকে ঝলমলে রঙে রাঙিয়েছেন তিনি। যেমনটি আছে ইন্দোনেশিয়ার ‘রামধনু’ গ্রামে। কামপাং পেলাঙ্গি নামের ওই গ্রাম এখন পরিচিত রামধনু গ্রাম হিসেবে। সেখানেও রঙবেরঙের বাড়ি এখন পর্যটকদের পছন্দের জায়গা। “আমাদের এই বাটারফ্লাই ভিলেজও এক দিন এই রকম পরিচিতি পাবে,” স্বপ্ন দেখেন পরিমলবাবু। সেই স্বপ্ন বুকে নিয়েই ২০১৬ সাল থেকে লড়াই চালাচ্ছেন তিনি। জানালেন, ২০১৬ সালে এটা ময়লা ফেলার জায়গা ছিল। সেই ময়লা থেকে দূষণ ছড়াত। সেই জায়গাটাকে পুনর্নির্মাণ করে এই থিম পার্কের রূপ দিয়েছেন তিনি।
গড়েছেন বাটারফ্লাই ভিলেজ। পরিমলবাবু বলেন, “আমি এলাকার প্রায় ৪০টি বাড়ি রং করে দিয়েছি। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সবুজ, রঙিন পৃথিবীই আমার লক্ষ্য।”
পরিমলবাবুর এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন বাসিন্দারাও। স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল রায় বলেন, “২০১৬ সালের আগে ময়লা-দুর্গন্ধে এখানে টিকতে পারতাম না। লড়াই করে দাদা (পরিমলবাবু) সব বদলে দিয়েছেন। তৈরি করেছেন স্বাস্থ্যকর পরিবেশ।”
লড়াই শেষ হয়নি পরিমলবাবুর। তাঁর অভিযোগ, রামধনুর এই রং ফিকে করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। পরিমলবাবুর দাবি, “এই থিম পার্কের দিকে নজর পড়েছে প্রোমোটার এবং সিন্ডিকেট-রাজের। এই জলাভূমি ভরাট করে দখল নেওয়ার চেষ্টা চলছে। ধ্বংস করা হচ্ছে সবুজ। আমি এখন লড়ছি প্রোমোটারের হাত থেকে পুকুরটিকে বাঁচানোর জন্য। প্রকৃতিকে রক্ষা করার জন্য।” পরিমলবাবুর আইনজীবী স্মিতেশ চট্টোপাধ্যায় জানান, এই সমস্ত বিষয় আইন-আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
এই সব সমস্যার প্রতিকারের জন্য ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন পরিমলবাবু। তাঁর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে মিতালিদেবী বলেন, “বিষয়টি আমার নজরে আছে। খুব শীঘ্রই ওই পুকুরের পাড় বাঁধিয়ে গাছ লাগিয়ে দেওয়া হবে।” প্রোমোটার চক্র যে জায়গাটি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে, সেই বিষয়ে মিতালিদেবীর আশ্বাস, “এমন কোনও ঘটনা আমরা কিছুতেই ঘটতে দেব না। ‘জল ধরো জল ভরো’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প। তাই পুকুর ভরাটের কোনও প্রশ্নই নেই।”
এই পার্কেই প্রায়ই সন্ধেটা কাটান এলাকার বাসিন্দা নরেশ মণ্ডল। বলেন, “জায়গাটা আগে নরক ছিল। পরিমলবাবু এটাকে স্বর্গ বানিয়েছেন।”
পরিমলবাবুর মুখে তখন ছড়িয়ে পড়ছে রামধনুর মতো উজ্জ্বল হাসি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy