Advertisement
E-Paper

চার জনকে পিটিয়ে খুনের নালিশ, ধৃত

পুলিশ জানায়, প্রত্যেকেরই ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে। চার জনের মাথাতেই আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২০ ০২:১৭
ঘটনাস্থল: এখানেই কাঠ হাতে খুনে অভিযুক্ত সাধু হেমব্রম চড়াও হন বলে অভিযোগ। শিবপুরে। নিজস্ব চিত্র।

ঘটনাস্থল: এখানেই কাঠ হাতে খুনে অভিযুক্ত সাধু হেমব্রম চড়াও হন বলে অভিযোগ। শিবপুরে। নিজস্ব চিত্র।

ভরা জনবসতির মাঝেই দেশি মদের বৈধ দোকান। সে দোকানের এক কর্মীর সঙ্গে সাধু হেমব্রমের গোলমাল সম্প্রতি গড়িয়েছিল পুলিশ পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার রাতে ওই দোকানেরই তিন ঘুমন্ত কর্মী-সহ চার জনকে চেলা কাঠ দিয়ে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগে সাধুকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ার শিবপুর গ্রামের মাঝিপাড়ায় বৃহস্পতিবার মাঝরাতের ঘটনা।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহতেরা হলেন অম্বুজ মণ্ডল (৪২), প্রশান্ত সাহা (৫৮), সুবোধ বাউড়ি (৬০) এবং কালী ভুঁইয়া (৬২)। প্রথম তিন জন দোকানের দীর্ঘদিনের কর্মী। তাঁরা যথাক্রমে বাঁকুড়ার ছাতনার ধবন, সোনামুখীর পাথরহাটি ও গঙ্গাজলঘাটির কাপিষ্টা গ্রাম এবং শেষ জন পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির চলবলপুরের বাসিন্দা। প্রথম তিন জন ওই দোকানেই দশ-বারো বছর বা তারও বেশি সময় ধরে কাজ করতেন। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (‌‌সেন্ট্রাল) তথাগত পাণ্ডে বলেন, ‘‘শুক্রবার আসানসোল আদালতে ধৃতকে হাজির করানো হলে ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়।’’ প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, ওই দোকানেরই কর্মী কার্তিক মণ্ডল মঙ্গলবার দুপুরে সাধু তাঁকে মারধর করেছেন বলে পুলিশকে মৌখিক ভাবে জানান। সে রোষ থেকেই দোকানের কর্মীদের উপরে এই হামলা হয়ে থাকতে পারে।

দোকানটিতে ছ’জন কর্মী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কার্তিকবাবু-সহ স্থানীয় দু’জন প্রতিদিন বাড়ি চলে যান। বাকিরা দোকানেই থাকতেন। দোকানের পাশেই একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে থাকেন বছর ত্রিশের সাধু। নানা জনের ফাইমরমাশ খেটে, দিনমজুরি করে তাঁর দিন চলে। দোকান চত্বরের চারপাশ ঘেরা থাকলেও দরজা নেই। সেখানেই কিছুটা দূরত্বে খাটিয়ায় ঘুমোতেন বাঁকুড়ার তিন জন। ম্যানেজার ধীমান মণ্ডল দোকানের ভিতরে, দরজা-জানলা দেওয়াঘরে ঘুমোতেন।

ধীমানবাবু পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে দাবি করেছেন, রাত ১২টা নাগাদ আচমকা অম্বুজবাবুর আর্ত চিৎকারে ঘুম ভাঙে তাঁর। জানলার গ্রিল দিয়ে দেখেন, অম্বুজবাবুর মাথায় চেলা কাঠের বাড়ি মারছেন সাধু। ধীমানবাবুর কথায়, ‘‘আমি চিৎকার করে নিষেধ করলেও সাধু শোনেনি। ভয়ে, ঘরের বাইরে বেরোতে পারিনি। পুলিশকে ফোন করি। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাড়ার লোকও চিৎকার শুনে জড়ো হয়ে যান।’’ তিনি বাইরে বেরিয়ে দেখেন, অম্বুজবাবুর পাশাপাশি, প্রশান্তবাবু ও সুবোধবাবুও রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানায় পড়ে রয়েছেন। স্থানীয় সূত্রের দাবি, লোকজন জড়ো হতেই চম্পট দেন সাধু। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই রাস্তায় কালীবাবুকে সামনে পেয়ে হাতের কাঠ দিয়ে তাঁর মাথাতেও তিনি আঘাত করেন বলে অভিযোগ।

পুলিশ জানায়, প্রত্যেকেরই ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে। চার জনের মাথাতেই আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ দিকে, ‘খুনে’রঅভিযোগে সাধুকে পাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা পাকড়াও করে মারধর করেন বলে অভিযোগ।

কিন্তু কেন এই ঘটনা? কার্তিকবাবু বলেন, ‘‘কোনও কারণ ছাড়াই মঙ্গলবার আমাকে মারধর করে সাধু। পুলিশকে জানিয়েছিলাম। এমন ঘটনা ভাবতেও পারছি না!’’ দোকানের অন্যতম মালিক পরেশ মণ্ডল এই ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বৃহস্পতিবার সকালে কালীবাবু শিবপুরে মেয়ের বাড়িতে এসেছিলেন। তাঁর জামাই গোবিন্দ ভুঁইয়া বলেন, ‘‘শ্বশুরমশাই রাতে বাড়ির কাছেই শৌচকর্ম সারতে যাচ্ছিলেন। তখন এমন ঘটনা ঘটবে, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি!’’

Arrest Jamuria Murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy