কসবায় সন্তানকে নিয়ে সোমনাথ রায় এবং সুমিত্রা রায়ের আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনার অভিযোগে সোমনাথের মামা এবং মামিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বুধবার তাঁদের সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। যদিও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ধৃত প্রদীপকুমার ঘোষাল এবং নীলিমা ঘোষাল। তাঁদের দাবি, সোমনাথেরা ঋণে ডুবে ছিলেন। সন্তানের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়েও অবসাদে ভুগছিলেন। সেই কারণেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। তাঁরা প্ররোচনা দেননি। অভিযোগ উঠেছিল, কোনও এক ঝগড়ার সময়ে মামা-মামি সোমনাথদের বলেছিলেন, ‘‘নিজের বাড়ি যাঁদের নেই, তাঁদের মরে যাওয়া উচিত।’’ কিন্তু এই অভিযোগও আদালতে তাঁরা অস্বীকার করেছেন।
সোমনাথের মামা প্রদীপ পেশায় পুলিশকর্মী ছিলেন। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত। তাঁর স্ত্রী নীলিমাও পুলিশের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের আইনজীবী আদালতে জানান, নীলিমা ক্যানসারে আক্রান্ত। করের রসিদ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে সোমনাথদের ঝামেলা হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছে, সেই সংক্রান্ত ঝামেলার সময়েই নাকি মামা-মামি ওই দম্পতিকে নিজের বাড়ি না-থাকা নিয়ে খোঁটা দিয়েছিলেন। এই অভিযোগে কোনও সত্যতা নেই, দাবি আইনজীবীর।
আরও পড়ুন:
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০ লক্ষ টাকা ঋণ ছিল সোমনাথদের। প্রদীপদের আইনজীবী আদালতে জানান, বাজারে অনেক টাকা ঋণ হয়ে গিয়েছিল সোমনাথদের। তা পরিশোধ করতে পারছিলেন না। তাঁদের সন্তানও অসুস্থ ছিল। তার জন্য অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছিল। সেই কারণে দম্পতি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। এই আত্মহত্যায় মামা-মামির কোনও ভূমিকা নেই। ফলে এই মামলায় প্ররোচনার অভিযোগও খাটে না।
সরকার পক্ষের আইনজীবী এ প্রসঙ্গে সোমনাথদের বাড়ির দেওয়ালে লেখা ‘সুইসাইড নোটের’ কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, মৃত্যুর আগে কেউ কখনও মিথ্যা কথা বলে না। সোমনাথেরা দেওয়ালে মামা-মামির বিরুদ্ধে প্ররোচনার অভিযোগ জানিয়ে গিয়েছেন। সত্যিটা প্রকাশ্যে আনার জন্য তদন্ত চলছে। ধৃতদের পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানান আইনজীবী। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক ধৃতদের সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। আগামী ১২ মার্চ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে থাকতে হবে প্রদীপ এবং নীলিমাকে।
মঙ্গলবার সকালে কসবার হালতুতে সোমনাথ, সুমিত্রা এবং তাঁদের আড়াই বছরের পুত্রসন্তানের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। পুত্রের মৃতদেহ কাপড় দিয়ে নিজের দেহের সঙ্গে বেঁধেছিলেন সোমনাথ। তার পর নিজে গলায় দড়ি দেন। হালতুতে দাদুর বাড়িতে থাকতেন সোমনাথেরা। তিনি পেশায় অটোচালক ছিলেন। মামা এবং মামির সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের কথা তাঁরা ঘরের দেওয়ালে লিখে গিয়েছেন। এই ঘটনার পর সুমিত্রার বাবা এবং বোন থানায় পৃথক অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতেই মামা-মামিকে গ্রেফতার করা হয়।