খগেন মুর্মূর উপর হামলার ঘটনায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের উপর ‘চাপ’ তৈরির কৌশল নিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার ওই ঘটনার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে শুভেন্দু বলেন, ‘‘বেঙ্গল ওয়ান্ট অ্যাকশন!’’
প্রসঙ্গত, রাজ্যপাল বোসের সঙ্গে শুভেন্দুর সম্পর্ক বরাবরই ‘অম্লমধুর’। প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল থাকাকালীন রাজভবনের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল বিরোধী দলনেতার। কিন্তু ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে আনন্দ বোস রাজ্যপালের দায়িত্বে আসার পর থেকে শুরু হয় নতুন অধ্যায়। ২০২৩ সালের সরস্বতী পুজোর দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে রাজ্যপালের বাংলা শেখার হাতেখড়ি নেওয়া কিংবা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে চলচ্চিত্র উৎসবে অতিথি হিসাবে উপস্থিত হওয়াকেও ভাল চোখে দেখেননি শুভেন্দু। রাজভবনের সঙ্গে স্বেচ্ছায় ‘দূরত্ব’ তৈরি করে নিয়েছিলেন তিনি। বিজেপি পরিষদীয় দলের একটি সূত্রের দাবি, মমতার সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্কের কারণে একটা সময়ে রাজভবনের সঙ্গে নিজের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধই করে দিয়েছিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। কিন্তু মুর্শিদাবাদে গোষ্ঠীসংঘর্ষের ঘটনার পরে আবার শুভেন্দুই বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে বিধানসভা থেকে মিছিল করে রাজভবনে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন। এ বার মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদের রক্তাক্ত হওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে রাজ্যপালকে আবারও তাঁর ‘সাংবিধানিক শপথ’ স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
বৃহস্পতিবার বিধানসভা ভবনে এসেছিলেন শুভেন্দু। সেখানেই তাঁকে খগেনের উপর হামলার ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। সেই প্রসঙ্গেই এসেছিল বুধবার দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের সাক্ষাতের প্রসঙ্গ। এই ঘটনার ক্ষেত্রে রাজ্যপালের ‘ভূমিকা’ নিয়ে তাঁর মতামত জানতে চাওয়ায় শুভেন্দু বলেন, ‘‘বেঙ্গল ওয়ান্ট অ্যাকশন! এখন সাংবিধানিক ভাবে এই সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে।’’ শুভেন্দুর বক্তব্য, মুর্শিদাবাদে হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের মৃত্যুর ঘটনার পর রাজ্যপাল বলেছিলেন, এর পরে কোনও ‘অপ্রীতিকর’ ঘটনা ঘটলে তিনি সাংবিধানিক ভাবে কড়া ব্যবস্থা নেবেন। বিরোধী দলনেতার কথায়, ‘‘তাই আমরা তাঁর কাছে সদর্থক পদক্ষেপের আশা করছি।’’ বস্তুত, শুভেন্দু এমনও বলেছেন যে, আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। ফলে এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু করণীয় নেই।’’
আরও পড়ুন:
বিজেপি পরিষদীয় দলের একাংশের মতে, শুভেন্দুর রাজ্যপালের উপর ‘চাপ’ তৈরি করতে চাইছেন। এক বিজেপি বিধায়কের কথায়, ‘‘গত সাড়ে চার বছরে রাজ্যের যে প্রান্তে যে মানুষই অত্যাচারিত হয়েছেন, সেখানেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ছুটে গিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বীরভূমের বগটুইয়ে আমাদের সঙ্গে নিয়ে বিরোধী দলনেতা সেখানকার সংখ্যালঘু মানুষরা কেমন আছেন, তা জানতে গিয়েছিলেন। আবার মুর্শিদাবাদে সিপিএম সমর্থিত পরিবারের সদস্যরা যখন গোষ্ঠীসংঘর্ষে খুন হয়েছেন, তখনও সেখানে পৌঁছেছিলেন তিনি।’’ ওই বিধায়কের আরও বক্তব্য, ‘‘বিরোধী দলনেতার যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনই রাজ্যের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য রাজ্যপালকেও সংবিধান দায়িত্ব দিয়েছে। কোচবিহারে যখন বিরোধী দলনেতা নিজে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তখন তিনি রাজ্যপালকে সাংবিধানিক অধিকার স্মরণ করাননি। কিন্তু একজন সাংসদ যে রাজ্যে সুরক্ষিত নন, সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই রাজ্যপালকে তাঁর সাংবিধানিক অধিকার ও দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন শুভেন্দুবাবু।’’
রাজ্যপাল প্রসঙ্গে ‘বেঙ্গল ওয়ান্ট অ্যাকশন’ মন্তব্য কি তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকেও বলছেন? শুভেন্দুর জবাব, ‘‘আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু করার নেই। আক্রান্ত হয়েছেন রাজ্যের সাংসদ এবং বিধায়ক। তাই রাজ্যের মধ্যেই আমাদের ন্যায় আদায় করতে হবে। সেই কারণেই আমরা দাবি করছি, রাজ্যপাল তাঁর দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করুন।’’
রাজভবন সূত্রের খবর, বুধবার রাজ্যপাল বোস রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পশ্চিমবঙ্গ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট দিয়েছেন। সেই খবর পৌঁছেছে বিজেপি পরিষদীয় দলের কাছেও। আপাতত পরিস্থিতির উপর নজর রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করতে চায় তারা।