রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতির অভিযোগ’ প্রকাশ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, মনোজের বিরুদ্ধে কী দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে প্রমাণ-সহ আগামী সোমবার বিকেল ৫টার মধ্যে জানাতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। সেই সঙ্গে শুক্রবার শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি— ‘‘প্রকাশ না করলে আমরা রাজ্যের দুর্নীতিগ্রস্ত আইপিএস, আইএএসদের নাম প্রকাশ করব। সিএমও (মুখ্যমন্ত্রীর দফতর)-তে কারা কী করেছে সব বলব।’’
রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি কেন্দ্রীয় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘আগুন নিয়ে খেলবেন না! অ্যাকশন হলে রিঅ্যাকশনও হবে!’’ এসআইআর-এ ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং এ রাজ্যে এই প্রক্রিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিইও মনোজকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মনোজের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘বড্ড বেশি আধিকারিকদের হুমকি দিচ্ছেন। আশা করি, তিনি বেড়ে খেলবেন না!’’ সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য— ‘‘সিইও-র বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ আছে। সময় হলে বলব।’’
আরও পড়ুন:
শুক্রবার সিইও-র দফতরে এসে মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যকে নিশানা করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘মনোজ আগরওয়াল কী করছেন, মুখ্যমন্ত্রী না বললে দীপাবলির পরে সিইও দফতরে ধর্না দেব। কেন কমিশনের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সব আধিকারিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়নি। দু’জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। কোনও এফআইআর দায়ের হয়নি কেন?’’ এ বিষয়ে তিনি সিইও দফতরে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে এসেছেন জানিয়ে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘অভিযোগ জানানো হয়েছে ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছেও। বিষয়টি খুবই গুরুতর। রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থের উপস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি সিইও-কে আক্রমণ করেছেন। উনি (মুখ্যমন্ত্রী) বলেছেন, সিইও বেড়ে খেলছে। এই ভাষা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। সরাসরি কমিশনকে হুমকি।’’
এর পরেই শুভেন্দু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে হবে সিইও কী করেছেন। সিইও নাকি ফোন করে আধিকারিকদের চমকাচ্ছেন। মনোজের বিরুদ্ধে কী তথ্য আছে জনগণ জানতে চায়। আমরা জানতে চাই, সিইও দুর্নীতির করে থাকলে, কী দুর্নীতি? তার প্রমাণ কী? এসআইআর নিয়ে ভয় পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষমতা হারানোর ভয় পেয়েছেন। এটা রাজনৈতিক ভাষা নয়। গুন্ডাদের ভাষা বলব।’’ মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করার পাশাপাশি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্ব নিয়েও কার্যত প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এর পরেও কোনও পদক্ষেপ না হলে ধরে নিতে হবে কমিশন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভয় পাচ্ছেন। সিইওর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী যে ধরনের মন্তব্য করেছেন সে জন্য কমিশন ও রাজ্যপালের উচিত সিইওকে নিরাপত্তা দেওয়া। তাঁর বাড়িতে, অফিসে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক।’’