E-Paper

‘একসঙ্গে থাকো’, বাবা-মাকে আর্তি বালকের

পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া আদালতে শুক্রবার দুপুরে অবশ্য মধুরেণ সমাপয়েৎ হয়নি। মহিলা ছেলেকে নিয়ে চলে যান। ছেলেকে না পাওয়ার ক্ষোভে ফের আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়ে দেন বাবা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:৫০

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আদালত চত্বরে দৌড়চ্ছেন আকাশি শার্ট। নীল সালোয়ার-কামিজ পরা মহিলার সঙ্গে থাকা বালকের হাত ধরতে। বাচ্চার হাত ধরতেই শুরু হল কথা কাটাকাটি। বাচ্চাটাকে দু’জনেই সমানে কাছে টানার চেষ্টা করছেন। বচসা থেকে কার্যত হাতাহাতিতে জড়ান তাঁরা। চিৎকার শুনে আদালতের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশকর্মীরা এসে দু’জনকে থামান। তখনই চেঁচিয়ে ওঠে সাত বছরের বালক, ‘‘বাবা-মা, তোমরা একসঙ্গে থাকো। দু’জনের কাছেই থাকতে চাই আমি।’’

পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া আদালতে শুক্রবার দুপুরে অবশ্য মধুরেণ সমাপয়েৎ হয়নি। মহিলা ছেলেকে নিয়ে চলে যান। ছেলেকে না পাওয়ার ক্ষোভে ফের আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়ে দেন বাবা।

দম্পতির বিয়ে হয়েছিল ন’বছর আগে। তিন বছর ধরে মহিলা বাপের বাড়ি কেতুগ্রামে রয়েছেন। শ্বশুরবাড়ি মুর্শিদাবাদের বড়ঞায়। ছেলেটি এত দিন বাবার কাছেই বেশি থাকত। তার মায়ের দাবি, “স্বামী অকারণে সন্দেহ করত। প্রায় অশান্তি হত। এক দিন খুন করতে উদ্যত হয়। প্রাণ বাঁচাতে বাধ্য হয়ে মায়ের বাড়িতে চলে আসি। এখন ছেলেকে কেড়ে নিতে চাইছে। কিছুতেই তা হতে দেব না।’’স্বামীর পাল্টা দাবি, “স্ত্রীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। তার পরেও সে ভুল বুঝতে পেরে ফিরে এলে আমি সংসার করতে রাজি। ছেলে আমার কাছেই থাকত। এখন ছেলেকে ছিনিয়ে নিতে চাইছে।’’

ওই দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদের মামলা বিচারাধীন। সাত বছরের ছেলে কার কাছে থাকবে, মামলা ছিল তা নিয়েও। এ দিন কাটোয়া এসডিও কোর্টের বিচারক নাবালকের সঙ্গে কথা বলে আপাতত তাকে বাবার কাছে রাখার নির্দেশ দেন। তার পরেই বাধে ওই তুলকালাম।

স্বামীর পক্ষের আইনজীবী সাদ্দিক হোসেন বলেন, “ওই নাবালকের ইচ্ছা অনুসারে বিচারক তাকে বাবার কাছেই থাকার নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই মহিলা গায়ের জোরে আদালত চত্বর থেকে ছেলেকে নিয়ে গিয়েছেন। ফের আদালতের দ্বারস্থ হব।’’ স্ত্রীর পক্ষের আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বাচ্চার বাবা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। সন্তানের মায়ের কাছে থাকাটাই বাঞ্চনীয়। সব দিক ভেবে বিচার করা উচিত।’’

বর্ধমান পূর্বের সাংসদ তথা মনোবিদ শর্মিলা সরকার বলেন, ‘‘দাম্পত্য কলহ অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তার প্রকাশ ছেলেমেয়ের, বিশেষত, নাবালক সন্তানের সামনে না হওয়াই কাম্য। না হলে সন্তানের উপরে প্রভাব পড়ে। বড় হয়েও অনেক সময়ে তা কাটে না।’’

কাটোয়া আদালতে দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য অশান্তির মামলা লড়েছেন প্রবীণ আইনজীবী মণ্ডল আজিজুল। তিনি বলেন, ‘‘অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বিবাহবিচ্ছিন্ন বহু দম্পতি পরে সন্তানের দিকে চেয়ে আফসোস করেছেন। কিন্তু তত দিনে সন্তানের যা ক্ষতি হওয়ার, হয়ে যায়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Divorce Case Family Dispute Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy