Advertisement
E-Paper

উপযুক্ত শাস্তি চায় নিহতদের পরিবার

ছুটির দিনই কাল হল অসীমের। কাজে গেলে এই ভাবে গুলি খেয়ে মরতে হত না তাঁকে। রবিবার বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ ইংরেজবাজারের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের অরবিন্দ পার্ক এলাকায় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির গাড়ি থেকে ছোড়া গুলিতে মৃত কিশোর অসীম মণ্ডলের পরিবারের এখন এমনই আক্ষেপ। রাহুল পাসোয়ান নামে আর এক কিশোরও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৩৬
নিহত অসীমের দুই ভাই ও মা। (ইনসেটে) অসীম। —নিজস্ব চিত্র।

নিহত অসীমের দুই ভাই ও মা। (ইনসেটে) অসীম। —নিজস্ব চিত্র।

ছুটির দিনই কাল হল অসীমের। কাজে গেলে এই ভাবে গুলি খেয়ে মরতে হত না তাঁকে।

রবিবার বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ ইংরেজবাজারের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের অরবিন্দ পার্ক এলাকায় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির গাড়ি থেকে ছোড়া গুলিতে মৃত কিশোর অসীম মণ্ডলের পরিবারের এখন এমনই আক্ষেপ। রাহুল পাসোয়ান নামে আর এক কিশোরও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছে।

এলাকাবাসীর বক্তব্য, সরকারি বোর্ড লাগানো থাকলেই কোনও গাড়ির যেমন খুশি নিয়ম ভেঙে চালানোর অধিকার থাকে না। ইংরেজবাজারের কুলিপাড়া এলাকার মানুষের দাবি, গাড়িটি যিনিই চালান, তিনি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। স্থানীয় কাউন্সিলর সিপিএমের দুলাল চাকি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির চালক কী করে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে পরপর দুর্ঘটনা ঘটাতে পারেন, তা বোঝা শক্ত। তারপরেও সভাপতি নিজেও গুলিও ছুড়লেন। শাসক দল যে কীরকম বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, এটা তারই প্রমাণ।’’ কুলিপাড়ার বাসিন্দাদেরও দাবি, সাধারণ মানুষের প্রাণের কোনও দামই নেই শাসক দলের নেতাদের কাছে। তাই তাঁরা এমন বেপরোয়া মনোভাব দেখাতে পারেন।

ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পবিত্র রায়ের গুলিতেই অসীম মারা গিয়েছে বলে অভিযোগ। পবিত্রবাবুর ছোড়া গুলিতেই আহত হয়েছে রাহুল পাসোয়ান নামে এক কিশোর। পবিত্রবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

অসীম ও রাহুলের পরিবার পবিত্রবাবুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা মৃতের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তুলেছেন। মৃত কিশোরের মা রুবি মণ্ডল জানান, তাঁর ছেলের বিদ্যুতের মিস্ত্রির কাজ করেন। রোজ সকাল বিকেল শহরের কাজ করতে যেত তাঁর ছেলে। এ দিন ছুটির দিন থাকায় বাড়িতে ছিল। বেলা দু’টো নাগাদ খাওয়া দাওয়া করে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘পরে জানতে পারি গুলি করে খুন করা হয়েছে তাকে। ওখানে ছুটে যাই। কিন্তু কথা বলতে পারিনি। কাজে চলে গেলে এ দিন এই ভাবে মরতে হত না আমার ছেলেকে। আমার সব শেষ হয়ে গেল।’’

অসীমের বাবা ইংরেজবাজার পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কুলিপাড়ার বাসিন্দা রতন মণ্ডল পেশায় শ্রমিক। মাস ছ’য়েক আগে পথ দুর্ঘটনায় হাত ভেঙে যায় রতনবাবুর। রতনবাবুর স্ত্রী রুবিদেবী একাধিক বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁদের চার ছেলে। বড়ো ছেলে অসীমই। সে স্থানীয় একটি হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে। আর্থিক কারণে আর পড়তে পারেনি। অসীমের ভাই বিকাশ চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। আর এক ভাই তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সব থেকে ছোট ভাইয়ের বয়স তিন বছর। একটি ঝুপড়ি বাড়িতে বসবাস করেন তাঁরা। সরকারি সাহায্যে একটি ঘর পেয়েছে। এই পর্যন্তই।

এদিন সন্ধ্যেবেলা তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল সকলেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তাঁদের কাছ থেকেই জানা গেল, বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ অসীম বন্ধুদের সঙ্গে পাড়ায় দাঁড়িয়েই গল্প করছিল। সেই সময় ইংরেজবাজারের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গাড়ি একটি মোটর বাইককে ধাক্কা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিল। ওই গাড়িটিকে এলাকাবাসীরা আটক করে ঘিরে ধরে। একাংশ এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে গাড়ির উপরে ভাঙচুর চালানোর চেষ্টা করে। সেই সময় গাড়ির ভিতর থেকে ছুটে আসে চারটি গুলি। সেই গুলিটি মাথায় লাগে অসীমের। তাঁর সঙ্গে থাকা রাহুল পাসোয়ানও গুলিবিদ্ধ হন। দু’জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা অসীমকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আর রাহুলকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়।

এলাকায় এমন ঘটনায় সকলেই আতঙ্কিত এবং শোকস্তব্ধ। এদিনই সন্ধে বেলা এলাকায় যান মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। সেই সময় তাঁকে ঘিরে ধরেন পরিবারের লোকজন। মন্ত্রীর কাছে ক্ষতিপূরণ সহ অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান। কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘পরিবারের লোকেদের আমি পাশে রয়েছি। আমার তরফ থেকে তাঁদের সবরকম সাহায্য করা হবে।’’

রতনবাবু বলেন, ‘‘এখন আমরা অভিযুক্তদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।’’

state news asim mandal asim murder case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy