Advertisement
E-Paper

মমতা-সফরের আগে মঙ্গলবার সকালেই খগেনের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ফোন, সুরাহা এবং সাহায্যের আশ্বাস

সোমবার রাতেই মোদী তাঁর দলের সাংসদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নিজের এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেন। তারপরেই তৎপতরতা শুরু হয় প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে।

অমিত রায়

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৫ ২১:৩১
PM Narendra Modi\\\\\\\'s office calls to inquire about BJP MP Khagen Murmu\\\\\\\'s health

(বাঁ দিকে) মালদহ উত্তরের সাংসদ খগেন মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর শারীরিক পরিস্থিতির কথা জানতে চেয়ে তাঁর পরিবারের কাছে ফোন এসেছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সচিবালয় (পিএমও) থেকে। বিজেপি সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকালেই খগেনের স্ত্রী মঞ্জু মর্মু এবং তাঁর সন্তানের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথা হয় পিএমওর আধিকারিকদের। ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবার দুপুরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আহত সাংসদকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। বিজেপির ওই সূত্রটির মতে, মুখ্যমন্ত্রীর দেখতে যাওয়ার পরে রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী খগেনকে দেখতে যান হাসপাতালে। কিন্তু দলীয় নেতার আগে তৃণমূলনেত্রী খগেনকে দেখতে যাওয়ায় কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হয় দলের অভ্যন্তরে। কিন্তু তার পরেই জানা যায়, মুখ্যমন্ত্রী দুপুরে যাওয়ার আগেই সকালে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে ফোনে খগেনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়। এতে দলের সেই অস্বস্তি কেটে যায়। তবে গুরুতর আহত খগেনের সঙ্গে পিএমওর আধিকারিকেরা কথা বলতে পারেননি। তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

সোমবার রাতেই মোদী তাঁর দলের সাংসদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নিজের এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেন। তার পরেই তৎপতরতা শুরু হয় প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের তরফে। তাদের তরফে রাজ্য বিজেপির এক সাংগঠনিক নেতার কাছে চাওয়া হয় খগেনের পরিবারের সদস্যদের নম্বর। তিনিই যোগাযোগ করিয়ে দেন খগেনের পরিবারের সঙ্গে। বিজেপি সূত্রে খবর, সচিবালয়ের তরফে খগেনের পরিবারকে জানানো হয়, সতীর্থের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার সবটাই দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। এমন সময়ে যে কোনও সাহায্যের জন্য সচিবালয় প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী যে খগেনের রক্তাক্ত হওয়ার ভিডিয়ো দেখেছেন, তা-ও পিএমওর তরফে জানানো হয়েছে তাঁর পরিবারকে। আশ্বাস দিয়ে বলা হয়েছে, যথা সময়ে এই বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে। আপাতত দ্রুত যাতে সাংসদকে সুস্থ করা যায়, ধৈর্য সহকারে সে কাজ করা হোক।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ২৪০ জন বিজেপি সাংসদ-সহ এনডিএ শরিকদের নিয়ে তৃতীয় বারের জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মোদী। দলের প্রত্যেক সাংসদদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর দফতরের যে বিশেষ নজর রয়েছে তা বারে বারেই দেখা গিয়েছে। ঠিক যেমন চলতি বছর তমলুকের সাংসদ তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে দ্রুত তাঁকে কলকাতা থেকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে এমসে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের উদ্যোগেই। তবে খগেনের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন বলেই মনে করছেন রাজ্য বিজেপির একাংশ। উত্তরবঙ্গে দুর্যোগ পরিস্থিতিতে ত্রাণ দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন মালদহ উত্তররের সাংসদ খগেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলের আদিবাসী সাংসদের রক্তাক্ত হওয়ার ঘটনায় দায়ী করেছেন রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে। রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিচুতলার কর্মীদের মধ্যেও জোরালো আওয়াজ উঠেছে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিন প্রধানমন্ত্রী-সহ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপি নেতৃত্ব। সে ক্ষেত্রে মোদীর তরফে সাংসদদের পরিবারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেওয়ার দাবি ওঠে বঙ্গ বিজেপির সর্ব স্তর থেকেই। রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘আমাদের মনে হয়, খগেন মুর্মুর আহত হওয়ার ঘটনা যে প্রধানমন্ত্রীকে চিন্তিত করেছে, তা তাঁর পরিবারকে জানানো দরকার ছিল। তবে এর পর আমাদের আশা বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব বাংলার বিজেপি কর্মীদের দাবির বিষয়টিও মাথায় রাখবে।’’

উল্লেখ্য, সোমবার দুর্যোগ-বিপর্যস্ত জলপাইগুড়ির নাগরাকাটার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন খগেন এবং শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। ক্ষোভের মুখে ইটের ঘায়ে রক্তাক্ত হন খগেন। শঙ্করকেও ধাক্কা দিয়ে চড়-ঘুষি মারার চেষ্টা হয়। সেই ঘটনায় রক্তস্নাত পদ্ম সাংসদের ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার রাতেই উদ্বেগ প্রকাশ করে টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। নিজের সমাজমাধ্যমের অ্যাকাউন্টে মোদী লেখেন, ‘যে ভাবে আমাদের দলের সহকর্মীরা— যাঁদের মধ্যে একজন বর্তমান সাংসদ ও বিধায়কও রয়েছেন— পশ্চিমবঙ্গে বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটি তৃণমূল কংগ্রেসের অসংবেদনশীলতা এবং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার করুণ রূপের স্পষ্ট প্রতিফলন।’ তিনি আরও লেখেন, ‘আমার একান্ত কামনা, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেস এই কঠিন পরিস্থিতিতে হিংসায় লিপ্ত না হয়ে মানুষের সাহায্যে আরও মনোযোগী হোক। আমি বিজেপি কার্যকর্তাদের আহ্বান জানাই, তাঁরা যেন জনগণের পাশে থেকে চলতি উদ্ধার কাজে সহায়তা করে যান।’

রক্তাক্ত খগেনের ছবি প্রকাশ্যে আসতেই তৃণমূলের একটি অংশ ওই ঘটনাকে ‘জনরোষ’ বলে অভিহিত করতে শুরু করেন। কিন্তু মমতা উত্তরবঙ্গে পৌঁছেই বলে দেন, এই ঘটনা ‘কাম্য’ নয়। পরে ক্যামাক স্ট্রিট থেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতর ওই হামলা প্রসঙ্গে দলের ‘লাইন’ নির্ধারিত করে দেয়। তার পরে থেকে গোটা তৃণমূলই বলতে শুরু করে, ‘হামলা কাম্য নয়’।

Khagen Murmu PM Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy