Advertisement
০৪ মে ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

শিল্পী শুভাপ্রসন্নের শৈল্পিক ‘ভোলবদল’! বললেন, রুদালি নই, কুণালের মতে, ‘শুভাদার সুমতি’ হয়েছে!

শুভাপ্রসন্নের আগের বক্তব্য শুনে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল বলেছিলেন, ‘‘মাঝে মাঝে ওঁর চুলকোয়।’’ শনিবার বললেন, ‘‘শুভাদা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রামের সুমতি পড়েছেন। তাই শুভাদারও সুমতি হয়েছে।’’

Artist Subhaprasanna Bhattacharjee said, the time has not yet come to take to the streets for change.

(বাঁ দিকে) শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য। কুণাল ঘোষ (ডান দিকে)। ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৩ ১৯:০৭
Share: Save:

পাঁচ দিনের মধ্যেই রাজ্যের ‘ভোট হিংসা’ নিয়ে নিজের অভিমত বদলে ফেললেন ‘তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ’ আঁকিয়ে শুভাপ্রসন্ন। গত ১০ জুলাই প্রবীণ শিল্পী বলেছিলেন, বাংলায় যে হিংসা হচ্ছে তা আর দেশের কোথাও হয় না! এমনকি, নতুন করে আরও একবার ‘পরিবর্তন’-এরও ডাক দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আবার মিছিল করবেন।

কিন্তু শনিবার সুর ‘পরিবর্তন’ করেছেন শুভাপ্রসন্ন। তাঁর কথায়, ‘‘এখনও সেই সময় আসেনি। আমরা রুদালি নই যে, কাঁদতে কাঁদতে রাস্তায় নামব।’’ একইসঙ্গে শিল্পী এ-ও বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা পরিস্থিতিকে কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করেছেন।’’ সময়ক্রম বলছে, শুভাপ্রসন্ন যে দিন আবার ‘পরিবর্তন’ আনার কথা বলেছিলেন, তার পরদিনই পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল বেরোতে শুরু করে। পর পর দু’দিনে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, শাসক তৃণমূল গোটা রাজ্যেই বিপুল ভাবে জিতছে। পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই তারা কার্যত নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়েছে। ২০টি জেলা পরিষদের মধ্যে ৯টি জেলা পরিষদ বিরোধীশূন্য হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল দেখেই শুভার ‘ভোলবদল’। শনিবার শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘বাঙালি এমনিতেই রক্ত ভালবাসে। বিধান রায়ের সময়েও জ্যোতি বসুর মতো কাঁকড়া ছিল। খাদ্য আন্দোলন হয়েছিল। জুতো ছোড়াছুড়ি হয়েছিল। হঠাৎ করে সব বদলে যাবে কী করে?’’ তাঁর গলায় কেন আবার উল্টো সুর? শুনে স্পষ্টতই বিরক্ত শিল্পী বলেন, ‘‘কোনও উল্টো সুর নয়! আপনারা (সংবাদমাধ্যম) সব সুর বিশেষজ্ঞ হয়ে সোজা-উল্টো ধরতে নেমেছেন। একটু রসিয়ে, জমিয়ে টিআরপি বাড়াতে চাইছেন।’’

পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হওয়া থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসায় ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। যে শুভাপ্রসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল প্রকাশের আগের দিন বলেছিলেন, ‘‘দেশের কোথাও ভোটে এমন হিংসা হয় না। গণতন্ত্রের উৎসবে কেন এত মৃত্যু! আমাদের রাজ্যের এই সংস্কৃতির বদল দরকার। সময় এসে গিয়েছে মুক্তমনা ও বুদ্ধিজীবী মানুষদের একত্রিত হয়ে ফের পথে নামার। এই বাংলা মনীষীদের পীঠস্থান। সবার কাছে আমরা আহ্বান করতে পারি। আগে যেমন মিছিল করেছিলাম, তেমন ভাবেই আবার মিছিল করব।’’ তিনিই শনিবার বলেছেন, ‘‘মমতা কড়া হাতে সব দমন করেছেন। এত লোকের মৃত্যুই হয়নি। সমস্ত বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে।’’

শুভাপ্রসন্নের আগের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘ওঁর মাঝে মাঝে চুলকোয়। মলম লাগানো দরকার।’’ আর শনিবার শুভাপ্রসন্নের ‘পরিবর্তিত’ বক্তব্য প্রসঙ্গে কুণাল বলেন, ‘‘শুভাদা এই ক'দিন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রামের সুমতি’ পড়েছেন। তাই শুভাদারও সুমতি হয়েছে।’’

রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘এই স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবীরা আসলে পেন্ডুলামের মতো। দুলতে থাকেন। এঁদের কথার কোনও প্রভাব, কোনও গ্রহণযোগ্যতা জনমানসে নেই।’’ আবার সিপি‌এম নেতা শমীক লাহিড়ির কথায়, ‘‘ওঁর পাওনা হয়তো পেয়ে গিয়েছেন। তাই সুরও বদলে গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে শুভাপ্রসন্ন শব্দ সংক্রান্ত বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। কেন জলকে ‘পানি’ বলা হবে, কিংবা নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানোকে ‘দাওয়াত’ কেন বলা হবে, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন শুভাপ্রসন্ন। ওই মঞ্চেই শুভাপ্রসন্নের বিরোধিতা করেছিলেন মমতা। রাজ্য সরকার ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর তাতে তাঁর সমর্থন নেই জানিয়েও তৃণমূলকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন শুভাপ্রসন্ন।

সেই ধারাবাহিকতাতেই পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা নিয়ে শুভাপ্রসন্নের বক্তব্য শুনে অনেকেই মনে করছিলেন, কালীঘাটের সঙ্গে কি আর্ট একরের দূরত্ব বাড়ছে? এ দিন শিল্পী ফের একবার বোঝালেন, ‘‘এখনও তেমন ভয়ঙ্কর সময় আসেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE