Advertisement
১০ অক্টোবর ২০২৪
JMB Militants

সেই বাড়িতে রং, প্রলেপ স্মৃতিতেও

বাড়ি থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে বাবুরবাগের গলিতে একটি বাড়ির দোতলায় ভাড়া নেন খাগড়াগড় কাণ্ডে মূল চক্রী বলে চিহ্নিত কওসর ওরফে বোমারু মিজান।

খাগড়াগড়ে এই বাড়িতেই বিস্ফোরণ হয়েছিল। ফাইল চিত্র।

খাগড়াগড়ে এই বাড়িতেই বিস্ফোরণ হয়েছিল। ফাইল চিত্র।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:১৮
Share: Save:

ছিল দোতলা। হয়েছে তিনতলা। সেই তিনতলায় লেখা ‘চৌধুরী ভবন’। নকশায় বদল এসে বাড়ির সামনের দিকে তৈরি হয়েছে বারান্দা।

খাগড়াগড়ে এই বাড়ির দোতলায় বিস্ফোরণে জেএমবি-র দু’জন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছিল। সেই বাড়ি এখন ‘অচেনা’ ঠেকতে পারে। বাড়িটি গত বছর গোড়ায় তদন্তকারী সংস্থার হাত থেকে ফেরত পেয়েছেন মালিক নুরুল হাসান চৌধুরী। সেটির নীচের তলায় হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসা করেন তাঁর ছেলে আশরাফুল। বাড়ি আবার ভাড়া দেবেন? আশরাফুল বলেন, ‘‘কী যে বলেন! আবার ভাড়া!’’ পরে অবশ্য বলেন, ‘‘কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাইলে ভাড়া দিতে পারি, তবে সব কিছু খুঁটিয়ে দেখে।’’

এই বাড়ি থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে বাবুরবাগের গলিতে একটি বাড়ির দোতলায় ভাড়া নেন খাগড়াগড় কাণ্ডে মূল চক্রী বলে চিহ্নিত কওসর ওরফে বোমারু মিজান। সঙ্গে ছিল হাবিবুর রহমান। থাকত আরও দুই মহিলা। ওই বাড়ির বাসিন্দা সালমা বিবির কথায়, ‘‘লাল মোটরবাইকে মাথায় হেলমেট পরে ওরা যাতায়াত করত। পিঠে ব্যাগ থাকত। মহিলারা সব সময় বোরখা পরে থাকত। ওদের সাজা হওয়ার পরে এখন কিছুটা চিন্তামুক্ত।’’ এনআইএ জেনেছিল, ব্যাগেই আইইডি, লঞ্চার পাচার করত কওসর। হাবিবুরকে বেঙ্গালুরু থেকে ধরার সময়ে এনআইএ আইইডি, লঞ্চার পায়। বাবুরবাগের বাড়ি থেকে পালানোর সময়ে জঙ্গিরা কাগজপত্র পুড়িয়ে দেয়। তার পরেও নানা তথ্য এখান থেকে উদ্ধার করে এনআইএ। এখানে পড়ুয়াদের মেসও ছিল। এই বাড়িও আর ভাড়া দেননি মালিকেরা। রঙের প্রলেপও পড়েনি। শুধু দেওয়ালে জলের পাইপ বসেছে। বাড়ির কর্তা মুর্শিদ আলম বলেন, “যদি তদন্তকারী সংস্থার কাজে লাগে, তা ভেবে এত দিন বাড়ি রং করিনি। এ বার রং করার কথা ভাবছি।”

বর্ধমান থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দূরে মঙ্গলকোটের শিমুলিয়ায় বোরহান শেখের জমিতে গড়ে উঠেছিল জঙ্গি-প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রশিক্ষণ দিতে যেতেন পাশের কৃষ্ণবাটী গ্রামের মৌলানা ইউসুফ শেখ-সহ বেশ কয়েক জন মহিলা। এনআইএ এবং এনএসজি তল্লাশি চালিয়ে জেহাদের ডাক দেওয়া বেশ কিছু লিফলেট ও বই পেয়েছিল। এলাকাবাসীর দাবি, ঘটনার পরে মঙ্গলকোট থানার পুলিশ বাড়িটি পাহারা দিত। পরে ধীরে ধীরে বাড়িটি ভেঙে যায়। মামলার সাজা হয়ে যাওয়ার পরে পুলিশও আর প্রায় আসে না। এখন বাড়ির কার্যত কোনও চিহ্নই নেই সেখানে। উঁচু-নিচু হয়ে থাকা জমি সাফ করে স্থানীয় যুবকেরা মাঝেমধ্যে খেলাধুলো করেন। পাশে ফাঁকা জায়গায় নতুন বাড়ি তৈরি হয়েছে। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, সে সব দিন তাঁরা আর মনে করতে চান না।

মামলায় ৩০ জনের সাজা ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। বাড়ির ভোল পাল্টে হাসান চৌধুরীরাও সেই স্মৃতিতে প্রলেপ দিতে চাইছেন। (শেষ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE