প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে এক শ্রেণির বেসরকারি চোখের হাসপাতাল ছানির অস্ত্রোপচার নিয়ে অনৈতিক ব্যবসা চালাচ্ছে বলে বছরখানেক ধরেই অভিযোগ আসছিল স্বাস্থ্য দফতরের কাছে। শেষ পর্যন্ত আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য প্রকল্পে (যা পশ্চিমবঙ্গে ‘আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্যসাথী’ নামে চলছে) নতুন নিয়মের সূত্রে এই অসাধু কারবারে কিছুটা রাশ টানা গিয়েছে বলে দাবি করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। যদিও ‘অসাধু ব্যবসা’র অভিযোগ মানতে নারাজ রাজ্যের প্রায় সতেরোশো বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ নার্সিংহোম অ্যান্ড হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশন।’
নিয়ম অনুযায়ী, আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমে ছানির অস্ত্রোপচার করাতে ছাড়পত্র লাগে সরকারি হাসপাতালের। সরকারি হাসপাতাল যদি জানায়, তারা ওই অস্ত্রোপচার করতে পারবে না এবং রোগীকে ‘রেফার’ করে, একমাত্র তখনই বেসরকারি হাসপাতাল তা করা যায়। তা ছাড়া, বেসরকারি হাসপাতাল দিনের দিন ডে-কেয়ারে গণহারে ছানির অস্ত্রোপচার করতে পারবে না। আগে রোগীর সব শারীরিক পরীক্ষা করতে হবে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এতদিন ছানির অস্ত্রোপচার হত মূলত ‘রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিমা যোজনা’ বা আরএসবিওয়াই প্রকল্পে। যেখানে এধরনের অনুমতি লাগত না। ফলে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বহু বেসরকারি চোখের হাসপাতাল বা নার্সিংহোম গজিয়ে উঠেছিল শুধু এই ছানি অপারেশনের উপর নির্ভর করে। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ছানির অস্ত্রোপচারের দরকার নেই এমন মানুষকেও দালালেরা বেসরকারি হাসপাতালে এনে কমিশন পেয়েছে। গণহারে ডে কেয়ার-এ এই অস্ত্রোপচার হয়েছে। আরএসবিওয়াইয়ের টাকা পকেটে পুরেছে ওই হাসপাতাল।’’ তাঁর বক্তব্য, সরকারি হাসপাতালে ওই একই অস্ত্রোপচার রোগীরা নিখরচায় করাতে পারতেন। তাঁদের আরএসবিওয়াই কার্ডে টাকা বেঁচে যেত।
অধিকর্তার কথায়, ‘‘এ-ও জানতে পেরেছি, সরকারি হাসপাতালে প্র্যাকটিসিং ডাক্তারদের কেউ কেউ কমিশনের লোভে সরকারি হাসপাতালের রোগীদের ভাঙিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে ছানির অস্ত্রোপচার করেছেন। একাধিক সরকারি চিকিৎসক বছরে এক কোটি বা দেড় কোটি টাকার ছানির অস্ত্রোপচার করেছেন বেসরকারি হাসপাতালে। আয়ুষ্মান ভারতে এ সব করা যাবে না বলে অনেক হাসপাতালের ঘুম উড়ে গিয়েছে।’’ স্বাস্থ্য দফতরের আর এক কর্তার কথায়, ‘‘২০১৭-১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু বর্ধমান জেলাতেই নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে প্রায় ১৩ হাজার ছানি অপারেশন হয়েছে। নদিয়ায় সংখ্যাটা প্রায় ৭ হাজার, মুর্শিদাবাদে ১০ হাজারের বেশি।’’ আরএসবিওয়াই প্রকল্প এখন বন্ধ।
‘প্রোগ্রেসিভ নার্সিংহোম অ্যান্ড হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রধান শেখ আলহাজউদ্দিন অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘ছানি অস্ত্রোপচার নিয়ে কেউ অনৈতিক ব্যবসা চালায়নি। যদি তা হত, সরকার এত দিন কী করছিল?’’ সম্প্রতি তাঁরা স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে দাবি করেন, নতুন নিয়মের পর রাজ্যের অন্তত ৪৮টি ছোট ও মাঝারি চোখের হাসপাতাল ও নার্সিংহোম বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আরও অন্তত ৩৭টি হাসপাতালে চোখের ইউনিট বন্ধ হয়েছে। সংগঠনের তরফে চিঠিও পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy